সরকারী নিয়ন্ত্রণের ফলে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে অসুবিধা হচ্ছে: এমসিসিআই সভাপতি
ডলারের রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে সরকার আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আনায় ক্যাপিটাল মেশিনারি তথা মূলধনী যন্ত্রপাতি আনতে গিয়েও কেউ কেউ ঝামেলায় পড়ছেন বলে অভিযোগ তুলেছে দেশের ব্যবসায়ীদের অন্যতম প্রভাবশালী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, "আমাদেরই একজন মেম্বার ক্যাপিটাল মেশিনারি আনতে গিয়ে হ্যাসেলের মধ্যে পড়েছেন, অথচ ক্যাপিটাল মেশিনারি অর্থনীতিতে কী অবদান রাখে তা আমরা সবাই জানি।"
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক চাচ্ছে মার্কেটের চাহিদা এবং সরবরাহকে উন্নত করতে। সেটা করতে হলে আমদানি নিয়ন্ত্রণকে একটা পর্যায়ে গিয়ে শিথিল করতে হবে।"
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এমসিসিআই'র নিজস্ব অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
ডলারের বিপরীতে টাকা ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেন খুব সহজ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, "অনেক জটিলতা রয়েছে। এজন্য উভয় দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক টু সেন্ট্রাল ব্যাংক-এর রূপরেখা ঠিক করতে হবে, ব্যবসায়ীদেরও বসতে হবে। অনেক প্রক্রিয়া আছে, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) করতে হবে। বিশেষভাবে ভারতের পক্ষ থেকে কী ধরণের শর্ত দেওয়া হয়, তা দেখতে হবে।"
"ভারতের সঙ্গে ট্রেড প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার, তার চার বিলিয়ন ডলারও যদি করা যায় তবে ডলারের রেটে কিছু প্রভাব আসবে।"
এছাড়া সম্প্রতি চীনের সঙ্গেও ডলারের বিপরীতে উভয় দেশের মুদ্রায় লেনদেনের ফল কী দাঁড়ায়, তা দেখতে আরো অপেক্ষা করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, "চীনের এক্সপোর্টাররা রেন্মিন্বি (আরএমবি) তে পেমেন্ট নিতে চাইবে কিনা, তাও দেখতে হবে।" তবে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ ও চীনে কাজ করা মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এর সমাধান আসতে পারে।
এমসিসিআই'র পক্ষ থেকে বলা হয়, "এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশের কিছু সুবিধার পাশাপাশি বিশ্ববাণিজ্যে সুবিধা না থাকাসহ অন্যান্য কারণে ৮% থেকে ১৩% গ্লোবাল এক্সপোর্ট ইরোশন হতে পারে। তবে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, পিস এন্ড হারমোনি তথা রাজনৈতিক স্থিরতা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা রাখা সম্ভব হলে বাংলাদেশ ওই পরিমাণ প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কিংবা আরো বাড়বে।"
এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স সহ অন্যান্য লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছরের স্থলে তিন থেকে পাঁচ বছর করা, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) সত্যিকারের ওয়ান স্টপ সার্ভিস করা, পোর্টসহ লজিস্টিকস খাতের উন্নয়নে উপর গুরুত্ব দেয় এমসিসিআই।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এমসিসিআই সভাপতি বলেন, "অভ্যন্তরীণ লজিস্টিকসের দক্ষতা ১৭% বাড়ানো সম্ভব হলে আমাদের ট্রেড বাড়বে ৭%।"
এমসিসিআই সভাপতি বলেন, "পশ্চিমা দেশগুলো সিঙ্গেল দেশ তথা, চীন নির্ভরতা কমাবে– যা আমাদের জন্য 'টেইলউইন্ড'। তবে আমাদের হেডউইন্ডে (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনসহ অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি) মনোযোগ দিতে হবে।"
তিনি বলেন, "রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলবে। তবে কোভিডের আড়াই বছরে বিশ্বের অন্যান্য দেশে অস্থিরতা থাকলেও বাংলাদেশে স্থিরতা ছিল উল্লেখ করে তিনি আগামী দিনগুলোতেও এই স্থিতিশীলতা থাকবে বলে আশার কথা জানান।
এমসিসিআই পরিচালক আদিব হোসেন খান বলেন, "আমাদের অর্থনীতি ঘাবড়ানোর মত অবস্থানে নেই।"
রপ্তানি, রেমিট্যান্সে ইতিবাচক থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "প্রধান রপ্তানি বাজারগুলো তৈরি পোশাক আমদানি কমাতে পারে। তবে আমরা যেহেতু বেসিক আইটেম তৈরি করি, আমাদের রপ্তানি দৃঢ়ই থাকবে।"
অবশ্য সংগঠনের সভাপতি যুদ্ধ পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে চলতি অর্থবছরে ১১ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন অনিশ্চিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এমসিসিআই সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, পরিচালক গোলাম মাইনুদ্দিন, মহাসচিব ফারুক আহমেদ প্রমুখ।