তুষারঝড়ে মধ্য ও দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের বড় অংশজুড়ে মারাত্মক ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় কমপক্ষে ২১ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
বিদ্যুতের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয় টেক্সাসে। মেক্সিকোতে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন প্রায় ৪০ লাখ অধিবাসী! উত্তর-পশ্চিম ওরিগনও তীব্র তুষারঝড়ের কারণে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
অঙ্গরাজ্যগুলোতে জনদুর্ভোগ
প্রবল বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশব্যাপী চলমান টিকাদান কর্মসূচীও প্রভাবিত হয়েছে। হ্যারিস কাউন্টিতে আট হাজারের বেশি মানুষকে মডার্নার ভ্যাকসিন প্রদানের কথা ছিল। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে টিকাদান কার্যক্রমও বিঘ্নিত হয়েছে। সীমিত আকারে তিনটি হাসপাতাল, রাইস ইউনিভার্সিটি এবং কাউন্টি কারাগারে ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণে বিলম্ব হতে পারে বলে জানিয়েছে জো বাইডেন প্রশাসন।
এছাড়া বরফ হয়ে যাওয়ায় এবং সরবরাহ লাইন ফেটে যাওয়ায় পানি পাচ্ছেন না অনেকেই। অনেক বাসিন্দাই বরফ ফুটিয়ে পান করছেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সামনে এটাই সবচেয়ে বড় ধাক্কা। গভর্নরদের বাইডেন আশ্বস্ত করেছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোকে জরুরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় সরকার।
হাউজটনের মেয়র সিলভেস্টার টার্নার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তার শহরে ১৩ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছেন। তবে যেসব স্থানে বিদ্যুৎ আছে, সেখানে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোকে উষ্ণ রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ সেখানে কৃত্রিমভাবে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু তা থেকে সৃষ্ট কার্বন মনোক্সাইডের ফলে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
নর্থ ক্যারলিনাতে সমুদ্র উপকূলবর্তী এক শহরে টর্নেডোর আঘাতে নিহত হয়েছেন তিনজন। টেক্সাসের হিউস্টন এলাকায় ফায়ারপ্লেস থেকে আগুন লেগে প্রাণ হারিয়েছেন একই পরিবারের চারজন। লুইজিয়ানা, কেন্টাকি এবং মিসৌরির মতো অঙ্গরাজ্যে গাড়ির সংঘর্ষ এবং কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায়ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। শৈত্যপ্রবাহ, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, তুষারপাত এবং হিমশীতল বৃষ্টিতে নিউ ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণাঞ্চলের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।
হিউস্টনে সন্দেহভাজন বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইডের গ্যাসক্রিয়ায় এক নারীর এবং গাড়িচাপায় আরেক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। প্রবীণ এবং গৃহহীন মানুষরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। শহরগুলোতে ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষা দিতে জরুরি ভিত্তিতে উষ্ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
হিউস্টনের এক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ।
এদিকে, রোববার পশ্চিম টেনেসিতে দশ বছরের এক শিশু বরফ ঢাকা পুকুরে পড়ে মারা যায় বলে দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মিনেসোটার তাপমাত্রা মাইনাস ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সাউথ ডাকোটার তাপমাত্রা মাইনাস ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে।
শিকাগোতে মঙ্গলবার দেড় ফুটের মতো বরফ জমে যাওয়ায় স্কুলগুলোর ক্লাস বাতিল করা হয়। বারবার বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় টেক্সাসের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ঘরবাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকলেও হিউস্টনের উপকণ্ঠে অফিসগুলোতে অবশ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ অটুট রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎহীন অবস্থার সমালোচনার মুখে নগরীর শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, 'ইতিহাস মনে রাখবে কে তার অংশের কাজ করেছে আর কে করেনি।' তিনি অভিযোগ করেন, বাড়ি নির্মাণের সময় বেশিরভাগ বাড়িতেই তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে, প্রায় ১০০টির মতো বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিমান ভ্রমণও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠাণ্ডার তীব্রতায়। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৭০০'র বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে; যার মধ্যে ডালাস ফোর্ট ওয়ার্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ৮০০টির বেশি এবং হিউস্টনের বুশ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ৭০০'র মতো ফ্লাইট বাতিল করা হয়।
হিমাঙ্কের নিচে টেক্সাস
টেক্সাসে এবার ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়েছে। ২০ লাখের বেশি মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন এখানে। ঘর-বাড়িগুলো প্রবল শীতে উত্তাপ ধরে রাখতে না পারায় সরবরাহ লাইন বরফ হয়ে ফেটে যাচ্ছে। ফলে পানি পাচ্ছেন না অনেকেই।
টেক্সাসের পরিস্থিতি সামাল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য পৌঁছে দিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। যে সময় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়, তখন টেক্সাসের বিভিন্ন এলাকার তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের ২ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা আবার চালু করতে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা কাজ করছেন।
তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ওপরে না ওঠা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিসগুলো।
- সূত্র: বিবিসি