যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও হোয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কায় পড়তে হয় বাংলাদেশকে!
ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলা বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য আদর্শের নয়। সময়টা ছিল বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপ প্রস্তুতির। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারের এমন মন্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, এটা হয়তো সাকিব দুষ্টুমি করে বলেছেন। না হলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কথা ভেবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৫০ ওভারের ম্যাচের বদলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিই খেলতেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সিরিজ খেলা নিয়েও আলোচনা ছিল। ক্রিকেটাররা না বললেও অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই মত দেন যে, এমন দলের বিপক্ষে খেলে প্রস্তুতি নেওয়াটা নিজেদের জন্যই ক্ষতির। কারণ, এমন দলের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে ভালো করার সম্ভাবনা বেশি থাকে, জয়ও আসে। এতে মিথ্যা আত্মবিশ্বাস তৈরি হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বাস্তবতাটা ভিন্ন। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বাংলাদেশই সিরিজ খুইয়েছে। তারা এখন হোয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কায়। আজকের ম্যাচে হারলেই শঙ্কা বাস্তরে রূপ নেবে।
জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে সাকিব যে দুষ্টুমিই করেছিলেন, সেটা খুব করে মনে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি হারের পর। কোনো ধরনের হার বা ব্যর্থতাই ছোঁয় না তাদের, এটাও যেন দুষ্টুমিরই অংশ। সহযোগী একটি দেশের বিপক্ষে চরম বাজে ক্রিকেট খেলে সিরিজ হারার পর সংবাদ সম্মেলনে তার যে শারীরিক ভাষা ছিল, তা পেশাদার নয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে সোজা উত্তর দেননি তিনি। যেন সিরিজ জিতে আসার পরও তাকে ভুল প্রশ্ন করা হয়েছে। অথচ আরেক ম্যাচ হারলেই হোয়াইটওয়াশ হওয়ার অস্বস্তিতে পড়তে হবে তাদের।
প্রশ্নটা সিরিজ হার ও হোয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কা জাগার কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও এমন শঙ্কায় পড়তে হয় বাংলাদেশকে? শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া হয়নি দলটির। আয়োজক হওয়ার সুবাদে এবার প্রথমবারের মতো বিশ্ব আসরে খেলতে যাচ্ছে তারা। তাদের দলটা গড়া বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে, যারা এসেছেন বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতির মাঝ থেকে। অথচ তারাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সুর-তালে গেয়েছেন বিজয়ের গান।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এমন কিছু হতে পারে, এটা অবশ্য আগে থেকে কেউ-ই ভাবেননি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও হয়তো সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় বাংলাদেশের এই দুই হার অস্বাভাবিক নয়। ঘরের মাঠে তারা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমন ক্রিকেটই খেলেছে। ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও কোনো ম্যাচে ব্যাটিংটা মনপুত হয়নি নাজমুল হোসেন শান্তর দলের, জেতার ধরনটাও ছিল 'টেনেটুনে' পাসের মতো। এরপরও অবশ্য শান্ত জানান, ক্লোজ কয়েকটি ম্যাচ জেতায় অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে তাদের। যদিও তারা নিজেদেরকে এই প্রশ্নটি করেননি, দুর্বল ব্যাটিং অর্ডারের এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও কেন ম্যাচ ক্লোজ হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যে ধরনের ক্রিকেট খেলেছে, তা জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে আলাদা নয়। পার্থক্য হচ্ছে, জিম্বাবুয়ে পারেনি, যুক্তরাষ্ট্র পেরেছে। প্রথম ম্যাচে ১৫৩ রান করে হার মানে বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ম্যাচে ১৪৫ রানের লক্ষ্য পাড়ি দিতে পারেনি তারা। যুক্তরাষ্ট্র অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশে আটকে দিয়েছে, এমনও নয়। তারা স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলেই জিতেছে, বাংলাদেশ হেরেছে অস্বাভাবিক খেলে। দলের কয়েকজন ব্যাটসম্যানের অফ ফর্ম তো আছেই, সঙ্গে দায়িত্বহীন আচরণও ভোগাচ্ছে তাদের।
২০০৬ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি খেলা বাংলাদেশ দুই বা তার চেয়ে বেশি ম্যাচের সিরিজে মোট ১০বার হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। সব মিলিয়ে সিরিজ হেরেছে ২৫টি। বর্তমানে বাংলাদেশই একমাত্র দল, যারা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ইতিহাসে ১০০টি ম্যাচ হেরেছে।
আরও একবার হোয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ, আজ হারলে ১১তম বারের মতো হোয়াইটওয়াশের অস্বস্তির অভিজ্ঞতা হবে তাদের। সেটাও এমন একটি দলের বিপক্ষে, যারা আগে কখনও আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের বিপক্ষে সিরিজও জিততে পারেনি। এর আগে পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের জয়ই ছিল একটি, ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ডকে হারায় তারা। ২৭ টি-টোয়েন্টি যুক্তরাষ্ট্রের জয় ৯ ম্যাচে।