হারই যেন অমোঘ নিয়তি
হারে হারে ক্লান্ত অবস্থা। একটা জয় যে পরম প্রশান্তি বুলিয়ে দেবে, সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এমন সময়ে যদি প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে হাজির হয় দুর্দান্ত ছন্দে থাকা পাকিস্তান, জয়ের স্বপ্ন মিলিয়ে যেতে পারে কয়েক মুহূর্তেই। মানসিকভাবে বেশ পিছিয়ে থেকেই প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। এরপরও জয়ের আশা জেগে উঠেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই হারই সঙ্গী।
শুক্রবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে টানা ছয় টি-টোয়েন্টিতে হারল বাংলাদেশ। এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে টানা পাঁচ ম্যাচ হারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
বলা যায় জেতার পথে থাকা ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ। অন্যভাবে বললে আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজরা। শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ৪৭ রান। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টিকে থাকা খুশদিল শাহ ১৭তম ওভারে ফিরে যান। এরপরও ম্যাচ মুঠোয় নিতে পারেনি ঘরের মাঠের দলটি। পাকিস্তানের দুই অলরাউন্ডার শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজের ব্যাটে হেরে যায় বাংলাদেশ, তখনও বাকি ছিল ৪ বল।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বিশ্বকাপের মতোই হতাশার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের কেউ-ই রানের দেখা পাননি। আফিফ হোসেন ধ্রুব, নুরুল হাসান সোহান ও শেখ মেহেদির হাসানের ব্যাটে ৭ উইকেট ১২৭ রান তোলে বাংলাদেশ।
জবাবে পাকিস্তানের শুরুটা ভালো হতে দেননি বাংলাদেশের দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা দুই ওপেনারকে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমকে ২২ রানের মধ্যেই ফিরিয়ে দেন তারা। এরপর ফকর জামান ও খুশদিল শাহর ব্যাটে অনেকটা পথে এগোয় পাকিস্তান। আর জয় তুলে নেওয়ার কাজুটুকু সারেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান শাদাব খান খান ও মোহাম্মদ নওয়াজ। চার বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় পাকিস্তান।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানী শুরু করেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ বোলারদের ঘুম হারাম করে দেওয়া এই দুই ব্যাটসম্যান এদিন সুবিধা করতে পারেননি। তৃতীয় ওভারে রিজওয়ানের স্টাম্প উপড়ে নেন মুস্তাফিজ। ১১ বলে ১১ রান করে বিদায় নেন তিনি।
পরের ওভারে বাবরকে ফেরান তাসকিন। বাংলাদেশ পেসারের বলে এনসাইড এজে বোল্ড হন পাকিস্তান অধিনায়ক। ১০ বলে ৭ রান করেন তিনি। একটু পরই হায়দার আলীকে শেখ মেহেদি হাসান ফেরালে কঠিন বিপদে পড়ে যায় পাকিস্তান। সফরকারীদের বিপদ আরও প্রকোট হয় শোয়েব মালিক রান আউট হলে।
২৪ রানেই ৪ উইকেট উইকেট হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নেন ফকর জামান ও খুশদিল শাহ। এই জুটিতে ৫৬ রান পায় পাকিস্তান। ৩৬ বলে ৩৪ রান করা ফকরকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। খুশদিলও আর বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। ৩৫ বলে ৩৪ রান করা খুশদিলের উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম।
এই দুজনের বিদায়ে ম্যাচ জমে ওঠে, জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজের দারুণ ব্যাটিংয়ের কাছে হেরে যেতে হয় বাংলাদেশ। শাদাব ২১ ও নওয়াজ ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ৪ ওভারে ৩১ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন তাসকিন। একটি করে উইকেট পান মেহেদি, মুস্তাফিজ ও শরিফুল।
এর আগে বাংলাদেশ পুরো ইনিংসে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্যাটিং করে। প্রথম সারির চার ব্যাটসম্যানের কেউ-ই রানের দেখা পাননি। সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। নুরুল হাসান সোহানের ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান। শেষ দিকে অপরাজিত ৩০ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে মাঝারি পূঁজি এনে দেন শেখ মেহেদি হাসান।
এ ছাড়া নাঈম শেখ ১, অভিষিক্ত সাইফ হাসান ১, নাজমুল হোসেন শান্ত ৭, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৬ ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ২ রান করেন। ৩ বলে এক ছক্কায় ৮ রানে অপরাজিত থাকেন তাসকিন আহমেদ। ম্যাচসেরা হাসান আলী ৩টি উইকেট নেন। মোহাম্মদ ওয়াসিম ২টি এবং মোহাম্মদ নওয়াজ ও সাদাব খান একটি করে উইকেট পান।