বিদেশের অপ্রদর্শিত সম্পদ ধরা পড়লে সমপরিমাণ জরিমানার কথা ভাবছে সরকার
বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত সম্পদের তথ্য গোপনকারীদের জন্য অর্থবিলে শাস্তির বিধান রেখে কিছু পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে সরকার।
প্রস্তাবিত অর্থবিলে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে অর্থ পাচারকারীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রস্তাব অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের সমালোচনার মুখে পড়ে, এরপর শাস্তির বিধান যোগ করার কথা ভাবছে সরকার।
প্রস্তাবিত পরিবর্তনের ফলে বিদেশে থাকা সম্পদ প্রদর্শন না করা হলে এবং পরবর্তীতে তা ধরা পড়লে ওই সম্পদের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হতে পারে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ট্যাক্সদাতার দেশে থাকা যে কোনো সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বিক্রির মাধ্যমে তা আদায় করতে পারবে সরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স অফিসিয়ালদের ক্ষমতাও দেওয়া হবে।
তবে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ বিদেশে থাকা সম্পদ না দেখালে তা খুঁজে বের করা কিংবা তার বিপরীতে জরিমানা আদায় করা বাস্তবে সম্ভব নয়। সমালোচনার মুখে এই সংশোধনের প্রস্তাবকে এক ধরনের 'আইওয়াশ' মনে করছেন তারা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাস্তবে ট্যাক্স কর্মকর্তাদের পক্ষে এই প্রক্রিয়ায় সম্পদ খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। কালো টাকা সাদা করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে সুবিধা দিয়েছে, তাও খুব একটা কার্যকর হবে না"।
"তবে যদি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় প্রাতিষ্ঠানিক ও সমন্বিতভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে হয়তো সম্ভব হতে পারে", যোগ করেন তিনি।
আগামী ২৯ জুন বুধবার সংসদে অর্থবিল পাশ হতে পারে, আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাশ হওয়ার কথা ৩০ জুন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ অর্থবিল পাশ করার সময় অপ্রদর্শিত সম্পদ না দেখালে ধরা পড়লে সম পরিমাণ জরিমানার এ বিধান সংযোজন করতে যাচ্ছে সরকার।
বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদেশে থাকা স্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করলে ১৫% ট্যাক্স, অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করলে ১০% ট্যাক্স এবং ওই সম্পদ অস্থাবর সম্পদ দেশে আনলে ৭% ট্যাক্স দিলেই চলবে। ওই সম্পদ কোথা থেকে এলো এ বিষয়ে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। আসছে জুলাই থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য এ সুবিধা পাওয়া যাবে।
বাজেটে ক্ষমা ঘোষণার প্রস্তাব আনার পর অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ প্রায় সব পক্ষ থেকেই ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
তারা বলছেন, এর বদলে বিদেশি সম্পদ দেশে আসার পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে আরো সম্পদ পাচার উৎসাহিত হবে। কেননা দেশে একজন ব্যক্তি করদাতার সর্বোচ্চ করহার ২৫%, আর তিনি যদি পাচার করে ওই সম্পদ দেশে আনেন, তাতে মাত্র ৭% ট্যাক্স দিতে হবে। আবার ওই সম্পদের উৎস কী, তাও জানা সম্ভব হবে না।
অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশে থাকা অপ্রদর্শিত সম্পদের জরিমানা আরোপের লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ (জি) নামে নতুন একটি সেকশন যুক্ত করার প্রস্তাব আসতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বর্তমান আইনেও একজনের বিদেশে থাকা সম্পদ দেখানোর কথা বলা রয়েছে। তবে না দেখালে এ শাস্তি কী তা উল্লেখ নেই"।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, "এর মাধ্যমে বিদেশে থাকা সম্পদ দেশে আনার সুযোগ খুব কম। অপ্রদর্শিত সম্পদকে সামান্য ট্যাক্স দিয়ে ক্ষমা ঘোষণার কারণে ব্যাপক সমালোচনার করণে মানুষকে হয়তো বুঝ দেওয়ার জন্য এই প্রস্তাব আনা হচ্ছে।"
বিশিষ্ট চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং স্নেহাশিষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা পার্টনার স্নেহাশিষ বড়ুয়া বলেন, "কেউ বিদেশে টাকা নিয়ে যাওয়ার পর তা আনার সুযোগ দেওয়ার পরও কেউ না আনলে জরিমানার বিধান অবশ্যই স্বাগত জানানোর মতো পদক্ষেপ।
গভমেন্ট টু গভমেন্ট চুক্তির মাধ্যমে কোন ব্যক্তির সম্পদের তথ্য পাওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি।