‘যুদ্ধ বদলে গেছে’: ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে নতুন ব্যবস্থার আহ্বান সিডিসি’র
উচ্চ মাত্রায় সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ধারাটা এবার বদলে গেছে বলে মন্তব্য করেছে ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিন নেওয়া এবং বিশ্বজুড়ে সর্বত্র মাস্ক পরিধানের নিয়ম ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে তারা।
সিডিসি'র এক অভ্যন্তরীণ ডকুমেন্টে বলা হয়, প্রথমে ভারতে শনাক্ত হওয়া এই ভ্যারিয়ান্ট এখন সারা বিশ্বে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে চিকেনপক্সের সমান সংক্রামক এবং সাধারণ সর্দি-কাশি বা ফ্লু'র চাইতে অত্যাধিক সংক্রামক বলে আখ্যা দিয়েছে সিডিসি। এমনকি ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন এমন কারও শরীরেও এটি আক্রমণ করতে সক্ষম।
আগের কোভিড স্ট্রেইনের চাইতে এটি আরও গুরুতর রোগ সৃষ্টি করবে বলেই তাদের বিশ্বাস।
'ইমপ্রুভিং কমিউনিকেশনস অ্যারাউন্ড ভ্যাকসিন ব্রেকথ্রু অ্যান্ড ভ্যাকসিন ইফেক্টিভনেস' শীর্ষক শিরোনামের এই ডকুমেন্টে বলা হয়েছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য নতুন এক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সবাইকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে, টিকা না নেওয়া মানুষেরা টিকা নেওয়াদের চাইতে ১০ গুণ বেশি অসুস্থতা আর মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন।
'আপনাকে মানতেই হবে, যুদ্ধটা এখন বদলে গেছে,' উল্লেখ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের বাধ্যতামূলক টিকা গ্রহণ এবং বিশ্বজুড়ে সব জায়গায় মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করেছে সিডিসি।
ডকুমেন্টটি নিয়ে প্রথম রিপোর্ট করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। এরই মধ্যে রিপোর্টের সত্যতা নিশ্চিত করেছে সিডিসি।
সিডিসি প্রধান রচেল ওয়ালেনস্কি এক বিবৃতিতে বলেন, 'অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চাইতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আলাদা। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও যারা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবেন, তারা অন্য মানুষের মধ্যেও এই ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম।'
শুক্রবার ম্যাসাচুসেটসে করোনা আক্রান্ত নাগরিকদের নিয়ে একটি ডেটা প্রকাশ করেছে সিডিসি। সেখানে বলা হয়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের চার ভাগের তিন ভাগই পূর্ণাঙ্গ টিকা নিয়েছিলেন।
ম্যাসাচুসেটসের এই গবেষণাই সিডিসিকে আবারও এই সিদ্ধান্তে আসতে সাহায্য করেছে, টিকা নেওয়া মানুষদেরও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে মাস্ক পরতে হবে।
সিডিসি জানায়, ২৬ জুলাই পর্যন্ত এমন ৬,৫৮৭ জন মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অথবা মারা গেছেন, যারা কি না পূর্ণাঙ্গ টিকা নিয়েছিলেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সপ্তাহে ৩৫,০০০ মানুষ করোনার উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বিশ্বের যেসব অঞ্চলে এখনো একটি বড়সংখ্যক মানুষ ভ্যাকসিন পাননি বা নেননি, সেখানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আঘাতে আবারও মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের অসংখ্য দেশ তাদের দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে। 'এতদিন এত কষ্ট করে অর্জিত সফলতা আবারও বিপর্যয়ের মুখে' বলে মন্তব্য করেছেন গেব্রেয়াসুস।
এমনকি ধনি দেশগুলো যেখানে প্রাথমিক পর্যায়েই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছিল, সেসব দেশেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আবার বেড়ে গেছে। টিকা নেওয়ার ফলে মৃত্যুহার কিছুটা কমানো গেলেও জনসংখ্যার একটি বড় অংশ, বিশেষ করে যারা টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তারা এখনো ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই বরং এই সমস্যাটি প্রকট, যেখানে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছে। ট্রাম্পই আমেরিকার একমাত্র জীবিত সাবেক প্রেসিডেন্ট, যিনি কোনো টিকাদান ক্যাম্পেইনকে উৎসাহিত করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের মোট প্রাপ্তবয়স্কদের এক-তৃতীয়াংশ এখনো ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেননি।
বিধিনিষেধ জোরদার করেছে এশীয় দেশগুলো
২০২০ সালে পশ্চিমা দেশগুলো যখন করোনার প্রচণ্ড আঘাতে জর্জরিত ছিল, এশিয়ার দেশগুলো তখন সেই পরিস্থিতি এড়াতে পেরেছিল। বিশেষত, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলো ব্যাপক করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে। শুক্রবার বেশকিছু দেশ নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করেছে। সোমবার থেকে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শহর সিডনিতে কোভিড পজিটিভ মানুষেরা আইসোলেশন মানছেন কি না তা তদারকি করতে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামবেন।
ফিলিপাইনও তাদের রাজধানী ম্যানিলা অঞ্চলে দুই সপ্তাহের লকডাউন জারি করার ঘোষণা দিয়েছে। ফিলিপাইনের ১৩ মিলিয়ন মানুষের বাস ম্যানিলাতে।
অন্যদিকে, জাপানে কোভিড সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শুরু থেকেই জৌলুস হারিয়েছে টোকিও অলিম্পিক। আগস্টের শেষাবধি টোকিও তিনটি অঞ্চলে এবং ওসাকার পশ্চিমাঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান সরকার।
সংক্রমণ এখনো চরম পর্যায়ে যায়নি বলে সতর্ক করে জাপানের অর্থমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা বলেন, 'সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এখানকার পরিস্থিতি সত্যিই খুব খারাপ।'
-
সূত্র: রয়টার্স