চাহিদার চেয়ে আমদানি বেশি, তবু দাম বাড়ছে খেজুরের
প্রতি বছরের মত এবারও রোজা শুরু হওয়ার মাসখানেক আগে থেকে একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে খেজুরের দাম। যদিও ইতিমধ্যেই চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে খেজুর আমদানি হয়েছে।
খেজুর আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর রোজাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০ হাজার মে. টন খেজুর আমদানি হয়েছে। যেখানে রমজান মাসে চাহিদা রয়েছে ৩৫ হাজার টনের কিছু বেশি। বাড়তি মজুদ থাকার পরও খুচরা বাজারে ইতিমধ্যে খেজুরের দাম বেড়েছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, সাধারণ মানের প্রতি কেজি খেজুর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-৫০০ টাকা দরে। যা এক বছর আগের এই সময়ের তুলনায় ৪৪.৪৪ শতাংশ বেশি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাসে খেজুরের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এই চাহিদাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মত এবারও ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই খেজুর আমদানি শেষ করেছে। তবে রোজা শুরু হওয়ার আগেই খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফল আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। যে কারণে দাম বৃদ্ধির কোন কারণ নেই।'
তিনি জানান, রোজার আগে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী খেজুর বিক্রি করে। এই ব্যবসায়ীদের কারণে প্রতিবছরই বাজারে খেজুরের দাম বেড়ে যায়।
তবে বাদামতলির আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝারি মানের খেজুরে কার্টন প্রতি (১০ কেজি) ৫০ টাকা দাম বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিউনেশিয়া-আলজেরিয়া থেকে আমদানি করা বড়ই, ধাবাস, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা নাগাল খেজুর। ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ইফতারে জাহেদি, বড়ই ও ধাবাস কিনে বলে জানা গেছে।
দেশের সবচেয়ে বড় ফলের বাজার রাজধানীর বাদামতলীতে গিয়ে দেখা গেছে, পাইকারীতে প্রতি কার্টন বড়ই খেজুর ১৪০০ (১০ কেজি) টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ১৩০০-১৩৫০ টাকা। নাগাল খেজুরের দামও ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কার্টন ১৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। একেবারে কম দামের মধ্যে রয়েছে সায়ের খুজুর। যেগুলো হাজার টাকা কার্টন হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
এই খেজুরগুলোই খুচরা বাজারে ৩০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ভালো থাকার দাবি করলেও ভালো মানের আজোয়া ও মরিয়ম খেজুর খুচরা বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাইকারীতে মরিয়ম খেজুরের দাম ৭০০ টাকা হলেও খুচরায় এক কেজি খেজুর কিনতে হচ্ছে ৮৫০-১৫০০ টাকায়। অন্যদিকে খুচরায় আজোয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১১০০-২০০০ টাকা কেজি দরে।
বাদামতলির মেসার্স সুমন এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা আনিসুর রহমান বলেন, 'করোনার কারণে গত রমজানে সেভাবে খেজুর বিক্রি হয়নি। এবারও সরবরাহ ভালো যে কারণে দাম বাড়েনি'।
বাড্ডার খেজুর বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'এবার দেড় লাখ টাকার খেজুর কিনে রেখেছি রোজায় বিক্রির উদ্দেশ্যে'।
এদিকে নিম্নমানের খেজুর যাতে বাজারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মনিটরিং শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, `আমরা দ্রুতই অভিযান শুরু করব। কারণ গত বছরের অনেক খেজুর অবিক্রিত ছিল। নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর যাতে বাজারে ঢুকতে না পারে সেজন্য আমরা তদারকি করবো।'