তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কমেছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা
খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে যে অর্থ জমা রাখতে হয় (প্রভিশন) তা থেকে কিছুটা ছাড় পাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পুরো ব্যাংকখাতে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এসব ব্যাংকে রক্ষিত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ, গেল বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় মার্চে ৪,৭৭৮ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৮,৩২১ কোটি টাকা। গেল ডিসেম্বরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩,১০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে পাওয়া মূলধন সংক্রান্ত বিবৃতি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সরকারের হয়ে বিনা পয়সায় অনেক লেনদেন করে দেয়। এসব ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর যে খরচ হয়, তা পুষিয়ে দিতে সরকার কিছু সুবিধা দেয়।
খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখা প্রভিশনে কিছুটা ছাড় দেয়া তেমনই একটি সুবিধা। এক্ষেত্রে প্রভিশন রাখার হার কমানো নয় বরং সময় বাড়ানো হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, এক বছরে কোন ব্যাংককে যে পরিমাণ প্রভিশন রাখতে হয় তা হয়তো দুই বছরে রাখার সুযোগ দেয়া হয়।
ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি দেখে এই সুবিধা দেয়া হয় বলে জানান তিনি। এর প্রভাবেই মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মূলধন ঘাটতি অনেক কমেছে বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
খেলাপি ঋণের পরিমাণ যদি বাড়ে তাহলে এর বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণও বেড়ে যায়। মার্চ শেষে ডিসেম্বরের তুলনায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে মোট বিতরণ করা ঋণের ৮.০২ শতাংশ বা ৯৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
করোনার প্রভাবে অর্থনীতিতে চলমান মন্দার ফলে খেলাপি ঋণ আগামীতে আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে হয়তো আরো বেশি প্রভিশন রাখতে হতে পারে। তখন মূলধন ঘাটতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে মনে করেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি কমে যাওয়ার প্রভাবে মার্চ শেষে ব্যাংকখাতের মূলধন পর্যাপ্ততা বা সিআরএআর (CRAR) এর হার ডিসেম্বরের তুলনায় সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৬৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে এই হার ছিল ১১.৬৪ শতাংশ।
আমানতকারীদের সুরক্ষা, ব্যাংকের স্থিতিশীলতা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা পরিমাপের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয় মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিএআর)।
যে ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত বা সিএআর যত বেশি, অর্থনৈতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সে ব্যাংকের সক্ষমতা ততটাই শক্তিশালী। মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিএআর), ঝুঁকি-ওজনযুক্ত সম্পদের অনুপাতের মূলধন হিসাবেও পরিচিত (সিআরএআর)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবৃতিতে দেখা যায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন উদ্বৃত্ত ডিসেম্বরের তুলনায় মার্চে ৩,৮৮৫ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ২৭,৪০২ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি'র সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। প্রভিশনের অর্থ বেশি রাখলে মূলধনে টান পড়বেই।
এদিকে, বিদেশি ব্যাংকগুলোর মূলধন পরিস্থিতি মার্চ শেষে ২০৩ কোটি টাকা বেড়ে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯,৮২৮ কোটি টাকা।
তবে সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মূলধন পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। এই তিনটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৪৬৫ কোটি টাকা বেড়ে প্রায় ১২,৩৪৬ কোটি টাকায় ঠেকেছে।