রেস্তোরাঁয় খেয়ে কিস্তিতে টাকা পরিশোধের অ্যাপের জনপ্রিয়তা বাড়ছে
আজকাল অনেক ক্রেতাই কোনো জিনিসের মূল্য পরিশোধের জন্য ডিজিটাল মাধ্যম খোঁজেন। এমন ক্রেতার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে ২০১৭ সাল থেকে ক্রমাগত বাড়ছে 'বাই নাউ, পে লেটার' (বিএনপিএল) প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা। ২০১৭-তে ধারণা করা হয়েছিল, ২০২৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক ই-কমার্স ব্যয়ে বিএনপিএল প্ল্যাটফর্মের হিস্যা ৩ শতাংশে ঠেকবে।
মূল্য পরিশোধে ধীরে ধীরে আবেদন কমছে নগদ টাকা, কার্ড ও ডিজিটাল অর্থ লেনদেনের। ওয়ার্ল্ডপ্লে-র দ্য গ্লোবাল পেমেন্টস রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৪ সালের মধ্যে বিএনপিএলের হার ১৮১ শতাংশ বাড়বে। সুইডিশরা ইতিমধ্যে মূল্য পরিশোধের জন্য বিএনপিএল পদ্ধতিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, ৮৪ শতাংশ সুইডিশ এখন বিএনপিএল পদ্ধতিতে কেনাকাটা করেন।
বিএনপিএল একদিকে যেমন মিতব্যয়ী ক্রেতাদের কিস্তিতে সহজে কেনাকাটা করার সুযোগ দেয়, তেমনি বিক্রেতারাও এর সুবাদে গ্রাহক বাড়ানোর সুযোগ পান। বিশেষ করে মিলেনিয়াল ও জেনারেশন জেড প্রজন্মের ক্রেতারা এ প্ল্যাটফর্ম বেশি ব্যবহার করেন।
তবে একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার, বিএনপিএলে প্রতি লেনদেনে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের চেয়ে বেশি ফি নেওয়া হয়। যেমন, বিএনপিএল প্রতিষ্ঠান আফটারপে প্রতি পেমেন্ট থেকে ৩০ সেন্ট কেটে রাখে। তবে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি এ খরচের ধাক্কা সামলে নিতে পারে, তবে বাড়তি গ্রাহক সংখ্যা দিয়ে- তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।
কোনো গ্রাহক যদি দুর্ঘটনাক্রমে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারেন, এ তথ্য তার ক্রেডিট রেকর্ডে টুকে রেখে তাকে চুক্তির শর্তাবলি আবার পড়তে মনে করিয়ে দেওয়া হয়।
ফিনট্রাস্ট অ্যাডভাইজারের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং অংশীদার প্রশান্ত যোশী বলেন, 'কোনো পেমেন্ট মিস হলে সাধারণত উল্লেখযোগ্য হারে জরিমানা করা হয়। মূল্য পরিশোধে বিলম্ব হলে মাসিক ফি ও বকেয়া সুদের পরিমাণ ১.৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে আপনি সহজেই ঋণ-ফাঁদে পড়তে পারেন।'
রেস্তোরাঁ অ্যাপের বাজারে এখন খাবার সরবরাহ ও রেস্তোরাঁ রিজার্ভেশন করার অ্যাপের আধিপত্য চলছে। তবে একটি অ্যাপ রেস্তোরাঁ কর্মীদের কাজ দেওয়ার পাশাপাশি ভোজনরসিকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে নানা স্বাদের খাবারের ব্যবস্থাও করছে।
অ্যাপটির নাম পেও (Payo)। এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা সুদবিহীন কিস্তির মাধ্যমে খাবারের মূল্য পরিশোধ করতে পারছেন। করোনা মহামারির মধ্যে এই অ্যাপ রেস্তোরাঁ মালিকদের জন্য স্বস্তির সুবাতাস হয়ে এসেছে। পেও-ই প্রথম অ্যাপ, যা থেকে রেস্তোরাঁ মালিক ও গ্রাহক উভয়পক্ষই লাভবান হয়েছে।
২০২১-এর মার্চে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে চালু হওয়ার পর থেকে এই ফিনটেক অ্যাপের শীর্ষ ২০ অংশীদার জানিয়েছে, তাদের গড় অর্ডারের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।
মহামারিকালে বন্ধ থাকা রেস্তোরাঁ এবং ঘরবন্দী ক্রেতা, উভয়পক্ষের জন্যই বিএনপিএল দারুণ সমাধান হতে পারে।
জনপ্রিয় ডাইন আউট অ্যাপ-
ওপেনটেবিল:
মেক্সিকো থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি ভারতেও অফিস আছে এই অ্যাপের। ওপেনটেবিলের রিভিউ সংখ্যা ১০০ মিলিয়নেরও বেশি। এই অ্যাপটির লক্ষ্য রেস্তোরাঁর সঙ্গে গ্রাহকদের সংযুক্ত করা। ওপেনটেবিল ব্যবহার করে প্রতিবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পয়েন্ট সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। এ পয়েন্টের মাধ্যমে টাকা জমানো যায়। ৬০ হাজারের বেশি রেস্তোরাঁ বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এই অ্যাপের মাধ্যমে।
জোমাটো:
২০১০ সালে চালু হওয়া এই অ্যাপের মাধ্যমে খাওয়া-দাওয়া করার জন্য বিভিন্ন ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ বেছে নেওয়া যায়। জোমাটো রেস্তোরাঁগুলোর জন্য প্রচারণার কাজও করে দেয়। বিশ্বের ২৪টি দেশের ১০ হাজারের বেশি শহরে রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে খুঁজে নেওয়া যায় এই অ্যাপের সাহায্যে।
ডাইনআউট:
২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই অ্যাপটিকে ২০১৪ সালে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান টাইমস ইন্টারনেট কিনে নেয়। সারা ভারতের ২০টি শহরে এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা যায়। অ্যাপটি নিয়মিত গ্রাহকদের মূল্যছাড়সহ নানা ধরনের সুবিধা দেয়। নিয়মিত গ্রাহকরা চাইলে ডাইনআউট পাসপোর্টে বিনিয়োগও করতে পারেন।
- সূত্র: দ্য সিইও ম্যাগাজিন