দুঃসময় ভুলিয়ে দেওয়া সেঞ্চুরিতে সাত হাজারি ক্লাবে তামিম
সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছিল না। রানের দেখা মিলছিল না। এর সঙ্গে আবার ধীর গতির ব্যাটিংয়ের কারণে একটার পর একটা সমালোচনার তীর এসে বিধছিল গায়ে। তামিম ইকবালের মাথায় চেপে বসেছিল পাহাড়সমান চাপ। সবখানে যখন তামিমের স্ট্রাইক রেট নিয়ে আলোচনা, বাংলাদেশের বাঁহাতি এই ওপেনার তখন বেরিয়ে এলেন খোলস ছেড়ে।
টানা ব্যর্থতাকে ছুটিতে পাঠিয়ে তামিম ইকবাল তুলে নিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি। এটি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বাধিক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানতে করা এই সেঞ্চুরিতে আরও একটি মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ওপেনার। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রান পূর্ণ হয়েছে তামিমের। ওয়ানডে ইতিহাসের ৪২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি।
বিশ্বকাপে বাজে সময় কাটিয়েছেন তামিম। শ্রীলঙ্কা সফরেও ভালো সময় যায়নি তার। লম্বা বিরতি থেকে ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে রানের দেখা পেলেও তামিমের স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। দুটি টেস্টেও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৪৩ বলে ২৪ রান করার পর তামিমকে রীতিমতো কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। ম্যাচের আগের দিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তামিম প্রসঙ্গেই বেশি কথা বলতে হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং পরামর্শক নিল ম্যাকেঞ্জিকে। এ সময় তামিমের ব্যাটিং ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
এর একদিন পরই ব্যাট হাতে সব সমালোচনার পথ বন্ধ করে দিলেন তামিম। ধীর গতির স্টাইল থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ ওপেনার খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস। যেখানে স্ট্রাইক রেটও থাকল পছন্দসই (৯৫.২৮)।
৪২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা তামিম একই ছন্দে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান। ১০৬ বলে ১৪টি চারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। হাজারও সমালোচনাই যেন তামিমকে উদযাপন করতে বারণ করেছিল। স্বস্তির এই সেঞ্চুরির পরও কেবল একবার ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৩৬ বলে ১৫৮ রান করে আউট হয়েছেন তামিম।
দুই বছর পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সেঞ্চুরি করেন তিনি। ১০৩ রানের সেই ইনিংসের পর ৫টি হাফ সেঞ্চুরি করলেও সেগুলোকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটিং ভরসা।
এই একটি ইনিংস দিয়ে অনেক সমালোচনার জবাব দিয়ে দিলেন তামিম। রানে ফিরলেন, সেটাও ওয়ানডের মতো স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেই। একশোর বেশি স্ট্রাইক রেটে তামিম তার সর্বশেষ সেঞ্চুরিটি করেন ২০১৬ সালে, হাফ সেঞ্চুরি করেন গত বছরের মে মাসে। এই ম্যাচে একশো না হলেও ৯০ এর বেশি (৯৫.২৮) স্ট্রাইক রেটে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
ব্যাট হাতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ রেকর্ড তামিম ইকবালেরই গড়া। টেস্টে সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান রানেও সবার আগে ছিলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করে তাকে ছাড়িয়ে গেছেন মুশফিকুর রহিম।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের (১ হাজার ৬৬০ রান) মালিক তামিম। সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তিনিই। এবার ওয়ানডেতে নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে গেলেন তামিম। ৫০ ওভারের এই ফরম্যাটে তামিমের রান এখন ৭ হাজার ১৭।
তামিমের সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।