বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশের
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর ভয়ে ভয়েই টি-টোয়েন্টি মিশন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই কেটে যায় সেই ভয়, মেলে দারুণ এক জয়। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই গল্প, ওড়ে বাংলাদেশের বিজয় নিশান। প্রথমবারের মতো কোনো ফরম্যাটে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ আসে সামনে। তৃতীয় ম্যাচে যা ভালোভাবেই কাজে লাগালো বাংলাদেশ। আগে ব্যাট হাতে লিটন-শান্তরা পথ দেখালেন, পরে বল হাতে শাসন করলেন তাসকিন, মুস্তাফিজ, সাকিবরা। আরেকটি জয়ে বাংলাদেশের হলো তিনে তিন।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ জিতে ইংলিশদের প্রথমবারের মতো কোনো ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিলো বাংলাদেশ। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারে মতো কোনো টেস্ট খেলুড়ে দলকে হোয়াইটওয়াশ করলো তারা। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থবারের মতো প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ নিলো বাংলাদেশ।
সিরিজে প্রথমবারের মতো টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা লিটন কুমার দাসের অসাধারণ ইনিংস ও সিরিজ সেরা নাজমুল হোসেন শান্তর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২ উইকেটে ১৫৮ রান তোলে সাকিবের দল। ইংলিশদের বিপক্ষে যৌথভাবে এটা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ১৫৮ রান করে স্বাগতিকরা। জবাবে ডেভিড মালানের হাফ সেঞ্চুরি ও অধিনায়ক জস বাটলারের লড়াইয়ের পরও ১৪২ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি ইংল্যান্ড। অভিষিক্ত তানভীর ইসলামের প্রথম বলে মালান চার মারলেও এই ওভারেই ধাক্বা খেতে হয় তাদের। তৃতীয় বলে ফিল সল্টকে ফিরিয়ে দেন বিপিএলে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া বাঁহাতি এই স্পিনার।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি সফরকারীদের। দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ জুটি গড়ে তোলেন মালান ও বাটলার, যোগ করেন ৯৫ রান। ১৩.১ ওভারে শতরান পূর্ণ হয় ইংল্যান্ডের, তখন তাদের জয় সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু এ সময়ে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে মালান থামতেই এলোমেলো হয়ে পড়ে ইংলিশদের ইনিংস। পরের বলেই রান আউটে কাটা পড়েন বাটলার। এই দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে অন্ধকারে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।
দলের বিপদে পড়ার আগে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪৭ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৩ রান করেন মালান। অধিনায়ক বাটলার ৩১ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪০ রান করেন। এই দুই ব্যাটসম্যান ফেরার পর ইংলিশদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। এখান থেকে ১৯তম ওভারের প্রথম বল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের আরও তিনটি উইকেট তুলে নেন। এতে রান তোলার গতি কমে যায়, বাড়ে ব্যবধান।
শেষ ওভারে গিয়ে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন দাঁড়ায় ২৭ রান। কিন্তু হাসান মাহমুদের করা ওভার থেকে ১০ রানের বেশি তুলতে পারেননি ক্রিস ওকস ও ক্রিস জর্ডান, মেনে নিতে হয় ১৬ রানের হার। তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ২৬ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন। আগুনে বোলিং করা মুস্তাফিজ ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রানে একটি উইকেট পান। মালানকে ফিরিয়ে বিশ্বের ষষ্ঠ ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি। অভিষিক্ত তানভীর ২ ওভারে ১৭ রানে পান এক উইকেট। সাকিবের ৪ ওভারে ৩০ রানে নেন একটি উইকেট। হাসান ও মিরাজ কোনো উইকেট পাননি।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার লিটন ও রনি তালকুদার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার থেকে ৪৫ রান তোলার পাশাপাশি উদ্বোধনী জুটিতে ৭.৩ ওভারে ৫৫ রানের জুটি গড়েন তারা, এ সময়ে দুজনকে সাবলীলই দেখাচ্ছিল। যদিও প্রায় আট বছর পর জাতীয় দলে ফেরা রনি আউট হন অদ্ভুতভাবে। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলার আদিল রশিদের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ২২ বলে ৩টি চারে ২২ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
রনিকে হারানোর চাপ বাংলাদেশকে বুঝতে হয়নি। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ে তোলেন লিটন ও দারুণ ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত। এ দুজন ৫৮ বলে ৮৪ রানের জুটি গড়েন। এ সময়ে শান্ত দেখেশুনে খেললেও লিটন অসাধারণ সব শটে দ্রুততার সঙ্গে দলের স্কোরকার্ডে রান যোগ করে যেতে থাকেন। ১৭তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে ১০টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন তিনি, টি-টোয়েন্টিতে নবম হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসটি তার ক্যারিয়ার সেরা। এর আগে লিটনের সর্বোচ্চ ছিল ৬৯ রান।
লিটন আউট হওয়ার পর শান্তর সঙ্গে যোগ দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে এ দুজন টি-টোয়েন্টির মেজাজে ব্যাট চালাতে পারেননি, তাতে রান তোলার গতি কমে আসে। লিটন উইকেটে থাকা অবস্থায় মনে হচ্ছিল ১৮০ বা ১৯০ রানের মতো সংগ্রহ গড়ে ফেলতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু তার বিদায়ে সেটা আর হয়নি।
অধিনায়ক সাকিব শেষ দিকে নেমে টি-টোয়েন্টির মতো ব্যাট চালাতে পারেননি, শান্তও পারেননি মারকুটে মেজাজে থাকতে। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ২৭ রান তোলে বাংলাদেশ। শান্ত ৩৬ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৪৭ রান করেন। সাকিব ৬ বলে ৪ রান করেন। ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার আদিল রশিদ ও পেসার ক্রিস জর্ডান একটি করে উইকেট নেন।