তালেবানের আয়ের উৎস কী?
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখলের পর কাবুলের দখল নেয় তালেবান। গত দু' দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধের পর অবশেষে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় তারা।
এক দশক আগেও এ দলটির মোট যোদ্ধা ছিল প্রায় ৩০ হাজার। কিন্তু এ বছরের মাঝামাঝিতে এসে সে সংখ্যা বেড়ে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখে এসে দাঁড়িয়েছে বলে জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ধারণা করা হয়, বিশ্বে যে সকল ধনবান বিদ্রোহী গোষ্ঠী বর্তমান তার মধ্যে রয়েছে তালেবানও। জাতিসংঘের মতে, ২০১১ সাল থেকে দলটির বার্ষিক আয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। তবে, বিবিসির অনুসন্ধানের মাধ্যমে ধারণা করা যায় যে, ২০১৮ সালে এসে তাদের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
যদিও তালেবানের আয়ের নির্দিষ্ট কোনো উৎস পাওয়া যায় না, তবে খনিজ সম্পদ উত্তোলন থেকে বিদেশি অনুদান পর্যন্ত নানা উপায়েই অর্থ উপার্জন করে থাকে তারা।
বৈদেশিক অনুদান
তালেবানকে আর্থিক সাহায্য দানের কারণে বহু বছর ধরেই পাকিস্তান, ইরান এবং রাশিয়াসহ আরো কিছু দেশকে দোষারোপ করে আসছিল আফগান এবং মার্কিন কর্মকর্তারা। কিন্তু প্রতিবারই এ অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে দেশগুলো।
তবে, তালেবানদেরকে প্রদানকৃত অনুদানের সিংহভাগই আসে পাকিস্তান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং কাতারের ব্যক্তিগত অনুদানকারীর হাত ধরে।
একটি মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের অনুমান অনুযায়ী, ২০০৮ সালে বৈদেশি উৎস থেকে তালেবান আয় করে ১০৬ মিলিয়ন ডলার। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে এ অনুদানের পরিমাণ বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মত।
মাদক ব্যবসা ও চোরাচালান
মাদক ব্যবসা এবং চোরাচালানের মাধ্যমে বছরে ১০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে তালেবান। ২০১৮ সালে স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগান রিকন্সট্রাকশন (সিগার) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, তালেবানের বার্ষিক রাজস্বের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে এ খাত থেকে।
তাছাড়া, অধিকৃত এলাকাগুলোতে জোর করে কৃষকদের দিয়ে আফিম চাষ করানোর অভিযোগ রয়েছে তালেবানের বিরুদ্ধে।
তবে, তালেবান বরাবরই মাদক শিল্পের সাথে তাদের সংযোগের কথা অস্বীকার করে আসছে। ২০০০ সালে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য আফিমের চাষ নিষিদ্ধ রেখেছিল তারা।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ আফিম উৎপাদনকারী দেশ আফগানিস্তান। আফিমের রপ্তানির মাধ্যমে দেশটি বছরে ১.৫ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকে।
নিয়ন্ত্রাণধীণ অঞ্চল প্রসার
২০১৮ সালে একটি খোলাচিঠির মাধ্যমে আফগান ব্যবসায়ীদেরকে সতর্ক করে তালেবান। তালেবানের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ভ্রমণের সময় ব্যবসায়ীদেরকে ট্যাক্স দেওয়ার কথা বলা ছিল সে বার্তায়।
এছাড়া, গত দুই বছরে নানা উন্নয়নমূলক এবং অবকাঠামোগত প্রকল্প থেকে ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে তালেবান। রাস্তাঘাট, স্কুল এবং হাসপাতালসহ এসকল প্রকল্পের বেশিরভাগই ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থায়নের উপর নির্ভরশীল।
২০১৮ সালে আফগানিস্তানের ইলেকট্রিসিটি কোম্পানির প্রধান বিবিসিকে জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভোক্তাদের বিলের মাধ্যমে তালেবান বছরে ২ মিলিয়নেরও বেশি ডলার আয় করছিল।
এদিকে প্রতিবার কোনো শহরের কেন্দ্র কিংবা সামরিক ঘাঁটি দখলের পর তালেবান সে স্থানের অস্ত্র, গাড়ি দখলে নিত, এমনকি কোষাগারও খালি করে ফেলতো।
খনিজ সম্পদ
তালেবানের অর্থের অন্যতম বৃহৎ উৎস হলো খনি। দক্ষিণ আফগানিস্তানে তালেবান অধিকৃত অঞ্চল থেকে নিকেল, টাংস্টেন, সোনা, মূল্যবান পাথর ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করে থাকে তারা।
খনিজ উপাদান ও মূল্যবান পাথরে ভরপুর আফগানিস্তানের মাটি। দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, সেখানকার খনিজ শিল্পের সর্বমোট বার্ষিক মূল্য ১ বিলিয়ন ডলার।
দেশটির বিভিন্ন খনিজ সাইটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা বৈধ এবং অবৈধ খনিজ উত্তোলন প্রকল্প থেকে অর্থ আয় করে থাকে তালেবান। ২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের অ্যানালিটিকাল সাপোর্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশনস মনিটরিং টিম জানায়, দক্ষিণ হেলমন্দ প্রদেশের ২৫ থেকে ৩০ টি অবৈধ খনির অপারেশন থেকে বছরে ১০মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে তালেবান।
- সূত্র: বিবিসি