তীব্র তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ে বেড়েছে চার্জার ফ্যান-আইপিএস’র বিক্রি ও দাম
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বইছে তাপদাহ। তীব্র তাপদাহের সঙ্গে বিদ্যুতের লোডশেডিংও বেড়ে চলেছে। অসহ্য গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে মানুষ ভিড় করছেন চার্জার ফ্যান ও আইপিএস (ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই)-এর দোকানে। আর চাহিদা ও বিক্রি বেড়ে যাওয়ার সুযোগে এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বাজারে।
ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, গত একমাসে ইলেকট্রিক পণ্যের বাজারে আকার ও মানভেদে প্রতিটি চার্জার ফ্যানে ১,০০০–২,০০০ টাকা, আইপিএস-এ ৩,০০০–৫,০০০ টাকা, আইপিএস ব্যাটারিতে ২,০০০–৫,০০০ টাকা এবং এসিতে ৫,০০০–৭,০০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
ইলেকট্রিক পণ্যের জন্য চট্টগ্রামে রাইফেলস ক্লাব, শাহ আমানত মার্কেট ও রেয়াজুদ্দিন বাজারের সিডিএ মার্কেট প্রখ্যাত। সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে এসব বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। চার্জার ফ্যান, আইপিএস, আইপিএস'র ব্যাটারি কিনতে ভিড় করেছেন তারা।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম ফেরদৌস রিফা লোডশেডিংয়ের সময় গরমে কষ্ট পেয়ে রাইফেলস ক্লাবে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছেন। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মাঝারি মানের যে ফ্যান আগে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় পাওয়া যেত, তা এখন ৬,০০০ টাকা। কয়েকটি দোকানে ঘুরে দেখেছি; প্রতিটি ফ্যানে ১,৫০০–২,০০০ টাকা দাম বেড়ে গেছে।'
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে পিক আওয়ারে ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ১,০০০–১,১০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। ফলে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে প্রায় প্রতিদিন।
রাইফেলস ক্লাব মার্কেটের ডালাস ইলেকট্রিক-এর স্বত্বাধিকারী ওবায়দুল হক টিবিএসকে বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় দিনে ৭০–৮০টি চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে। গত মাসে এ বিক্রি ছিল দিনে সর্বোচ্চ ২০–৩০টি। চার্জার ফ্যানের পাশাপাশি আইপিএসের ব্যবসাও ভালো হচ্ছে, দিনে ১৫–২০টি আইপিএস বিক্রি হচ্ছে।'
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিটি চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন চার হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চে ১০ হাজার টাকায়। আর ব্যাটারির সক্ষমতা বিবেচনায় একেকটি আইপিএসের দাম ২০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাসে প্রতিটি চার্জার ফ্যানের দাম বেড়েছে ১,০০০–২০০০ টাকা। বাজারে এখন ১২ ইঞ্চি মাপের একটি চার্জার ফ্যানের দাম সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
চাহিদার কারণে ইলেকট্রিক পণ্যের দোকানের পাশাপাশি অন্যান্য দোকানেও এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট বা মাঝারি আকারের চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও। বাজারে ১৪, ১৬ ও ১৮ ইঞ্চির চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেশি।
চার্জার ফ্যানের মতো বাজারে আইপিএসেরও নানা ধরন বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদা বেশি মাঝারি মানের ৮০০ থেকে ১,২০০ ওয়াটের আইপিএসের। এসব আইপিএসের দাম ব্র্যান্ডভেদে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা, যা গত মাসের দামের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি।
সাতকানিয়া থেকে আইপিএস কিনতে আসা জুনায়েদুল হক অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন। 'এক বছর আগে যে আইপিএস ৩৫ হাজার টাকা ছিল, তা আজ এসে দেখি সাড়ে ৪০ হাজার টাকা!' বলেন তিনি।
রেয়াজুদ্দিন বাজারের সিডিএ মার্কেটের ইলেকট্রিক পণ্যবিক্রেতা মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, দুই বছর আগেও আইপিএসের এত চাহিদা ছিল না। বর্তমানে চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে।
'মূলত চীন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি কমে যাওয়া এবং পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়ানোয় বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে,' বলেন তিনি।
বাজারে লুমিনাস, রহিমআফরোজ, এক্সট্রিম ব্র্যান্ডের আইপিএসের চাহিদা বেশি বলে জানান এ বিক্রেতা। একই মার্কেটের আরেক বিক্রেতা শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি গত এক সপ্তাহেই কমপক্ষে ১০০টি আইপিএস বিক্রি করেছেন।
এদিকে আমদানি করা আইপিএসের পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে স্থানীয়ভাবে বানানো আইপিএসেরও। অনেকে মেকানিকের দোকানে আসছেন নষ্ট চার্জার ফ্যান ও আইপিএস সারিয়ে নিতে। এ সুযোগে বেড়েছে চার্জার ফ্যান ও আইপিএসের ব্যাটারির দাম।
বাজারে চার্জার ফ্যানের ৬ ভোল্টের ব্যাটারি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও ১২ ভোল্টের ব্যাটারি ১০০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও এসব ব্যাটারি ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় পাওয়া যেত।
এদিকে বাড়তি চাহিদার সুযোগে ইলেকট্রিক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সোমবার রাইফেলস ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। অভিযানে রিচার্জেবল ফ্যান ক্রয়-বিক্রয়ের ভাউচারে দামে অসামঞ্জস্য ও বেশি দামে ফ্যান বিক্রির দায়ে তিন প্রতিষ্ঠানকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ বলেন, 'বাড়তি চাহিদার সুযোগে অতিরিক্ত দাম আদায় করছে ইলেকট্রিক পণ্যের দোকানগুলো। অভিযানে বাড়তিমূল্যে পণ্য বিক্রি প্রমাণিত হওয়ায় ৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০, ২০ ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।'