লোডশেডিংয়ে বাজারে আইপিএস সংকট
সারাদেশে লোডশেডিংয়ের প্রভাবে বেড়েছে ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই তথা আইপিএসের চাহিদা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাজারে আইপিএসের সংকট দেখা দিয়েছে, অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় ইতোমধ্যে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায়ই খুচরা বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না আইপিএস।
গতকাল সকালে খুচরা বাজার রাজধানীর স্টেডিয়াম মার্কেট, বাইতুল মোকাররম, পুরান ঢাকার নবাবপুর ইত্যাদি অঞ্চলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আইপিএস পাওয়া যায়নি।
পুরান ঢাকার নবাবপুর এরশাদ মার্কেটের আইপিএস বিক্রেতা আমির হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'আরও ১৫ দিন আগেই আমার দোকানের সব আইপিএস বিক্রি হয়ে গেছে। এই মাসে কম করে হলেও ২০০টি আইপিএস বিক্রি করেছি, কিন্ত এখন নতুন পণ্য নেই, দোকানে বহু কাস্টমার এসে ফিরে যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন।'
স্টেডিয়াম মার্কেটের আইপিএস দোকানি নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের সকল পুরাতন মাল বিক্রি তো শেষ, নতুন কোন মাল এখনও পাইনি। বিগত কয়েক বছর ধরে লোডশেডিং না থাকায় আইপিএসের তেমন চাহিদা ছিল না বললেই চলে, কিন্তু এখন সম্পূর্ণ উল্টো, যার জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত ছিলাম না।'
লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পুরান ঢাকার ইসলামপুর মুন কমপ্লেক্স থেকে আইপিএস কিনেছেন রাজধানীর কমলাপুরের বাসিন্দা রুহুল আমিন সরকার। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'লোডশেডিং তো চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ছেলেমেয়ের সামনে বার্ষিক পরীক্ষা; লোডশেডিংয়ের কোন শিডিউল মানা হচ্ছে না তাই ছেলেমেয়েরা পড়াশোনাও করতে পারছে না গরমে, তাই বাধ্য হয়ে আইপিএস কিনতে এসেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'অনেক মার্কেটে আইপিএস খুঁজেও কেনার জন্য পাচ্ছি না, পরে একজন দোকানদার বলেছেন পুরান ঢাকার ইসলামপুরে নন ব্র্যান্ডেড আইপিএস পাওয়া যায়। এখানে এসেও দেখি ১৫ হাজার টাকার নন ব্র্যান্ডেড আইপিএস ২০-২২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'
ইসলামপুর মুন কমপ্লেক্সের এস এম কেবিনেট এন্ড ইলেকট্রনিক্সের (নন ব্র্যান্ড) মালিক মোহাম্মদ মিলন বলেন, 'ঈদের পর থেকে কম করে হলেও ৫০০ আইপিএস বিক্রি হয়েছে। এখন বলতে গেলে আইপিএসের চাহিদা ৪-৬ গুণ বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, কাঁচামালের সংকট। করোনার পর চায়না থেকে ঠিকমতো পণ্য আসছে না, কিছুদিন পর হয়তো নন ব্র্যান্ডেরও কাঁচামাল সংকট তৈরি হবে।'
পাটুয়াটুলীর আরেক আইপিএস ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সুজন টিবিএসকে বলেন, 'আইপিএস বানানোর লোহার শিটের দাম কেজিতে ১০০ টাকার উপরে বেড়ে গেছে, ১২০ টাকা কোরের দাম এখন ২৮০ টাকা। আইপিএসের চাহিদা বাড়লেও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেমন একটা লাভ হচ্ছে না।'
মোহাম্মদ সুজন আরও বলেন, 'আমাদের মার্কেটে আইপিএসের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি পুরাতন আইপিএসের জন্য ব্যাটারির চাহিদাও বেড়ে গেছে। আর ব্যাটারি দেশেই উৎপাদন হয়। সীসা এনে ব্যাটারি বানাতে সময় বেশি লেগে যায়। হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় ব্যাটারি পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।'
বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে প্রথম আইপিএসের আমদানি করে রহিম আফরোজ গ্রুপ। রহিম আফরোজ ছাড়াও বাটারফ্লাই, নাভানা, সিঙ্গার, হ্যামকো, সনি, ফিলিপস, অনিক ও স্যামসাং ব্রান্ড দেশে আইপিএস আমদানি করে। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক স্থানীয় বাজারে আইপিএসের ব্যবসা লাভজনকই ছিল। কিন্তু দেশ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়াতে চার-পাঁচ বছর আগে আইপিএসের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যায়। আমদানিকৃত অনেক আইপিএস অবিক্রিত থেকেও যায়। কিন্তু এখন আইপিএসের বাজার আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
রহিম আফরোজ গ্রুপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ রহিম বলেন, 'বাজারে আইপিএসের চাহিদা থাকলেও সে অনুপাতে যোগান নেই। সরবরাহের তুলনায় কয়েকগুণ চাহিদা বেড়ে গেছে কোরবানি ঈদের পর থেকেই। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ না থাকায় অনেক খুচরা বিক্রেতা অর্ডার দিতে এসে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'চাহিদাটা একদম হঠাৎ করে হওয়ায় সংকটটা তৈরি হয়েছে। কোন আমদানিকারকই এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। জুলাইয়ের পর থেকে তিন-চার গুণ বেশি বিক্রি হয়েছে। আরও বিক্রি হতো কিন্তু চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ না থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। ক্রেতাদের চাহিদা এখন অনেক বেশি। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই সরবরাহ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব তবে দাম আরও বাড়বে মনে হচ্ছে, কারণ ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।'