নন-বন্ডেড রপ্তানিকারকদের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি: বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া এনবিআরের চিঠি প্রত্যাহারের উদ্যোগ
বন্ড লাইসেন্সবিহীন রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের মূল এলসির বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে বাকিতে কাঁচামাল ক্রয় আটকে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চিঠি প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে একটি রিভিউ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী রবিবার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হবে।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই কমিটি আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি রপ্তানির স্বার্থে তা সংশোধনের উদ্যোগ নিবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ব্যবসায়ী নেতা ও বর্তমান সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেম ছাড়াও এনবিআরের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্র জানায়, সভায় বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানো এনবিআর চেয়ারম্যানের চিঠির বিষয়ে আলোচনা হয়। ইস্যুটি নিয়ে এনবিআর ও ব্যবসায়ী নেতারা নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
এরপর বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানো এনবিআরের চিঠিটি স্থগিতের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সভায় উপস্থিত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিষয়ে সভায় উপস্থিত এনবিআর সদস্যরা ইস্যুটি এনবিআর চেয়ারম্যানের নজরে আনবেন এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হবে।
এর ভিত্তিতে নন বন্ড রপ্তানিকারকদের ব্যাক টু ব্যাক এলসি না খোলা সংক্রান্ত এনবিআরের চিঠিটি স্থগিত করা হবে বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিকেএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
এছাড়া সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রপ্তানির স্বার্থে এ চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে। কেননা বন্ড লাইসেন্সবিহীন পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের প্রতিষ্ঠান এক হাজারের উপরে, যাদের বার্ষিক রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারের উপরে।
অবশ্য সভায় উপস্থিত এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুরো বিষয়টি পর্যালোচনার লক্ষ্যে একটি রিভিউ কমিটি গঠন হবে। আর চিঠি স্থগিতের বিষয়ে চেয়ারম্যান মহোদয়ের নজরে আনা হবে। এরপর তিনি তার মতো হয়তো সিদ্ধান্ত নেবেন।
নন-বন্ডেড পোশাক কারখানাগুলোর জন্য ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা বন্ধ রাখতে অনুরোধ করে এনবিআর গত ৩১ আগস্ট একটি চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়; এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গাইডলাইনের পরিপন্থী বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা দেয়া হয়, তৈরী পোশাক এবং দেশীয় টেক্সটাইল কারখানাগুলো ঋণের ভিত্তিতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে কাঁচামাল এবং আনুষাঙ্গিক সংগ্রহ করতে পারবে না।
বরং স্থানীয় ক্রয়ের জন্য তাদেরকে নগদ অর্থ এবং ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করতে হবে, যা তাদের টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে।
এরপরই উদ্বেগ তৈরি হয় পোশাক খাতের রপ্তানিকারকদের মধ্যে।
এছাড়া একই দিন পোশাক রপ্তানিকারকদের শুল্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শুল্ক সংক্রান্ত আটটি বিষয় সমাধানের দাবি জানান বিজিএমইএর নেতারা। বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন।