করোনা উদ্বেগে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশে নামিয়ে আনল এডিবি
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার পূর্বাভাসে সংশোধন এনেছে আঞ্চলিক উন্নয়ন সংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। চলতি বছরের এপ্রিলে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছিল, দেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.২ শতাংশ; তবে কোভিড -১৯ মহামারির চলমান উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবৃদ্ধির হার কমে ৬.৮ শতাংশে নামতে পারে বলে নতুন করে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
এডিবি চলতি বছরের জন্য ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, যদিও এর আগে এপ্রিলের প্রতিবেদনে ৬.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল সংস্থাটি।
এদিকে, বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭.২ শতাংশ।
করোনাভাইরাস মহামারির ক্রমাগত উদ্বেগের মাঝে এডিবি'র প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল এশিয়ার ২০২১ সালের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে দেখানো হয়েছে।
এডিবি'র প্রধান অর্থনৈতিক প্রকাশনা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) ২০২১-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর উন্নয়নশীল এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৭.১ শতাংশে।
২০২১ এবং ২০২২ সালে এশিয়ার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, অনেকাংশেই নির্ভর করছে মহামারি মোকাবেলা এবং টিকাদান কর্মসূচির উন্নয়নের ওপর। সংস্থাটি বলছে, রপ্তানি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ২০২২ সালে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি উন্নীত হতে পারে ৫.৪ শতাংশে। তবে এপ্রিলে ৭.৩ শতাংশের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, প্রতিবেদনে ২০২২ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫.৪ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া, মূল্যের চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
চলতি এপ্রিলে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৯.৫ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল এডিবি। তবে সংস্থাটির সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির সেই হারকে ৮.৮ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে।
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ভারতের চলতি বছরের প্রবৃদ্ধি ১১ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ৭ থেকে ৭.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
মালদ্বীপে আন্তর্জাতিক পর্যটনের সুযোগ আরও অনুকূলে আসায়, এডিবি দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ১৩.১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
গত বছর দক্ষতার সঙ্গে মহামারি মোকাবেলা করায় পাকিস্তানের এ বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪.১ শতাংশ থেকে কমে ৩.৪ শতাংশে এবং নেপালের প্রবৃদ্ধি ৩.১ শতাংশ থেকে কমে ২.৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এডিবি'র আউটলুকে।
এডিবি'র সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে আফগানিস্তানের জন্য কোনো প্রবৃদ্ধি হারের পূর্বাভাস দেয়নি। তবে, পূর্ববর্তী এপ্রিলের প্রতিবেদনে, আফগানিস্তানের জন্য ৩ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে এ বছর প্রবৃদ্ধির হার ৮.১ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি; এর আগে এপ্রিলের প্রতিবেদনেও চীনের জন্য এই একই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
উন্নয়নশীল এশিয়ায় চলতি বছরে মুদ্রাস্ফীতির হার ২.২ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ২.৭ শতাংশে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক পণ্য এবং খাদ্যসামগ্রীর বর্তমান উচ্চমূল্যের প্রবণতা বজায় থাকলে, এই অঞ্চলের কিছু দেশে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রচেষ্টায় এডিবি একটি সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংস্থাটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৮, যার মধ্যে ৪৯ টি দেশই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত।