দাপট দেখিয়ে জয়ে ফিরল বাংলাদেশ
চেনা পথটাই দুর্গম হয়ে উঠেছিল। যে পথে বাঘা বাঘা প্রতিপক্ষকেও নাকানি-চোবানি খাইয়ে ছেড়েছে বাংলাদেশ, সেই পথেই হামাগুড়ি দিচ্ছিল। প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতেও শেষ পাঁচ ম্যাচে হেরে দিকহারা হয়ে পড়েছিল মাশরাফিবাহিনী!
অবশেষে স্বস্তি ফিরল। জিম্বাবুয়েকে ১৬৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সাত মাস পর ওয়ানডেতে জয়ের স্বাদ নিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়। এর আগে সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল ১৬৩ রানের। ২০১৮ সালে ঘরের মাঠের সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ম্যাচসেরা লিটন দাসের সেঞ্চুরি ও বাকি ব্যাটসম্যানদের মাঝারি কয়েকটি ইনিংসে ৩২১ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। যা ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ১২৬ রান করার পর চোট পেয়ে লিটন মাঠ না ছাড়লে বাংলাদেশের সংগ্রহ আরও হতে পারত।
জবাবে বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে সামান্যতম লড়াইটুকুও করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ধারায় উইকেট হারানো সফরকারীদের ইনিংস ৩৯.১ ওভারে ১৫২ রানেই থেমে যায়।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে জিম্বাবুয়ের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। দলীয় ১ রানেই ওপেনার কামুনহুকামুইকে ফিরিয়ে দেন বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ওয়ানডে একাদশে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। আসা যাওয়ার মিছিল এখান থেকেই শুরু।
৪৪ রানের মধ্যেই রেজিস চাকাভা, অধিনায়ক চামু চিবাবা, ব্রেন্ডন টেলরদের ফিরিয়ে দেন মাশরাফি, সাইফউদ্দিন, তাইজুলরা। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন অভিষিক্ত ওয়েসলি মাধেভেরে ও অভিজ্ঞ সিকান্দার রাজা। এই জুটিতে ৭৯ রানে পৌঁছায় জিম্বাবুয়ে। সিকান্দার রাজা ১৮ করে ফিরতেই আবারও শুরু হয় উইকেট বৃষ্টি।
ইনিংস সেরা ৩৫ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের শিকারে পরিণত হন প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা মাধেভেরে। বাকি ব্যাটসম্যানরা উইকেটে গিয়ে হারের ব্যবধান কমানোর কাজটি করেছেন।
সাইফউদ্দিন সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন। এ ছাড়া মাশরাফি ও মিরাজ দুটি করে উইকেট পান। এই দুই উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম ও ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন মাশরাফি।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ ছিল না। উদ্বোধনী জুটিতে ৬০ রান যোগ করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তামিম একটু বেশিই ঠাণ্ডা মেজাজে ছিলেন। তবে লিটন খেলতে থাকেন নিজের চেনা ছন্দে।
মূলত লিটনের ব্যাটেই বাংলাদেশের রানের চাকা ঘুরতে থাকে। তামিম ছিলেন অতি সাবধানি। খুব একটা সাবলীলও মনে হয়নি তাকে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ওপেনার ২৭ বল খেলে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান। এতটা সতর্ক থেকেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তামিম। ৪৩ বলে ২৪ রান করে বিদায় নেন তিনি।
নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে নতুন শুরু করেন লিটন। এই জুটি থেকে ১২০ রান পায় বাংলাদেশ। এর মাঝে ৪৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। শান্তও হাঁটছিলেন একই পথে। কিন্তু আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হয়ে ২৯ রানে ফিরতে হয় বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে।
আম্পায়ার আউট দিলেও টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ডেলিভারিটি স্টাম্পের বাইরে ছিল। রিভিউ না থাকায় মাঠ ছাড়তে হয় শান্তকে। মুশফিকুর রহিম সুবিধা করতে পারেননি। ১৯ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
মুশফিক উইকেটে থাকা অবস্থায়ই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে লিটন বল খরচা করেছেন ৯৫টি। চোখ জুড়িয়ে দেওয়া এই ইনিংসে ১০টি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। ৩৪ ওভারে বাংলাদেশ তখন ১৮২ রানে পৌঁছে গেছে। এ সময় নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেট যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এই জুটিতে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ-ই তাতে বাধা আসে। ব্যক্তিগত ১২৬ রানের সময় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন। ১২৬ রানের এই ইনিংসটিই লিটনের ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা। শেষের দিকে রান বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটি করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনরা।
মাহমুদউল্লাহ ৩২ রান করে আউট হলেও মিঠুন তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি। ৪১ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৫০ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। সাত মাস পর ওয়ানডে দলে ফেরা সাইফউদ্দিন ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। ১৫ বলে ৩টি ছক্কায় হার না মানা ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। জিম্বাবুয়ের ডানহাতি পেসার ক্রিস এমপফু সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন।