আকবর-রুমানাদের জন্য মনোবিদ
করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে আছে ক্রীড়াঙ্গন। গত মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ আছে। ঘরবন্দি হয়ে থাকা ছাড়া পথ খোলা নেই। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে ফিটনেস নিয়ে কাজ চালিয়ে না গেলেও বিপদ। ক্রিকেটাররা তাই বিসিবির নির্দেশনা ছাড়াও নিজের মতো করে ফিটনেসসহ অন্যান্য অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
যদিও এতে মানসিক প্রশান্তি মিলছে না। কারণ সারা বছর মাঠে কাটানো ক্রিকেটাররা মাঠের মুখই দেখেন না গত চার মাস ধরে। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ারও লক্ষণ নেই। সব ক্রিকেটারের মুখে একটাই প্রশ্ন, কবে মাঠে ফিরবে ক্রিকেট। কিন্তু আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর নেই।
ক্রিকেট কবে মাঠে ফিরবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই ব্যাপারটি রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ক্রিকেটারদের। বিশেষ করে তরুণ ক্রিকেটার ও নারী দলের অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এসব ক্রিকেটারের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মনোবিদের দ্বারস্থ হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
আপাতত অনূর্ধ্ব-১৯ ও নারী দলের ক্রিকেটারদের জন্য এই ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে বিসিবি। এই দুটি দলের পাঁচটি করে ভার্চ্যুয়াল সেশন করার পরিকল্পনা সাজিয়েছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এ জন্য ইতোমধ্যে কানাডাপ্রবাসী মনোবিদ আলী খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী।
আলী খান অনমুতি দিলে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি অনূর্ধ্ব-১৯ ও নারী দলের সাপোর্টিং স্টাফদেরও এই কার্যক্রমে যুক্ত করা হবে। সব মিলিয়ে ৫০ জনকে নিয়ে আগামী শনিবার থেকে ভার্চ্যুয়াল এই সেশন শুরু হতে পারে। এই কার্যক্রম সফল হলে হাই পারফরম্যান্স ইউনিট (এইচপি) ও জাতীয় দলকেও এর আওতায় আনা হবে বলে জানান দেবাশীষ চৌধুরী।
এ বিষয়ে শনিবার বৈঠকের পর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দোবশীষ চৌধুরী বলেন, 'মেন্টাল কোচ কথা বলবেন আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ ও জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে। মেন্টাল কোচের ক্লাসে সাপোর্টিং স্টাফরাও থাকবেন। যেহেতু সবকিছুর আলাদা বিভাগ আছে, বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি লাগে। এ কারণে আমরা অপেক্ষা করছিলাম। আজকের মিটিংয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী বলেছেন, উনারা অনুমতি দিয়েছেন, আপনি এগোতে পারেন।'
'এখন আমি আলী খানের সঙ্গে কথা বলব। কিছু কথা হয়ে গেছে আমার সঙ্গে। এখন লজিস্টিক অর্থাৎ কখন, কোন সময়, কতজনকে নিয়ে ক্লাস হবে, এসব নিয়ে আলোচনা হবে। এগুলো ঠিক করতে হয়তো আমাদের তিন-চারদিন সময় লাগবে। দিনটা ঠিক হবে উনার সঙ্গে কথা বলে। উনার সুবিধা মতো করা হবে। তবে আশা করছি আগামী সপ্তাহ বা শনিবার থেকে শুরু করতে পারব।'
আলী খানের অনুমতি মিললে প্রাথমিক ক্যাম্পে থাকা ক্রিকেটারদেরও এই কার্যক্রমে যুক্ত করা হবে। দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, 'অনূর্ধ্ব-১৯ ও নারী দলের সব ক্রিকেটার এর আওতায় থাকবে। প্রতিটি দলের স্ট্যান্ডবাই খেলোয়াড় ও সাপোর্টেং স্টাফসহ প্রায় ২৫ জনের মতো হয়ে যাবে। এ ছাড়া উনি অনুমতি দিলে আমরা আরও কিছু খেলোয়াড়কে যোগ করার চেষ্টা করব। যারা জাতীয় দলে বা স্ট্যান্ডবাইতে নেই কিন্তু প্রাথমিক ক্যাম্পে ছিল, তাদেরকে আমরা রাখতে চাই। ধরুন ৩০ জন ছিল প্রাথমিক ক্যাম্পে, উনি অনুমতি দিলে এদের সবাইকে যুক্ত করার চেষ্টা করব। দুটি দল মিলিয়ে ৫০ জন হবে বলে ধারণা করছি।'
সাপোর্টিং স্টাফদের যুক্ত করার কারণ এবং এইচপি ও জাতীয় দলকে এর আওতায় আনার বিষয়ে দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, 'খেলোয়াড়দের সঙ্গে সাপোর্টিং স্টাফদের যুক্ত করব। যেন তারাও এ সম্পর্কে ধারণা পায় এবং পরে কাউন্সিলিং করতে পারে। এরপর আমাদের পরিকল্পনা এইচপি, জাতীয় দলকে এটার আওতায় আনার। আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে পারলে এটার সফলতার ভিত্তিতে চিন্তা করতে পারব যে এইচপি বা জাতীয় দলকে এটার সঙ্গে যুক্ত করতে পারি কিনা।'
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে আলী খান নামটি বেশ পরিচিত। এই মনোবিদের কাছে অনেক ক্রিকেটারই ক্লাস করেছেন। কানাডাপ্রবাসী এই মনোবিদ এরআগে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন।
আলী খানকে নেওয়ার কারণ ব্যাখায় বিসিবির প্রধান চিকিৎসক বলেন, 'আলী খানকে নেওয়ার প্রধান কারণ উনি বাংলাদেশের। আমরা সবাই বাংলা ভাষাভাষি। এমন কাউকে আনতে পারব না যে বাংলা জানে না। বাংলা জানার পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতি বা ক্রিকেট ব্যাকগ্রাউন্ড বোঝাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আলী খান হলে এসব পরিপূর্ণ হয়। উনি পেশাদার হেলথ ট্রেনার। উনি আমাদের জাতীয় দলের সঙ্গে কাজও করেছন। উনি আমাদের সংস্কৃতিটাও বোঝেন।'
কবে মাঠে ফিরবে ক্রিকেট! এ নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন ক্রিকেটাররা। এ কারণে মনোবিদ নিয়োগ দেওয়ায়ই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেছে বিসিবি।
দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, 'আমরা চিন্তা করছিলাম মেন্টাল ট্রেনার আনব নাকি স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট আনব। আলোচনার পর আমরা ঠিক করেছি, এই মুহূর্তে আমাদের মেন্টাল ট্রেনার বেশি জরুরী। কারণ এখন যে সমস্যাটা খেলোয়াড়রা মোকাবিলা করছে সেটা খেলা বিষয়ক। এটা অনিশ্চয়তা বিষয়ক সমস্যা। এ কারণে আমাদের মনে হচ্ছে মেন্টাল ট্রেনার ভালোভাবে সাহায্য করতে পারবেন।'