তামিম-বিতর্ক বিশ্বকাপে প্রভাব ফেলতে পারে, মেনে নিলেন সাকিব
আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটার হঠাৎ-ই দলের বাইরে, বিশ্বকাপ মিশনে নেই তার নাম। তামিম ইকবালকে ছাড়াই করা হয় বিশ্বকাপের দল ঘোষণা। থামেনি এখানেই, একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তামিমের কিছু বক্তব্য নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন সাকিব আল হাসান।
দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দিলে দলে অধিনায়কের অনুসারী তৈরি হতে পারে, যা স্বাভাবিক। তামিমকে নিয়ে বলা সাকিবের অনেক 'অপ্রিয়' কথা তাদের ভালো নাও লাগতে পারে। সব মিলিয়ে এই বিতর্ক কী তাহলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলায় প্রভাব ফেলেছে? নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে আসা বাংলাদেশ অধিনায়ক দ্বিমত করলেন না। সাকিব মনে করেন, ওই বিতর্কের প্রভাব বাংলাদেশের খেলায় পড়তে পারে।
গত মাসের কথা। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হার, কিউইদের দ্বিতীয় সারির দল হওয়ায় অস্বস্তি ছিল বাংলাদেশের। দুদিন পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে নামে চরম অস্থিরতা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তামিম। অভিজ্ঞ এই ওপেনারের বিশ্বকাপ দলে থাকা না থাকা নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। শেষ পর্যন্ত তামিম নিজেই বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
কী কারণে তার এমন সিদ্ধান্ত, সেটা সবাইকে জানাতে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তামিম। যে ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি না খেলতে বিসিবির উচ্চ পর্যায়ের একজন তাকে ফোন করেছিলেন। অথবা খেললেও যেন নিচের দিকে ব্যাটিং করেন। ম্যাচের ১২ দিন আগে এমন নির্দেশনা দেওয়ায় 'ষঢ়যন্ত্রের' গন্ধ পান তামিম। তার মনে হয়েছিল, বাধা তৈরি করতেই তাকে নিয়ে বিভিন্ন রকমের ইস্যু বানানো হয়েছে।
তামিমের ব্যাখ্যা সে সময় মনে ধরেনি সাকিব আল হাসানের। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক তার দীর্ঘ দিনের সতীর্থকে নিয়ে ঢালাওভাবে সমালোচনা করেন, যা বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দেয়। নিচে ব্যাটিং করতে বলায় তামিম যে বিরক্ত হন, এটাকে স্রেফ শিশুসুলভ আখ্যা দেন সাকিব। স্বভাবতই দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের মধ্যে এমন বিরোধে দলে প্রভাব পড়ার কথা।
বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের খেলায় সেটার প্রভাব পড়তে পারে বলে মেনে নিয়েছেন সাকিব। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের পর তামিম-বিতর্ক নিয়ে করা প্রশ্নে তিনি বলেন, 'ফেলতেই (প্রভাব) পারে, অস্বাভাবিক কিছু না। কার মনের ভেতর কী আছে, তা বোঝা মুশকিল। আপনি যেটা বলছেন, আমি ভিন্নমত পোষণ করি না। প্রভাব ফেলতেই পারে।'
দলের ভালোর জন্য যেকোনো জায়গায় খেলার মানসিকতা রাখার কথা সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন সাকিব। এভাবে কেউ না ভাবলে, সে শুধু নিজের কথা ভাবছেন বলে জানান তিনি। তামিম টিমম্যান কিনা, এই প্রশ্নও তোলেন সাকিব। তিনি বলেছিলেন, 'আমি অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে খেলা শুরু করেছি বাংলাদেশের হয়।, তখন থেকে দেখে আসছি, খুব ভালোভাবে যে খেলোয়াড় দলের জন্য অবদান রাখছে, ভালো করছে; তাকে কখনও বাদ দেয়নি বাংলাদেশের কোনো দল।'
'কোনো দিনও না। সিম্পল একটা উদাহরণ দিই, রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) ছিলেন না, হঠাৎ করে বিশ্বকাপ দলে এলেন। হয়তো যে দুই ম্যাচে খেলেছেন, সেভাবে অবদান রাখতে পারেননি সেভাবে। সুযোগ ছিল, পারফেক্ট স্টেজ ছিল ভালো করার ওনার জন্য। তবে ওনার যে নিবেদন, দলের প্রতি দায়বদ্ধতা, ইচ্ছা ছিল, সবাই দেখেছে সবকিছু। পার্থক্য আছে।' যোগ করেন সাকিব।
সেই সাক্ষাৎকারে সাকিব আরও বলেন, 'আলোচনাই হয়নি এটা (মিডল অর্ডারে তামিমের ব্যাটিং করা নিয়ে) নিয়ে আমার সঙ্গে। কেউ যদি বলে থাকে, সেটা অথরাইজড কেউ। আগে থেকে আলাপ করে রাখতে চেয়েছিল, যেন দুই পক্ষের জন্যই ভালো হয়। এতে খারাপের কিছু দেখি না। খারাপের জন্য তো বলবে না।'
'রোহিতের (রোহিত শর্মা) মতো ক্রিকেটার সাত নম্বর থেকে এসে ১০ হাজার করে ফেলেছে। মাঝে মাঝে সে-ও যদি তিন-চারে খেলে, ব্যাটিংয়ে না নামে, খুব একটা কি সমস্যা হয়? এটা আসলে আমার কাছে মনে হয়, একদম বাচ্চা মানুষের মতো, "আমার ব্যাট আমি খেলব। আর কেউ খেলতে পারবে না"।' বলেন সাকিব।