বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী তিন দেশের সংখ্যালঘু শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য অনলাইনে আবেদনের আহ্বান
বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের আগে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ভারতে আগত ছয়টি সম্প্রদায়ের অ-মুসলিম শরণার্থীরা ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য অনলাইন আবেদনের উপযুক্ত। দেশের যেকোন প্রান্ত থেকেই তারা এ আবেদন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ভারতের একজন সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তা। খবর দ্য হিন্দুর।
মার্চে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, কেন্দ্র সরকার আসামসহ সকল রাজ্যকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অ-মুসলিম সংখ্যালঘু- যথা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একমাত্র অনলাইনে এই আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে। আবেদন খতিয়ে দেখবেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জেলা কালেক্টর বা স্বরাষ্ট্রসচিব। এরপর, তারা কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠাবে। কেন্দ্র সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), ২০১৯ অনুযায়ীও বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নিপীড়িত অ-মুসলিম সংখ্যালঘু যথা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টান- যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে গেছেন, তাদের সেদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
তবে ২০১৯ সালে আইনে পরিণত হলেও, এখনও পর্যন্ত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)- সংক্রান্ত নিয়ম প্রণয়ন করেনি কেন্দ্র সরকার।
সে কর্মকর্তা আরও বলেন, "একটি নিরীক্ষা অনুসারে জানা গেছে যে আরও ১৩টি জেলায় প্রচুর অভিবাসী রয়েছেন। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের আলোকে এসব অভিবাসীকে নাগরিকত্ব অর্জনে সহায়তা করার জন্য কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যগুলোকে অবগত করা হয়েছে"।
অন্যদিকে আসামই একমাত্র রাজ্য যেখানে একটি জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) প্রবর্তন করা হয়। রাজ্যের ৩.২৯ কোটি আবেদনকারীর মধ্যে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ ওই নাগরিক নিবন্ধনের চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েন। বিপুল সংখ্যক হিন্দু নাগরিক বাদ পড়েছেন উল্লেখ করে পুনরায় এ প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার দাবি করে রাজ্য সরকার। তালিকায় অবৈধ অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করার সময় বেশ কিছু বৈধ নাগরিককে বাদ দেয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট
গত ২৮শে মে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুজরাট, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের আরও ১৩ টি জেলা কালেক্টরকে নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ এর ধারা ৫ (রেজিস্ট্রেশন) এবং ধারা ৬ (প্রাকৃতিকীকরণ) এর আওতায় ৬টি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
নাগরিকত্ব প্রদান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত হলেও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে রাজ্যগুলোতে কেন্দ্র সরকার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে।
যদিও ঠিক কতজন অভিবাসী নাগরিকত্ব গ্রহণের আবেদন জানাবেন, তার কোন সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা নেই এখনও, তবে কর্মকর্তারা এই সংখ্যা প্রায় দুই লাখ বলে অনুমান করেছেন।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির আহবান করে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ৩১,৩১৩ জনকে তখন দীর্ঘকালীন ভারতের ভিসা প্রদান করা হয়। ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদেরই মূলত ভিসা দেয়া হয়। সাধারণত এ ভিসার মেয়াদ পাঁচ বছর এবং এটি নাগরিকত্ব গ্রহণের পূর্ব অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
২০১১ সালে, কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ জোট সরকার পাকিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এমন দাবি করা এবং ভারতে আগত শত শত হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষকে দীর্ঘমেয়াদে ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এদের অনেকেই তীর্থযাত্রার ভিসায় ভারতে আসে এবং তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও দেশটিতে থেকে যায়।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৪,৭২৬ জন পাকিস্তানি হিন্দুকে দীর্ঘকালীন ভিসা প্রদান করা হয়।
২০১৫ সালে কেন্দ্র ঘোষণা করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত নাগরিকেরা ভারতের 'পাসপোর্ট আইন' ও 'ফরেনার আইন' এর আইনি ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে। তারা যদি ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার অথবা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকারের ভীতিজনিত কারণে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে থাকে, তবে ভারতে আশ্রয় পাবে এবং দীর্ঘকালীন ভিসা প্রাপ্তির উপযুক্ত হিসেবেও বিবেচিত হবে।