আজভস্তালের সেই আজভ বাহিনীর ১ হাজার সৈন্যের আত্মসমর্পণ, রাশিয়ার ভিডিও প্রকাশ
দীর্ঘদিন প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে রুশ বাহিনীর কাছে হার মেনেছে ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোলের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় অবস্থানরত ইউক্রেনীয় সৈন্যরা। রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণও শুরু করেছে তারা।
বুধবার সকালে ব্রিফিংয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এই সপ্তাহে মারিউপোলের ইস্পাত কারখানাটিতে অবরুদ্ধ মোট ৯৫৯ জন ইউক্রেনীয় সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে। কিয়েভ আশা করছে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে এই ইউক্রেনীয় সৈন্যদের উদ্ধার করা যাবে। তবে ইউক্রেনীয় সেনাদের বিচারের আওতায় আনার সুযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন রুশ প্রসিকিউটররা।
রাশিয়ার সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বন্দির সংখ্যা ৬৯৪ জন বেড়েছে। তাদের মধ্যে ৫১ জনকে রুশ-সমর্থিত দোনেৎস্ক প্রজাতন্ত্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এতদিন গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী মারিউপোলের একমাত্র আজভস্তাল ইস্পাত কারখানার ১১ বর্গকিলোমিটার এলাকাই ইউক্রেনীয় সেনাদের দখল ছিল। তাদেরকে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল রুশ সেনারা।
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আজভস্তালের সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
বুধবার ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আত্মসমর্পণের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে দেখা যায়, নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় সেনারা আজভস্তাল ছাড়ছে। বাসে বা অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার আগে রুশ সেনারা তাদের তল্লাশি করছে।
বন্দিদের বহন করা যানগুলোকে পাহারা দিচ্ছে সামরিক যান। জানা গেছে, ইউক্রেনীয় সেনাদের দোনেৎস্ক প্রজাতন্ত্রের হেফাজতে রাখা হবে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রুশ যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে বন্দি ইউক্রেনীয়দের বিনিময় করা হবে বলে আশা করছেন তারা। তবে বন্দি ইউক্রেনীয়দের মধ্যে অনেকেই চরম জাতীয়তাবাদী আজভ ব্যাটালিয়নের যোদ্ধা, যাদের বিরুদ্ধে রাশিয়া বেশ কয়েক ধরনের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে।
মঙ্গলবার রুশ পার্লামেন্টে একটি খসড়া আইন জমা দেওয়া হয়। সেই আইনে আজভ ব্যাটালিয়নকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই আইন পাস হলে আজভ ব্যাটালিয়নের সদস্যদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আইনি পথ খুলে যাবে। উল্লেখ্য, এই রেজিমেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের অংশ।
রুশ সেনাদের হাতে যখন আজভস্তালের পতন হয়েছে, তখনই (১৮ মে) ন্যাটোতে যোগদানের জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন।
বুধবার ব্রাসেলসে একটি অনলাইন ভিডিও অনুষ্ঠানে সুইডিশ ও ফিনিশ রাষ্ট্রদূতরা আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের কাছে আবেদনপত্র জমা দেন। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় স্টলটেনবার্গ বলেন, এই পদক্ষেপটি ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য একটি 'ঐতিহাসিক পদক্ষেপ'।
সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিলে চলমান যুদ্ধ আরও খারাপ মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা অনেক বিশেষজ্ঞের। কেননা রাশিয়া বহুদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে যে ইউক্রেনসহ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন যেন কখনও ন্যাটোতে যোগ না দেয়।
যদিও সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে হুমকি হিসেবে দেখছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটটি দেশগুলোতে সামরিক অবকাঠামো বাড়ানোর চেষ্টা যাতে না করে সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।
- সূত্র: সিএনএন ও আরটি