অজিদের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে দিয়ে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
এমন দোর্দন্ড প্রতাপে জেতার পর চতুর্থ টি-টোয়েন্টি নিয়ে আক্ষেপ হতেই পারে বাংলাদেশের। প্রথম তিন টি-টোয়েন্টি দিয়ে সিরিজ জয়, আর সিরিজের শেষ ও পঞ্চম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে কম রানে অলআউট করে বিজয় কেতন ওড়ানো। কেবল চতুর্থ টি-টোয়েন্টি হারই এই সিরিজে বাংলাদেশের জন্য একমাত্র হতাশা। ওই ম্যাচটি না হারলে প্রথমবারের মতো অজিদের বিপক্ষে মিলতো হোয়াইটওয়াশের সাফল্য।
শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ফেলে অসাধারণ এক জয় তুলে নেওয়ার পর অবশ্য সব আক্ষেপই ঘুচে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের। এই সিরিজের আগে যাদের বিপক্ষে চার ম্যাচের সবকটিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ, তাদের বিপক্ষেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল সিরিজ জিতলো ৪-১ ব্যবধানে।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে সোমবার অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়। প্রথমে ব্যাটিং করে ১২২ রানের পুঁজি গড়া বাংলাদেশ অজিদের ৬২ রানেই অলআউট করে দেয়। টি-টোয়েন্টিতে এটাই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন স্কোর। তাদের আগের সর্বনিম্ন স্কোর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০০৫ সালে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের দ্বিতীয় ম্যাচে সাউদাম্পটনে ৭৯ রানে অলআউট হয়েছিল রিকি পন্টিংয়ের দল।
দাপুটে জয়ে সিরিজ শেষ করার ম্যাচে ভুবন ভুলানো বোলিং করেছেন ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতা সাকিব আল হাসান। ৪ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইন আপ ছত্রখান করে দেন তিনি। এই ৪ উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট পূর্ণ করলেন সাকিব। এতে অনন্য এক রেকর্ডের মালিক হয়েছেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে ১০০ উইকেট ও ১ হাজার রানের মাইলফলক গড়লেন তিনি।
লক্ষ্য বড় ছিল না। কিন্তু জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি সফরকারীরা। দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন ছোবল বসান নাসুম আহমেদ। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা ড্যান ক্রিশ্চিয়ানকে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের বাঁহাতি এই স্পিনার। দারুণ ছন্দে থাকা মিচেল মার্শকেও এদিন উইকেটে দাঁড়াতে দেননি নাসুম। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে মার্শকে ফেরান তিনি।
১৭ রানেই দুই উইকেট হারানো দলকে ঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা অজি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। তার সঙ্গে যোগ দেওয়া বেন ম্যাকডারমটও সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকেন। কিন্তু বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেননি কেউ-ই। ৪৮ রানের মধ্যে ফেরেন ওয়েড ও ম্যাকডারমট।
২২ রান করা ওয়েডকে সাকিব আল হাসান এবং ১৭ রান ম্যাকডারমটকে ফেরান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। সামান্যতেই গুটিয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে এই দুজন কেবল দুই অঙ্কের রান করেছেন। এরপর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সাকিবদের বোলিং তোপে বাকি অজি ব্যাটসম্যানরা উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন। ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন সাকিব। ৩ ওভারে ১২ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। এ ছাড়া নাসুম ২টি ও মাহমুদউল্লাহ একটি উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন আনার সুফল পেয়েছিল। সৌম্য সরকারকে সরিয়ে নাঈম শেখের সঙ্গে পাঠানো হয় মাহেদী হাসানকে। তাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথমবারের মতো দাপুটে শুরু পায় বাংলাদেশ। দারুণ শুরুর পর মনে হচ্ছিল বড় সংগ্রহের পথেই হাঁটছে ঘরের মাঠের দলটি। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমন হয়নি। আবারও সেই ব্যাটিং ব্যর্থতা।
বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন নাঈম ও মাহেদী। উদ্বোধনী জুটিতে এই দুই ব্যাটসম্যান ৪২ রান যোগ করেন, এই রান তুলতে তাদের খরচা ৪.৩ ওভার। দারুণ শুরুর ভালো লাগা অবশ্য বেশি সময় টেকেনি। দলীয় ৪২ রানে থামেন মাহেদী। অজি স্পিনার অ্যাশটন টার্নারের ডেলিভারিটি বুঝতে না পেরে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ১৩ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
নাঈম ও সাকিব আল হাসান মিলে দলকে ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা করেন। যদিও তাদের জুটি দীর্ঘ হয়নি। দলীয় ৫৭ রানে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ২৩ বলে একটি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করা নাঈম। এরপর সাকিবও পারেননি দলের হয়ে ব্যাট চালাতে। আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও রান তুলতে হিমশিম খেতে হয় বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারকে। ১১ রান করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।
উদ্বোধনী থেকে চারে নামিয়ে দেওয়া সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চাপ সামলে নেওয়ার চেষ্টায় মন লাগান। তারাও পারেননি জুটি বড় করতে। চতুর্থ উইকেটে ২৪ রান যোগ করেন তারা। এ সময় বিদায় নেন ১৪ বলে একটি ছক্কায় ১৯ রান করা মাহমুদউল্লাহ।
দেখেশুনে খেলতে থাকা সৌম্য ১৮ বলে একটি চার ও একটি ছক্কায় ১৬ রান করে ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের শিকারে পরিণত হন। এরপর উইকেটে কঠিন সময় কাটানো নুরুল হাসান সোহান ৮ রান করে বিদায় নেন। আফিফ হোসেন ধ্রুব করেন ১০ রান। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৮ বলে ৪ রান করেন। শেষের ৫ ওভারে মাত্র ২০ রান তোলে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন টি-টোয়েন্টি অভিষেক হ্যাটট্রিক করে বিশ্ব রেকর্ড করা নাথান এলিস। ডানহাতি এই অজি পেসার ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচা করেন, উইকেট নেন ২টি। অলরাউন্ডার ড্যান ক্রিশ্চিয়ানও দারুণ ছিলেন, ৪ ওভারে ১৬ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নেন তিন স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগার, অ্যাশটন টার্নার ও অ্যাডাম জ্যাম্পা।