ডিপোতে রাসায়নিক দাহ্য’র কথা শুরুতে জানানো হয়নি ফায়ার সার্ভিসকে
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে 'হাইড্রোজেন পারক্সাইড' নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দাহ্য ছিলে। সেই রাসায়নিক থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে ডিপোতে। তবে দুর্ঘটনার শুরুতে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয় কাপড়ের গুদামে আগুন লেগেছে। এই ভুল তথ্যের বলি হতে হয়েছে ৫ ফায়ার ফাইটারকে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে এ অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, "কনটেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড নামে বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল রয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটল, তা এখনো জানা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরপর ভেতর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আসছে।"
চট্টগ্রাম নগরের নন্দকানন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, "আমাদের জানানো হয়েছিল গার্মেন্টস পোশাকের ডিপোতে আগুন লেগেছে। সেই হিসেবে আমরা অপ্রস্তুতভাবে আগুন নেভাতে গিয়েছিলাম। কেমিক্যাল থাকার কথা আমাদের জানানো হয়নি। ফলে আগুন নেভাতে যাওয়া প্রথম দলটি বিস্ফোরণের শিকার হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৫ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৪ জন।"
ডিপোর শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিপোর ভেতরে ৫০০ মিটারের একটি টিনের শেড রয়েছে। এই শেডের ভেতরে হাইড্রোজেন পারক্সাইড নামে একধরনের কেমিক্যাল রয়েছে। এগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হয়। রপ্তানির জন্য হাটহাজারীর ঠান্ডাছড়ির আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে উৎপাদিত হাইড্রোজেন পারক্সাইড কনটেইনারে করে এ ডিপোতে রাখা হয়।
হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। উত্তপ্ত করা হলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে।
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজন সদস্য।
এছাড়া, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬৮, বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতাল ১৫ ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরমধ্যে ৩০ জনের অবস্থা গুরুতর। পোড়া মানুষের বোবা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। স্বজনদের আহাজারিতে কাঁপছে চারপাশ।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যের পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া ৯ পুশিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৭ জন শিল্প পুলিশ এবং ২ জন সীতাকুণ্ড থানার। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা স্টেশনেরও ১৪ কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম রাশিদুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিস্ফোরণে সীতাকুণ্ড পুলিশের কনস্টেবল তুহিনের পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন হয়ে গেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আরও ৮ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।"
চমেক বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান রফিক উদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হওয়া ৫০ শতাংশ রোগীই আশঙ্কাজনক। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বেশ কয়েকজন রোগীকে অন্যান্য ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।"
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের রেজিস্টার ডা. লিটন পালিত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হওয়া রোগীদের ১৭ জনের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এসব রোগীর যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পরে।"
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় ৭০ কানি জায়গার ওপর কনটেইনার ডিপোটি অবস্থিত। সরেজমিন দেখা যায়, ডিপোর ভেতরের ৫০০ মিটারের শেডের টিনের পুরো অংশ উড়ে গেছে।