মাঠের নিস্তব্ধতা ভেঙে সবুজ গালিচার বুকে ক্রিকেটাররা
আগের মতো সেই হই-হুল্লোড় পড়লো না। ক্রিকেটারদের পদচারণায় মিরপুর স্টেডিয়াম যেভাবে মুখরিত হয়ে ওঠে, সেটার দেখাও মিলল না। নেই গ্রাউন্সম্যানদের তাড়াহুড়ো। কিন্তু নিস্তব্ধতা যেভাবে গিলে নিয়েছিল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে, রোববার সকাল হতেই সেটা ছুটিতে। আবারও মিরপুরের সবুজ গালিজার বুকে ক্রিকেটারদের চলাফেরা, ব্যাটের খুটখাট আওয়াজ আর এক ঝাঁক ক্রীড়া সাংবাদিকের ঠিকানা হলো মিরপুর স্টেডিয়াম।
ক্রিকেটারের সংখ্যা বেশি না হলেও দিনটা তাদের মাঠে ফেরার। মিরপুর স্টেডিয়ামের নিস্তব্ধতা ভেঙে অতি চেনা দৃশ্যে ফিরিয়ে আনার। গত ১৬ মার্চের পর এদিন প্রথমবারের মতো ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড দেখা গেল মিরপুরে। ব্যক্তিগত অনুশীলন দিয়ে মাঠে ফিরলেন বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন ও শফিউল ইসলাম।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে মিরপুরে স্টেডিয়ামের মূল গেটে তালা ঝুলেছে। মাঝেমধ্যে খোলা হলেও মিরপুর স্টেডিয়াম সবার জন্য ছিল 'নো এন্ট্রি জোন।' করোনার বিস্তার রোধে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের মতোই মিরপুর স্টেডিয়ামে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অবশেষে অচলাবস্থার অবসান, মিরপুরে আবারও ক্রিকেটের আবহ।
রোববার সকালটা মুশফিকের জন্য নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম। এদিন ভোরে ঘুম ভেঙেই চিরচেনা মিরপুরের দিকে ছুটেছেন জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। যে গেট দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ঢুকে ম্যাচ বা অনুশীলনে অংশ নিয়েছেন মুশফিক, চার মাস পর একই কারণে সেই গেট দিয়ে ঢোকার অনুভূতি নিশ্চয়ই তার কাছে নতুন অভিজ্ঞতার মতো।
করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরুর দিকেই তামিম ইকবালের লাইভে মুশফিক বলেছিলেন, ব্যাটিং করতে না পেরে তার নতুন ব্যাটগুলো কাঁদছে। জুনের প্রথম দিকে তাই বিসিবি বরাবর ব্যক্তিগত অনুশীলনের জন্য আবেদনও করেন তিনি। প্রথম দফায় অনুমতি মেলেনি। পরে অনুমতি মিললেও করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে মাঠে যাওয়া হয়নি মুশফিকের।
তবুও বসে থাকার পাত্র নন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। নিজ বাসায় নিয়মিত ফিটনেস ট্রেনিং চালিয়ে আসা মুশফিক সুযোগ পেলেই বিসিবিকে তার মাঠে ফেরার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বারবার বলায় বিসিবির কেউ কেউ কিছুটা বিরক্তও হয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই মুশফিকের দল ভারী হয়েছে। তাই বিসিবিও আর আপত্তি রাখেনি। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ক্রিকেটারদের অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে বিসিবি।
রোববার থেকে শুরু হয়েছে ব্যক্তিগত অনুশীলন। ৯ জনের অনুশীলনের কথা থাকলেও সংখ্যাটা দশে দাঁড়িয়েছে। যোগ দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে প্রথমদিন দেশের তিনটি ভেন্যুতে ৮জন ক্রিকেটার ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত অনুশীলন করেছেন।
মুশফিক, মিঠুন, শফিউলদের মতো সিলেটে খালেদ আহমেদ, নাসুম আহমেদ, খুলনায় মেহেদী হাসান, নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদী হাসান মিরাজ অনুশীলন করেছেন। চট্টগ্রামে নাঈম হাসানের অনুশীলন করার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে করতে পারেননি। এ ছাড়া সূচিতে ইমরুলের অনুশীলন ছিল না।
মাঠে ফিরতে যে মুশফিকের তর সইছিল না, সেটা রোববারও বোঝা গেল। তার অনুশীলন শুরুর সময় ছিল সকাল ১০টা। কিন্তু অনুশীলনে সব সময়ই মনোযোগী মুশফিক সকাল আটটার মধ্যেই মিরপুরে এসে হাজির। সাড়ে আটটা থেকে ৯টা পর্যন্ত একাডেমি মাঠে রানিং করেন তিনি। এরপর ঘণ্টা খানেকের বিরতি দিয়ে ১০ থেকে ১১টা পর্যন্ত ইনডোরে ব্যাটিং করেন দেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান।
মুশফিকের আগেই ব্যাটিং অনুশীলন সেরে নেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৯ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ইনডোরের নেটে ব্যাটিং করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর একাডেমি মাঠে এসে ৩০ মিনিটের মতো রানিং করেন মিঠুন। দীর্ঘদিন পর মাঠে ফিরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন তিনি।
ব্যাটিং, রানিংয়ের পর মিঠুন বলেন, 'আমরা দীর্ঘ চার মাস পর মাঠে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছি। মাঠে ফিরে ভালো লাগছে। ব্যাটিং, রানিং, সবকিছুই একটু কঠিন মনে হচ্ছে। কারণ এতদিন আমরা সবকিছুই বাসায়, ইনডোরে করেছি। মাঠে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে আমরা সবকিছু আগের মতোই ফিরে পাবো।'
পেসার শফিউল ইসলাম মাঠে হাজির হন ১১টার দিকে। ১১টা ১৫ থেকে একাডেমি মাঠে রানিং শুরু করেন তিনি। ৩০ মিনিটের মতো রানিং করেই প্রথম দিনের অনুশীলন শেষ করেন তিনি। লকডাউনে বাসার সিড়িতেই দৌড়েছেন শফিউল। কিন্তু হাঁটু ব্যথা হয়ে যেতো বলে জানান তিনি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে শফিউল বলেন, 'করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইরে দৌড়ানোর সুযোগ ছিল না। কিন্তু ফিটনেস নিয়ে তো কাজ না করলেও নয়। তাই বাসার সিড়িতে কিছুদিন দৌড়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সিড়িতে দৌড়ালে হাঁটু ব্যথা হয়ে যেত। ভালোভাবে আজই প্রথম রানিং করলাম।'
সংখ্যায় কম হলেও চার মাস পরে মাঠে ফিরলেন ক্রিকেটাররা। তাতে অচলাবস্থা পুরোপুরি না ভাঙলেও ক্রিকেট আবহ ফিরেছে দেশের চারটি স্টেডিয়ামে। হয়তো এভাবেই অনুশীলনে ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়বে, শুরু হবে দলীয় অনুশীলনও। কিন্তু পুরোপুরি স্বাভাবিক গতিতে ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড কবে ফিরবে, সেই উত্তর এখনই মিলছে না।