এলএনজি ট্যাংকারের জন্য হুড়োহুড়ি!
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে গ্যাস যোগানের বিকল্প খুঁজছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এরই অংশ হিসেবে সে অঞ্চলের গ্যাস ব্যবসায়ীরা পরের গ্রীষ্ম আসার আগেই পর্যাপ্ত এলএনজি বা তরল গ্যাসের সরবরাহ উৎস খুঁজে পেতে পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন ইতোমধ্যেই।
এলএনজি জাহাজের মালিক এবং মধ্যস্থতাকারীদের উদ্ধৃত করে দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানি তরল গ্যাসের সন্ধান করছে তাদের মধ্যে রয়েছে টোটালএনার্জিস, শেল এবং চীনের ইউনিপেক মতো কিছু প্রতিষ্ঠান।
তরল গ্যাসের চাহিদা আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এলএনজি ব্যবসায়ীদের চার্টার রেট বেড়ে বিগত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ক্লার্কসন্স প্লাটউ সিকিউরিটিজের তথ্য অনুসারে, এলএনজির ব্যবসা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন ১ লাখ ২০ হাজার ডলারে।
অনেকেই কিনছে এলএনজি ক্যারিয়ার। আবুধাবির অ্যাডনক সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী এলএনজি রপ্তানির লক্ষ্যে তিনটি নতুন এলএনজি ক্যারিয়ার কিনেছে। প্রতিটি জাহাজের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৭৫ হাজার ঘনমিটার। অ্যাডনকের বর্তমান জাহাজগুলোর গড় ক্ষমতা ১ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটারের তুলনায় নতুন এই জাহাজগুলোর ধারণক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
এদিকে, রুশ জ্বলানির ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে গ্যাস আমদানির বিকল্প খুঁজতে প্রায় দিশাহারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপের চাহিদার চাপ সামলে দিতে হিমশিম খাচ্ছে এলএনজির প্রধান উৎসগুলো। রিস্ট্যাড এনার্জির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যদি ইউরোপ সত্যিই চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে দুই-তৃতীয়াংশ গ্যাস আমদানি কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়, তাহলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অন্তত ২৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন কম হবে।
"রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বন্ধ করে ইউরোপ বৈশ্বিক এলএনজি বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। ২০২১ সালের অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও অনিশ্চিত ভারসাম্য নিয়ে আরেকটি বছর শুরু হয়েছে," বলছে রিস্ট্যাড এনার্জি।
বিশেষোজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপের রাশিয়ার বিকল্প খোঁজার উন্মাদনায় ইতোমধ্যে এলএনজি ক্যারিয়ারের যে সংকট দেখা দিয়েছে তা শীঘ্রই শেষ হবে বলে মনে হয় না। একটি নতুন এলএনজি ক্যারিয়ার তৈরি হতে সময় লাগে কয়েক বছর। সেইসঙ্গে, ইউরোপ যে হঠাৎ করেই কয়েক মাসের মধ্যে মার্কিন তরলীকৃত গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে উঠবে, তা কেউই বুঝতে পারেনি। তাই বৈশ্বিক জ্বলানির চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ইতোমধ্যে যে শূন্যতা দেখা দিয়েছে, তা নিকট ভবিষ্যতে আরও গভীর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
- সূত্র: অয়েল প্রাইস ডট কম