দম বন্ধ করা ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে ধরাশায়ী পাকিস্তান
লক্ষ্য সামান্যই ছিল, ১৩১। যে দলের ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম, তাদের কাছে এই রান তাড়া করা আর এমন কী! কিন্তু জিম্বাবুয়ের দেওয়া এই রান পাড়ি দিতে নেমে পথ হারায় পাকিস্তান। ক্রমেই পথ কঠিন হতে থাকে, এক সময়ে গিয়ে চলে আশা-নিরাশার দোলাচল। শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর লড়াইয়ে জয় জিম্বাবুয়ের। হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেওয়া ম্যাচ জিতে উল্লাসে মাতে আফ্রিকা অঞ্চলের দেশটি।
বৃহস্পতিবার পার্থে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পাকিস্তানকে ১ রানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এবারই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। আর প্রথম মিশনেই পাকিস্তানের মতো পরাশক্তিকে হারিয়ে অবিস্মরণীয় জয় তুলে নিলো তারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮ টি-টোয়েন্টিতে এটা জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় জয়, বাকি ১৬ ম্যাচেই হেরেছে দলটি।
বৃষ্টিতে প্রথম ম্যাচ খেলা হয়নি জিম্বাবুয়ের, মেলে এক পয়েন্ট। এই ম্যাচ জিতে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ দুই-এর তিন নম্বরে আছে তারা। সুপার টুয়েলভে এখনও হার না মানা জিম্বাবুয়ে এবার দৃষ্টি দিচ্ছে সেমি-ফাইনালে। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষেও উত্তেজনাময় ম্যাচে হারা পাকিস্তান আরেকটি হৃদয় ভাঙা হারের বেদনায় পুড়লো। টানা দুই হারে সেমি-ফাইনাল খেলার স্বপ্ন বিবর্ণ হয়ে উঠলো পাঁচ নম্বরে থাকা বাবর আজমের দলের।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। শন উইলিয়ামসের তিরিশোর্ধ ও আরও কয়েকটি ছোট ইনিংসে ৮ উইকেটে ১৩০ রান তোলে তারা। জবাবে ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারানো পাকিস্তান নিয়মিত ধারায় উইকেট হারালেও জয়ের পথে থাকে। কিন্তু শেষ ওভারের রোমাঞ্চে হার মানতে হয় তাদের। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৯ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস।
ক্রমেই পথ কঠিন হয়ে ওঠা ম্যাচে শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১১ রান। আশা-ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। ব্র্যাড ইভান্সের করা প্রথম বলটি এক্সট্রা কভার দিয়ে পাঠান তিনি। মনে হচ্ছিল চার হয়ে যাবে। কিন্তু দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে চার বাঁচান জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। তবে দৌড়েই ৩ রান নেন নওয়াজ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম।
দ্বিতীয় বলে চার মেরে হিসাব সহজ করে দেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। পরের বলে এক রান, স্ট্রাইক পান নওয়াজ। ৩ বলে দরকার তখন ৩ রান; জয়ের স্বপ্ন জেগে ওঠে পাকিস্তানের। কিন্তু চতুর্থ বলে পরাস্থ নওয়াজ, ব্যাটে-বলেই করাতে পারেননি তিনি। আর পঞ্চম বলে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে আরভিনের হাতে পড়ে যান ধরা।
শেষ বলে ৩ রান প্রয়োজন দাঁড়ায় পাকিস্তানের। ২ রান তুলে ম্যাচ সুপার ওভারে নেওয়ার সুযোগ ছিল। ইভান্সের করা শেষ বলটি লং অনে পাঠিয়ে দৌড় শুরু করেন পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। সিকান্দার রাজার থ্রো থেকে প্রথমে বল নিয়ন্ত্রণে নিতে সমস্যা হলেও মুহূর্তেই তা কাটিয়ে উঠে স্টাম্প ভাঙেন উইকেটরক্ষক রেজিস চাকাভা। রান আউট হন আফ্রিদি, আর অসাধারণ জয়ের উদযাপনে মাতেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা!
ছোট লক্ষ্যেই ধুঁকে ধুঁকে ব্যাটিং করা পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন শান মাসুদ। এ ছাড়া রিজওয়ান ১৪, শাদাব খান ১৭, নওয়াজ ২২ ও ওয়াসিম ১২ রান করেন। ৪ ওভারে ২৫ রান খরচা করা জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৩ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচসেরা। এবারের বিশ্বকাপে তিন ম্যাচে জিম্বাবুয়ের জয়ের নায়ক হলেন তিনি। ২টি উইকেট নেন ইভান্স। মুজারাবানি ও জংওয়ে একটি করে উইকেট পান।
এর আগে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করেন উইলিয়ামস। তার ব্যাট থেকে আসে ৩১ রান। এ ছাড়া ওয়েসলে মাধেবেরে ১৭, আরভিন ১৯, রায়ান বার্ল ১০ ও ইভান্স ১৯ রান করেন। পাকিস্তানের পেসার ওয়াসিম ৪ ওভারে ২৪ রানে ৪টি উইকেট নেন। ৩টি উইকেট পান লেগ স্পিনার শাদাব খান। একটি উইকেট ওঠে হারিস রউফের ঝুলিতে।