'দোকানদার' পরিচয়ে গুয়ানতানামো কারাগার থেকে মুক্তি পান তালেবান কমান্ডার গোলাম রুহানি
আফগানিস্তানের কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্যালেস দখলের পর রোববার তালেবানের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘ সময় কিউবার কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি থাকার দাবী করেন একজন তালেবান কমান্ডার। বিজয় ভাষণে মার্কিনিদের আক্রমণ করে বক্তব্য দেওয়া ওই কমান্ডারের পরিচয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল।
গুয়েনতানামো বে'র সাবেক বন্দি ওই তালেবান কমান্ডারের নাম গোলাম রুহানি। বিশেষজ্ঞরা তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন বলে জানায় সংবাদ মাধ্যমটি। এছাড়া, রুহানির বন্দি অবস্থার তথ্য সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্রও প্রকাশ করেছে তারা।
গোলাম রুহানি দীর্ঘদিন তালেবানের গোয়েন্দা শাখা বিভাগের এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। তালেবানের কুখ্যাত এই ইন্টেলিজেন্সের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রয়েছে তার পারিবারিক সম্পর্ক।
আল-জাজিরার কাছে রোববার রুহানি জানান, তিনি সাত বছর যাবৎ আমেরিকার গুয়েনতানামো বে কারাগারে আটক ছিলেন। প্রায় দুই দশক আগে বিশ্বের সবথেকে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের বন্দি রাখতে গুয়ানতানামো বে কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়।
ডেইলি মেইলের হাতে আসা স্টেট ডিপার্টমেন্টের নথি থেকে রুহানির বন্দি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আসামী নাম্বার-৩ হিসেবে আটক থাকা রুহানি গুয়ানতানামোর প্রথম দিককার বন্দিদের একজন ছিলেন।
তবে, রেকর্ড অনুযায়ী সেখানে তিনি ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর অতিবাহিত করেন।
নথি থেকে আরও জানা যায় যে, রুহানি প্রশাসনিক পর্যালোচনা বোর্ডের কাছে নিজেকে 'সাধারণ দোকানদার' হিসেবে দাবি করেন। তিনি আরও বলেন যে, তিনি 'আমেরিকানদের সাহায্য' করেছিলেন। এর ভিত্তিতে তাকে মুক্তি দেয় প্রশাসনিক পর্ষদ।
মাঝারি নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে চিহ্নিত থাকা সত্ত্বেও ২০০৭ সালের মার্চের ডকুমেন্ট অনুসারে রুহানি দাবি করেন যে, তিনি ৯/১১ এর আগে কখনোই আল-কায়েদার নাম শুনেননি। এছাড়া, স্রেফ 'বেঁচে থাকার তাগিদে' তালেবানে যোগ দেওয়ার দাবিও করেন তিনি।
রুহানি বলেছিলেন, আফগানিস্তানে ফিরে গিয়ে অসুস্থ বাবার সেবা করা এবং কাবুলে পারিবারিক দোকান পরিচালনা করাই তার 'একমাত্র ইচ্ছা'।
গোলাম রুহানির গুয়েনতানামোর ফাইল অনুসারে, ১৯৭৫ সালে তার জন্ম। দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানের গজনীতে বেড়ে ওঠা রুহানিকে আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধ থেকে বাঁচাতে তার বাবা-মা ইরানে পাঠিয়ে দেন।
১৯৯২ সালে তিনি দেশে ফিরেন এবং চার বছর পর শহর তালেবানের দখলে যাওয়ার আগ অবধি বাবার ব্যবসার কাজে সহায়তা করেন।
মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা, যুদ্ধ অভিযান এড়াতেই রুহানি প্রাথমিক ভাবে তালেবানের গোয়েন্দা শাখা বিভাগে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কাবুলের রাস্তায় নজরদারি বিষয়ক নিরাপত্তা রক্ষার অংশ ছিলেন।
গোলাম রুহানি চার বছর সক্রিয়ভাবে সেখানে কাজ করেন। পিস্তল সহকারে 'অপরাধে'র তদন্ত করতেন তিনি। ২০০১ সালে ভগ্নিপতি ও তালেবান ইন্টেলিজেন্সের সাবেক ডেপুটি মিনিস্টার আবদুল হক ওয়াসিকের সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা ও ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়া 'মোল্লা ওমরের অবস্থান চিহ্নিত করতে' তারা দুজন মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।
- সূত্র: ডেইলি মেইল