অর্থবছরের দশ মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৮৪% কৃষিঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো
কোভিডের সময় থেকে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৮৪% বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর (জুলাই-এপ্রিল) মোট ঋণ বিতরণ হয়েছে ২৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কৃষকেরা গত বছরগুলোর ঋণসহ মোট ২২,০২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। কৃষি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
যদিও আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ বিতরণ হয়েছে ২০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে আগের বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৬.৬৭%। গত অর্থবছরের তথ্যমতে, সরকারি ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৮১% এবং বিদেশি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৭৫% অর্জন করেছিল। সবমিলিয়ে ঋণ বিতরণে টার্গেট পূরণের হার ছিল ৭৭%।
খাত সংশ্লিষ্টরা ঋণের এই প্রবৃদ্ধিকে সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলো সামগ্রিকভাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারবে।
প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও সব ব্যাংক সমানভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেনি। এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও বিতরণ করতে পারেনি ১৪টি ব্যাংক। অবশ্য বেশকিছু ব্যাংক রয়েছে যেগুলো ইতিমধ্যেই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে, এদের মধ্যে কয়েকটি আবার বিতরণ করতে পেরেছে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণেরও বেশি।
এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো নির্ধারিত ১১,০৪৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করেছে ৯,৯৩৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯০% ইতিমধ্যে অর্জিত হয়ে গেছে। ঋণ বিতরণের বিপরীতে এই সময়ে কৃষকদের ঋণ শোধের পরিমাণ ১০,৮৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, অর্থবছরের ১০ মাসে কৃষকেরা ঋণ নেওয়ার তুলনায় এক হাজার কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছেন। বাকি ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে মিল রেখে ঋণ বিতরণ করতে পারলেও বেসিক ব্যাংক বিতরণ করতে পেরেছে লক্ষ্যমাত্রার ২৪%। এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার শতভাগের বেশি ঋণ দিতে পারা একমাত্র সরকারি ব্যাংক বিডিবিএল (বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড)।
বিদেশি ও দেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মিলে লক্ষ্যমাত্রার ৪০% ঋণ বিতরণ শেষ করেছে। নির্ধারিত ১৭,৩৪৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে তাদের বিতরণ করা ঋণ ১৩,৮২৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কৃষকেরা ব্যাংকগুলোকে ১১,১৫৭ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে।
কৃষিখাতে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের ৩০০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে ১,৮৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকে এই টাকার যোগান দেওয়া হচ্ছে।
এর বাইরে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) নিজস্ব ফান্ড থেকে চলতি অর্থবছরে ১,০৬২ কোটি টাকা এই খাতে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল। এর মধ্যে ১০ মাস শেষে তারা বিতরণ করতে পেরেছে ৯২৮ কোটি টাকা। এছাড়া নিজস্ব ফান্ডের বাইরে সোনালী ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ১৪৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে তারা।
লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও বিতরণ করতে পারেনি ১৪ ব্যাংক
তথ্যমতে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র বিদেশি কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন চলতি অর্থবছরে এক টাকাও কৃষি ও অ-কৃষি গ্রামীণ ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। তাদের ৬৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল।
লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩% ঋণ বিতরণ করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তালিকায় নিচের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছে মধুমতি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দিলেও তারা বিতরণ করেছে দুই কোটি টাকার কিছু বেশি।
এই সময়ে বিতরণ করা ঋণগুলোর মধ্যে টার্গেটের ২০% এর কম ঋণ বিতরণ করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং আইএফআইসি ব্যাংক।
এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও বিতরণ করতে না পারা অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
অন্যদিকে ব্র্যাক ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ব্যাংক আল-ফালাহ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ মোট ২২টি ব্যাংক অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।