চট্টগ্রাম-ইউরোপ সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে উত্তর ইউরোপে পণ্য পরিবহনে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু করেছে 'ডিকেটি অলসিস গ্লোবাল লজিস্টিকস'।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এ শিপিং এজেন্টের জাহাজ 'এমভি এএমও' শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের পণ্য নিয়ে লিভারপুল বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ডিকেটি অলসিস লাইনার এর মঙ্গোলীয় পতাকাবাহী জাহাজ 'এমভি এএমও' বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে অবস্থান করছে। জাহাজটি বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের ৩০০ টিইইউএস গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে প্রথমবারের মত সরাসরি উত্তর ইউরোপে যাত্রা করবে শুক্রবার।"
২২-২৩ দিনের মধ্যে জাহাজটি পণ্য নিয়ে লিভারপুল বন্দরে পৌঁছাবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার (প্রশাসন) হাসিনা আরজু বলেন, "জাহাজটি সুয়েজ খাল হয়ে প্রথমে নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম বন্দরে যাবে। সেখান থেকে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বন্দরে পৌঁছাবে জাহাজটি। একইভাবে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রামে ফিরবে।"
অলসিস গ্লোবাল লজিস্টিকস কোম্পানির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ফনিক্স শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাত বলেন, "বর্তমানে কলম্বো বন্দরের অবস্থা খারাপ। ঘুরপথে সিঙ্গাপুর বন্দর হয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে ৩৫-৪০ দিনের মতো সময় লাগছে। এ অবস্থায় ইউরোপের বায়াররা বাংলাদেশে থেকে সরাসরি পণ্য পেতে চাচ্ছেন। তাই আমাদের এই উদ্যোগ।"
"চীন থেকে ছেড়ে আসা 'এমভি এএমও' জাহাজটি বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিরেছে। প্রথম দফায় ৩০০ টিইইউএস গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জাহাজটি। আশা করছি পরের ট্রিপে পণ্যের পরিমাণ হাজার টিইইউএস ছাড়িয়ে যাবে," বলেন তিনি।
ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাত জানান, প্রাথমিকভাবে তিনটি জাহাজ দিয়ে পণ্য পরিবহন শুরু করা হচ্ছে। জাহাজ তিনটি হলো- এমভি এএমও, এমভি বিবিসি ফিনল্যান্ড, এমভি স্যান আলফনসো।
এর মধ্যে, ৮ দশমিক ৯ মিটার ড্রাফটের মঙ্গোলীয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি এএমও'র কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৭৩০ টিইউএস। লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি স্যান আলফনসো'র কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৮১৯ টিইউএস, জাহাজটি ৮ দশমিক ৯ মিটার ড্রাফটের। এছাড়া অ্যান্টিগা বারবুডার পতাকাবাহী এমভি বিবিসি ফিনল্যান্ড একটি সাধারণ কার্গো জাহাজ।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশেনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, "ইউরোপে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালু বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক সংবাদ। সরাসরি রুটে পণ্য পরিবহন বাড়লে শিপিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। ফ্রেইট চার্জ কমে আসবে। কমবে ব্যবসার খরচ।"
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে প্রথমবার ইতালিতে সরাসরি কনটেইনার জাহাজে পণ্য পরিবহনে সেবা চালু হয়। ইতালির ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান রিফ লাইন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন এই সেবা চালু করে।
প্রতিষ্ঠানটি দুটি জাহাজে এ পর্যন্ত পাঁচবার আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া করেছে, সময় লেগেছে ১৮ থেকে ২০ দিন। এছাড়া আগামী মাসে ইউরোপের আরও দুই গন্তব্যে সরাসরি জাহাজ সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কমোডিটি সাপ্লাইস এজি।
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপ-আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার প্রথমে ছোট আকারের কনটেইনার জাহাজে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও তানজুং পেলাপাস বন্দরে নেওয়া হয়। এই চারটি বন্দরে নামানোর পর বুকিং পেলে ইউরোপ-আমেরিকামুখী বড় জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।
এভাবে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কার বন্দর ঘুরে ইউরোপের দেশে কনটেইনার পণ্য পরিবহনে স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে ২৪-২৮ দিন। তবে করোনার পর থেকে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কায় বড় জাহাজে বুকিং পেতে দেরি হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সময় লাগছে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের বেশি।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরাসরি জাহাজ সেবা চালুর সব উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। নতুন রুটে জাহাজ চলাচলের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে আমরা তাৎক্ষনিক অনুমোদন দিচ্ছি।"
এতে যেমন পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, তেমনি সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের উপর নির্ভরশীলতা কমাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।