জুলাইতে সরকারি ঋণ কিছুটা কমেছে
নতুন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন পুরোদমে শুরু না হওয়ায় এবং জুন মাসে ভালো রাজস্ব আয় হওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ৯,৩৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পেরেছে সরকার।
তবে সরকার জুলাইতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৫,৫৩২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার অর্থ এটি হতে পারে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণের একটি বড় অংশ এই ধার করা অর্থ দিয়ে পরিশোধ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকার জুলাই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে নেওয়া আগের ঋণের ৩,৮২৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ দিয়ে হিসাব করা হয় ব্যাংকিং খাতের ঋণ।
এই অর্থ পরিশোধের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকায় এবং ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কয়েক মাস আগে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট ছিল। পরবর্তীতে পুনঃক্রয় চুক্তি (রেপো) এবং তারল্য সুবিধার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পর এ সংকট কমে আসে। "
"তবে সরকার বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। কখনো কখনো ব্যাংকিং খাত থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ফলে নতুন সংকট দেখা দিতে পারে," বলেন তিনি।
এছাড়া রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে প্রতিদিন অনেক টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে যাচ্ছে বলেও জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
গত অর্থবছর রিজার্ভ থেকে ১৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রির ফলে বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ১.১৪ লাখ কোটি টাকা জমা হয়েছে।
গত জুলাইতে কেনা নতুন ট্রেজারি বিল ও বন্ডের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা ছাপাতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষায়, এটি নেট ডিভলভমেন্ট। এর আগে গত জুনে শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৭৮,১৪০ কোটি টাকা ছাপানো হয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন করে টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হলে তা মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। গত বছরে প্রচুর পরিমাণে টাকা ছাপা হওয়ায় এখন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সরকারের ঋণ কমে আসা মূল্যস্ফীতিকে খুব একটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করেছে।
জুলাই মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মুদ্রাস্ফীতি সামান্য কমে ৯.৬৯% হয়েছে, যা জুনে ৯.৭৪% ছিল। মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৪%; যা গত দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, "সরকার যে ঋণ শোধ করছে তা ওয়েজ অ্যান্ড মিন্স বা ওভারড্রাফ্টের মতো স্বল্পমেয়াদী ঋণ। অর্থবছরের প্রথম দিকে এডিপি বাস্তবায়নের চাপ কম এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চলমান প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। তাই সরকারি খরচ কমেছে।"
"এছাড়া প্রতি অর্থবছরের শেষে রাজস্ব প্রবাহ ভালো থাকে। ফলে সরকারের হাতে টাকা থাকে। এসব কারণে অর্থবছরের প্রথম মাসে সরকারের খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। সামগ্রিকভাবেই ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারি ঋণ কমেছে," যোগ করেন তিনি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ১,০৬,৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে; কিন্তু ব্যয় বাড়ার কারণে অর্থবছরে ১,১৯,২৭৫ কোটি টাকা ঋণ নিতে হয়।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ১,৩২,৩৯৫ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
চলতি অর্থবছর সরকারকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হতে পারে কিনা জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে সরকার ঘোষণা করেছে কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে প্রণোদনা হিসেবে মূল বেতনের ৫% দেওয়া হবে। এছাড়াও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য নতুন দামি গাড়ি কেনার প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে সরকারের ব্যয় বাড়বে।
"এছাড়া, নির্বাচনের বছর হওয়ায় সরকার জনগণকে উন্নয়নমূলক কাজ দেখানোর জন্য চলমান কিছু প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে চাইবে। এসব দেখে বোঝা যাচ্ছে, সামনের দিনে খরচ মেটাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে," বলেন এ অর্থনীতিবিদ।
"তবে আমাদের রাজস্ব সেভাবে বাড়বে না। এর ফলে সরকারকে চলতি অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হতে পারে," যোগ করেন জাহিদ হোসেন।