নাসিম বীরত্বে ফাইনালে পাকিস্তান, ভারতের বিদায়
ছোট লক্ষ্যেও অনেক চড়াই-উতড়াই পেরোতে হলো পাকিস্তানকে। জয়ের জন্য শেষ ছয় বলে দরকার পড়লো ১১ রান। টি-টোয়েন্টিতে এর আর এমন কী! কিন্তু পাকিস্তানের যে শেষ উইকেট জুটি। দলকে জেতানোর গুরুদায়িত্বেও নেই কোনো ব্যাটসম্যান। উইকেটে তখন দুই পেসার নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ হাসনাইন। আফগানিস্তান হয়তো জয়ের গন্ধই পাচ্ছিল। কিন্তু মাত্র দুই বলেই রূপকথা লিখে ফেললেন নাসিম। আফগান পেসার ফজলহক ফারুকীর করা প্রথম দুই ফুল টসে ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে রোমাঞ্চকর এক জয় এনে দিলেন ১৯ বছর বয়সী টগবগে এই যুবক।
বুধবার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুপার ফোরের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। টানা দুই জয়ে আসরের ফাইনালে উঠে গেল পাকিস্তান। ফাইনাল নিশ্চিত হলো দুই জয় পাওয়া শ্রীলঙ্কারও। এক ম্যাচ বাকি থাকা ভারত ও আফগানিস্তানের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল। সুপার ফোরে দুটি করে ম্যাচ হারা এই দুই দল নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে।
টসে হেরে আগে ব্যাটিং করে নেমে ভালো শুরু পেয়েও সেই ধারায় থাকতে পারেনি আফগানিস্তান। দলটির ইব্রাহিম ছাড়া কেউ ইনিংস বড় করতে পারেননি। তাদের ব্যাটিং করা বাকি সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে একজন ছাড়া কেউই ২০ রানের কোটা পেরোতে পারেননি। ৬ উইকেটে ১২৯ রান তোলে আফগানিস্তান।
জবাবে অল্প রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়লেও ইফতিখার আহমেদ, শাদাব খান পাকিস্তানকে জয়ের পথেই রাখেন। কিন্তু শেষভাগে গিয়ে অগ্নি পরীক্ষায় পড়েন নাসিম শাহ। পেসার হলেও ব্যাট হাতে দলকে জেতানোর গুরুদায়িত্ব ওঠে তার কাঁধে। দুই ঝটকাতেই এই দায়িত্ব সেরে চার বল হাতে রেখেই পাকিস্তানকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন পেসার থেকে এক ম্যাচেই অলরাউন্ডারের ট্যাগ পেয়ে যাওয়া নাসিম।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই অধিনায়ক বাবর আজমকে হারায় পাকিস্তান। দারুণ ছন্দ নিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করলেও এখন পর্যন্ত তার ব্যাটে রান দেখা যায়নি। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ফকর জামান ফেরেন সাজঘরে। ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে এই চাপ কাটিয়ে তোলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
যদিও তাদের জুটি বড় হয়নি। দলীয় ৪৫ রানে বিদায় নেন রিজওয়ার। উইকেটে গেলেই রানের দেখা পাওয়া এই ওপেনার এদিন ২৬ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২০ রান করেন। এরপর জুটি বাধেন ইফতিখার ও শাদাব খান। এই জুটিতে ঝামেলাহীনভাবেই গন্তব্যের পথে এগোতে থাকে পাকিস্তান। কিন্তু ৪২ রানের জুটি ভাঙতেই খেই হারায় তারা।
এ সময় পাকিস্তানকে চেপে ধরেন ফারুকী, রশিদ, ফরিদরা। ৩৩ বলে ২টি চারে ৩০ রান করে ফরিদের শিকারে পরিণত হন ইফতিখার। কিছুক্ষণ পরই শাদাবকে ফেরান রশিদ। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানেই মোহাম্মদ নওয়াজ, খুশদিল শাহ ও হারিস রউফকে হারায় পাকিস্তান। ৮ উইকেট হারিয়ে ফেললেও আসিফ আলীতে আশা বেঁচে থাকে তাদের।
কিন্তু ৮ বলে ২টি ছক্কায় ১৬ রান করে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে আসি আউট হলে মাঝ দরিয়ায় পড়ে যায় পাকিস্তান। বাকি থাকে দুই পেসার নাসিম ও হাসনাইন। যদিও দলকে কোনো চাপ নেওয়ার সময়ই দেননি নাসিম। টানা দুই ছক্কায় খেলা শেষ করেন ৪ বলে ৪ রান করা পাকিস্তানি এই পেসার। আফগানিস্তানের ফারুকী ও ফরদি ৩টি করে উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান রশিদ।
এর আগে ব্যাটিং করা আফগানিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন ইব্রাহিম জাদরান। এ ছাড়া হজরতউল্লাহ জাজাই ২১, রহমানউল্লাহ গুরবাজ ১৭, করিম জানাত ১৫, নাজিবুল্লাহ জাদরান ১০, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ১০ ও রশিদ খান ১৮ রান করেন। পাকিস্তানের হারিস রউফ ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান নাসিম, হাসনাইন, নওয়াজ ও শাদাব।