স্পিনে জৌলুস হারানোর নেপথ্যে ‘শূন্যস্থান’
ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ বধের কৌশল আটতে একটা সময় স্পিন ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান অস্ত্র। দলের ক্রিকেটাররা পর্যন্ত অকপটে বলে যেতেন, ‘স্পিনই আমাদের প্রধান শক্তি।’ প্রতিপক্ষরাও স্পিন নিয়ে জেনেশুনে বাংলাদেশে আসত।
স্পিনে বাংলাদেশের প্রথম বড় শিকার নিউজিল্যান্ড। কিউইদের রীতিমতো হোয়াইটওয়াশ করে ছেড়েছিল বাংলাদেশ।
সাকিব-মিরাজদের এই স্পিনের শিকার দুই পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডও। ক্রিকেটের এই দুই মহীরুহ যে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি করে টেস্ট ম্যাচ হেরেছে, এর নেপথ্যে ছিল কেবলই স্পিন।
কিন্তু সেই পথে আর হাঁটা হচ্ছে না; জৌলুস হারিয়েছে বাংলাদেশের স্পিন। এই স্পিন দিয়ে এখন প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে পারে না বাংলাদেশ। কেন এমন হলো? উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র। তিনি বলছেন, মাঝে লম্বা একটা শূন্যস্থান তৈরি হওয়ার কারণে এমন হয়েছে।
পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলতে গেছে বাংলাদেশ। স্কোয়াডে আছেন দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে এই দুই স্পিনারের ওপর কতটা ভরসা করতে পারে বাংলাদেশ কিংবা কেমন হয়েছে স্পিন আক্রমণ, এমন সব বিষয়সহ বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের বিভিন্ন দিক নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের (টিবিএস) সঙ্গে কথা বলেছেন এনামুল।
টিবিএস: প্রথম দফায় একটি টেস্ট খেলতে পাকিস্তান গেছে বাংলাদেশ। স্কোয়াডে দু'জন বিশেষজ্ঞ স্পিনারের মধ্যে একজন একেবারেই তরুণ। স্পিন আক্রমণ কেমন হয়েছে বলে মনে করেন?
এনামুল: তাইজুল তো ভালো বোলিং করে গেল এখানে। সত্যি কথা বলতে এই চার দিনের ম্যাচটা (বিসিএলের ম্যাচ) অনেক কাজে দেবে বাংলাদেশ দলের জন্য। তাইজুল এবং নাঈম দুজনই ভালো বোলিং করেছে। আমার মনে হয় না অনুশীলনের কোনো ঘাটতি থাকবে এই টেস্ট ম্যাচের আগে।
আমার বিশ্বাস, দু'জনই ভালো বোলিং করবে। যেহেতু সাকিব নেই, আমার মনে হয় তাইজুলের দায়িত্বটা অনেক বড়। ২০ উইকেট নিতে হলে তাইজুলকে অবশ্যই ভালো বোলিং করতে হবে; সাথে নাঈমকেও।
টিবিএস: পাকিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই তাইজুল-নাঈমের ওপর কতটুকু ভরসা করা যায় বলে মনে করেন?
এনামুল: আসলে আমরা জানি না উইকেটটা কেমন হবে। যদি উইকেটে ঘাস থাকে, পেস বোলারদের সাথে তাইজুলের অনেক বড় দায়িত্ব থাকবে। আর স্পিনিং উইকেট হলে সবটা স্পিনারদেরই করতে হবে। তাইজুল শেষ কয়েকটা ম্যাচে বেশ ভালো বোলিং করেছে। ভারতে ওর ভালো করতে না পারার কারণ হচ্ছে, ওখানে আসলে একজন স্পিনারের জন্য অনেক কঠিন হয়।
পাকিস্তানের ২০ উইকেট নিতে হলে অবশ্যই তাইজুলকে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। বাঁহাতি স্পিনার খেলার অভিজ্ঞতা পাকিস্তানের কম আছে। সে ক্ষেত্রে তাইজুলের ও বাংলাদেশের একটা সুযোগ আছে এই টেস্ট ম্যাচে।
টিবিএস: বিদেশের মাটিতে ম্যাচ জেতানোর মতো স্পিনার বর্তমান বাংলাদেশ দলে আছে?
এনামুল: না, নেই। অনেক বড় গ্যাপ হয়ে গেছে। অনেকেই সাবেক হয়ে গেছে। সে কারণে অনেক গ্যাপ হয়ে গেছে। আর ঘরোয়াতে সে রকম মানসম্মত স্পিনার আমার চোখে পড়েনি এখন পর্যন্ত। অনূর্ধ্ব-১৯ দল দেখেন।
ম্যাচ জিততে হলে বাংলাদেশকে দু'টি বাঁহাতি স্পিনার খেলাতে হবে। আমরা টি-টোয়েন্টি সিরিজে একজন বাঁহাতির প্রয়োজন খুব করে অনুভব করেছি। ওদের সবই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু আমাদের বাঁহাতি স্পিনার নেই।
টিবিএস: দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সাকিব আল হাসান ছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমানের স্পিনার তৈরি হয়নি। এর পেছনে কোনো সীমাবদ্ধতা বা কারণ খুঁজে পান?
এনামুল: এর বড় কারণ অনেক বড় গ্যাপ হয়ে গেছে; শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে। আমরা একসাথে কয়েকজন এসেছিলাম। যেমন রাজ ভাই, আমি; পরে এসেছে সাকিব। যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে, এদের মধ্যে অনেকেই খেলার অবস্থায় ছিল। এমন হলে একটা গ্যাপ তৈরি হয়। আস্তে আস্তে সুযোগ দিলে অনেকেই পরিণত হয়ে যেত।
স্পিনার বা পেসার যেই হোক, এখন ভালো ক্রিকেট খেলতে হলে প্রচুর ম্যাচ খেলতে হবে। স্পিনারদের অনেক বেশি লঙ্গার ভার্সন খেলতে হবে। খেললে উন্নতি বোঝা যাবে; বোঝা যাবে কোন দিকে স্পিন হচ্ছে আর না হলে বুঝবেন কেন হচ্ছে না। ম্যাচ অনুশীলনের অভাব আছে। আর আমি বলব এখন সময় এসেছে শুধু স্পিন একাডেমি করার, যেন স্পিন নিয়ে কাজ করা যায়।
টিবিএস: বর্তমান বাংলাদেশ দল থেকে কোন স্পিনারকে বিদেশের মাটিতে এগিয়ে রাখবেন?
এনামুল: টেস্ট ক্রিকেটে সবসময় অভিজ্ঞতাতে বিশ্বাসী আমি। সে ক্ষেত্রে তাইজুল এখন অনেক অভিজ্ঞ। আর টেস্ট ম্যাচ খেলতে হলে আপনাকে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে খেলাতেই হবে। এখানে প্রথম নামটা হওয়া উচিত তাইজুল ইসলাম।
টিবিএস: এই ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে কেমন করতে পারে বাংলাদেশ?
এনামুল: সব নির্ভর করছে আমরা কেমন ব্যাটিং করি সেটার ওপর। আমরা যদি ব্যাটিং ভালো করি, অবশ্যই এই টেস্ট জেতা সম্ভব। আর উইকেটে ঘাস থাকলে বোলারদের জেতাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি টেস্ট ম্যাচ জিততে হলে ২০ উইকেট নিতে হবে।
এখন চিন্তা করতে হবে ২০ উইকেট নেওয়ার মতো বোলার আপনার আছে কি না। যদি থাকে, তাহলে আপনি অবশ্যই জিততে পারবেন। এখানে বোলারদের গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। ঘাস থাকলে পেসারদের ব্রেক থ্রু দিতে হবে আর স্পিনিং উইকেট হলে তাইজুলকে দায়িত্ব নিতে হবে।