ন্যাটোর ভূমিকায় ক্ষুদ্ধ কিয়েভ বলছে জোটটির ভীতু আচরণের জন্য ইউক্রেনীয়দের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে
রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিচ্ছে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতি হোক এটাই তাদের লক্ষ্য। আবার সরাসরি লড়ছে ইউক্রেনীয়রা, তাদের প্রাণের বিনিময়েই রাশিয়াকে অপদস্থ করতে চায় আমেরিকা ও তার ইউরোপিয় মিত্ররা। আর নিজেরা দেখছে নিরাপদ দূরত্ব থেকে। খোদ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি সম্প্রতি ন্যাটোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে যা বলেছেন, তা এই বাস্তবতাকেই যেন ইঙ্গিত দেয়।
জেলেনস্কি কিছুদিন ধরেই রুশ বিমান হামলা থেকে রক্ষায় ইউক্রেনে একটি 'নো ফ্লাই জোন' প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান ন্যাটোর প্রতি। উড্ডয়ন নিষিদ্ধ অঞ্চল যে পক্ষ প্রতিষ্ঠা করে তারা সেখানে অন্য পক্ষের বিমানের প্রবেশ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়। অর্থাৎ, ন্যাটো জোনটি প্রতিষ্ঠা করলে তাদেরকে রাশিয়ার বিমান লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে হবে, যা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা। একথা উল্লেখ করেই শনিবার (৫ মার্চ) জেলেনস্কির অনুরোধ নাকচ করেছে ন্যাটো।
এতে ক্ষুদ্ধ জেলেনস্কি বলেছেন, "ন্যাটো জেনেশুনেই ইউক্রেনের আকাশে উড্ডয়ন নিষিদ্ধ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের অজুহাত এতে ন্যাটোর ওপরও রুশ আগ্রাসন হবে। আপনাদের এই সিদ্ধান্তের কারণে এখন আমাদের দেশের মানুষকে মরতে হবে।"
সেখানেই থামেননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি সামরিক জোটটির কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহায়তার অভাব নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ন্যাটো এপর্যন্ত ইউকেনের জন্য সামান্য কিছু জ্বালানি সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে।
ইউক্রেন ন্যাটোর স্বীকৃত বিশেষ অংশীদার হলেও ন্যাটো কিয়েভকে বারবার সতর্ক করে দিচ্ছে, তারা ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়াবে না।
ন্যাটোর এই দর্শক ভূমিকার নিন্দা ছিল জেলেনস্কির কথার সুরে। তিনি বলেন, "এই জোট এপর্যন্ত যা করেছে তা হলো- নিজেদের বিশেষ ক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউক্রেনের জন্য ৫০ টন জ্বালানি পাঠিয়েছে।
এসময় তিনি পরমাণু অস্ত্র বর্জনের চুক্তি আর মেনে না চলার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও দেন।
"আমাদের এখন বুদাপেস্ট চুক্তি পুড়িয়ে ফেলা উচিত। সেটি ভালো করে পোড়াতে রুশ সেনারাই এগিয়ে আসছে।"
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে স্বাক্ষরিত বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম শীর্ষক চুক্তির অধীনে নিজেদের সকল পরমাণু অস্ত্র নিস্ক্রিয় করে বা রাশিয়াকে দিয়ে দেয় কিয়েভ। এসব অস্ত্র তারা পেয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেভাও ন্যাটোর সমালোচনা করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, চলমান সহিংসতা ন্যাটোর দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।
ইউক্রেনের ওয়ান প্লাস ওয়ান টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, "যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের মানুষ ভাবতো ন্যাটোই শক্তিশালী, অন্যদিকে ইউরোপিয় ইউনিয়ন দুর্বল ও ঐক্যমত্যের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনবাসী দেখছে, এর উল্টোটাই সত্য।"
দেশটির শীর্ষতম এ কূটনীতিক আরও দাবি করেন, "ইইউ আমাদের প্রার্থীর মর্যাদা দিয়েছে, দিয়েছে সদস্যপদের আশার আলো। অন্যদিকে, ন্যাটো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।"
প্রকৃতপক্ষে অবশ্য ইইউ ইউক্রেনকে সম্ভাব্য প্রার্থীর মর্যাদাও দেয়নি। এটি অর্জন করতে হলে দেশটিকে অনেক ধরনের সংস্কার ও শর্তপূরণ করতে হবে। তবে ইইউ পার্লামেন্ট কিয়েভের সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে একটি প্রতীকী প্রস্তাব পাস করেছে।
- সূত্র: আরটি