দেড় বছর পর পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়ে স্বস্তিতে ট্যানারি মালিকরা
প্রায় দেড় বছর পর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নবায়ন করার সিদ্ধান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন দেশের ট্যানারি মালিকরা।
পরিবেশ দূষণ ও পুরোপুরি কমপ্লায়েন্স না হওয়ায় নতুন ছাড়পত্র ইস্যু ও নবায়ন বন্ধ রেখেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে বেকায়দায় পড়েছিলেন ট্যানারি মালিকরা।
যেসব ট্যানারির পরিবেশ ছাড়পত্র ছিল, সেপ্টেম্বর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাড়পত্র রি-নিউ বা নবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৪টি ট্যানারির মেয়াদোত্তীর্ণ ছাড়পত্র রি-নিউ হয়েছে, আরও আটটি ছাড়পত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোঃ শাহিন আহমেদ।
তিনি বলেন, "ট্যানারি মালিকরা যে সমস্যায় ছিলেন, সেটি লাঘব হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ছাড়পত্র দিতে হবে।"
উদ্যোক্তারা জানান, ট্রেড লাইসেন্স, বন্ড লাইসেন্স ও রপ্তানি-আমদানি লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু দেড় বছরের বেশি সময় ধরে পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেননি তারা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত উল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকায় ট্যানারি মালিকরা কেমিক্যাল আমদানি করেও পোর্ট বা বন্দর থেকে আনতে পারেনি। মালামাল নিতে দেরি হওয়ায় উদোক্তাদের পোর্ট ড্যামারেজ দিতে হয়েছে।"
বিটিএ'র ভাইস চেয়ারম্যান এবং সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেডের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, "পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন না করায় নানামুখী সমস্যায় পড়েন উদ্যোক্তারা। চামড়া সংগ্রহের মৌসুম কুরবানি ইদের আগে উদ্যোক্তারা কেমিক্যাল আনলেও পোর্ট থেকে তা আনতে পারেননি।"
"কেমিক্যাল ট্যানারিতে আনতে না পারায় চামড়া প্রক্রিয়াকরণে সংকট দেখা দেয়, যাতে কাঁচামালের দাম বেড়ে যায়। এখন কেমিক্যাল আনাসহ বিভিন্ন লাইসেন্স নবায়নে সুবিধা হবে," যোগ করেন তিনি।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশ
গত মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভায় সাভারের সকল চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
ওই সভায় কমপ্লায়েন্স মেনে চলা ট্যানারির ছাড়পত্র নবায়ন করার ব্যাপারেও সুপারিশ করেছে কমিটি।
এছাড়া, এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি)-এর ধারণ ক্ষমতা ছয়মাসের মধ্যে দৈনিক ২০ হাজার কিলোমিটারে উন্নীতকরণের সুপারিশ করা হয়।
শিল্পনগরীর যেসব ট্যানারি কমপ্লায়েন্স অর্জন করেছে, তাদের ছাড়পত্র নবায়নের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
যেসকল প্রতিষ্ঠানের কমপ্লায়েন্স নেই ও ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি, শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; যাদের কমপ্লায়েন্স নেই, কিন্তু ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী তাদের ছয় মাসের মধ্যে কার্যক্রম সম্পাদন এবং যাদের ইতোমধ্যে কমপ্লায়েন্স রয়েছে তাদেরকে নবায়নের নির্দেশনা প্রদান করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
এছাড়া, ট্যানারি বর্জ্য হতে ক্রোমিয়াম আলাদা করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রণয়নপূর্বক পর্যায়ক্রমে বাস্তাবায়ন করতেও মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি।
গত বছরের আগস্টে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না করায় সাভারের চামড়া শিল্প নগরী আপাতত বন্ধ রাখতে সুপারিশ করেছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক স্থায়ী কমিটি।
ঢাকার অদূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ট্যানারিগুলোকে একত্রিত করে সাভার চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক ট্যানারি সাভার শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তবে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত তরল বর্জ্য উৎপাদিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি ফাংশনাল বা কার্যকর হয়নি।
উদ্যোক্তারা জানান, সিইটিপি ফাংশনাল না হওয়ায় পরিবেশ দূষণের কারণে হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারির পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন বন্ধ রাখে পরিবেশ অধিদপ্তর।