সান্ত্বনার জয় পেতে ঘাম ছুটে গেল দিকহারা পাকিস্তানের
শুরুতেই হোঁচট, বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হেরে যায় পাকিস্তান। দ্বিতীয় ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে। তৃতীয় ম্যাচে কানাডাকে হারালেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় পাকিস্তানের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাবর আজমের দলের ম্যাচটি ছিল নিয়ম রক্ষার। বোলাররা নিজেদের কাজটি করে আইরিশদের অল্প রানেই বাধে। কিন্তু সেই অল্প রান তাড়াতেই ঘাম ছুটে গেল পাকিস্তানের। উইকেট বৃষ্টির পর হাল ধরে দলকে সান্ত্বনার জয় এনে দিলেন অধিনায়ক বাবর।
রোববার লডারহিলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের 'এ' গ্রুপের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। এই ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শেষ হলো তাদের। চার ম্যাচে দুই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তৃতীয় দল হিসেবে শেষ করলো শিরোপার প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া দলটি। চার ম্যাচে জয়হীন থেকেই বিদায় নিতে হলো আয়ারল্যান্ডকে। পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচ থেকে পাওয়া একটি পয়েন্টই তাদের সম্বল।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা আয়ারল্যান্ড শুরুতে দিক হারানোর পর আর গুছিয়ে উঠতে পারেনি। শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ আমির, ইমাদ ওয়াসিমদের দুর্বার বোলিংয়ের সামনে ৯ উইকেটে ১০৬ রান তোলে আইরিশরা। দলটির পক্ষে গ্যারেথ ডিলানি কেবল ব্যাট হাতে লড়তে পেরেছেন। ছোট জবাবে ৪ ওভারের পর একের পর এক উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া পাকিস্তানকে জয় এনে দেন বাবর। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন তিনি। ১৯তম ওভারে গিয়ে নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের জয়।
লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় ২৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান, দ্বিতীয় উইকেটের পতন ৩৯ রানে। এরপর ৫২ থেকে ৬২ রানের মধ্যে ৪টি উইকেট হারিয়ে হারের শঙ্কায় পড়ে যায় তারা। একে একে ফিরে যান সাঈম, রিজওয়ান, ফকর, উসমান, শাদাব, ইমদরা। এর মাঝেও নিজের উইকেটটি ধরে রাখেন বাবর। শেষ পর্যন্ত তার দৃঢ়তায় ম্যাচ জেতে পাকিস্তান।
যদিও শাহিন আফ্রিদির ৫ বলে ২টি ছক্কায় করা ১৩ রানের ইনিংসটি পাকিস্তানের জয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। একপাশ আগলে খেলে যাওয়া বাবর ৩৪ বলে ২টি চারে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। শাহিন আফ্রিদির তাকে বেশ অনেকটা সময় সঙ্গ দেওয়া আব্বাস আফ্রিদি ২১ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৭ রান করেন।
সপ্তম উইকেটে ৪০ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়েন বাবর ও আব্বাস। এই জুটিই পাকিস্তানকে জয়ের পথে রাখে। শুরুতে রিজওয়ান ১৭ ও সাঈম ১৭ রান করে করেন। পাকিস্তানকে পরীক্ষায় ফেলা আয়ারল্যান্ডের ব্যারি ম্যাককার্থি ৪ ওভারে একটি মেডেনসহ ১৫ রানে ৩টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান কার্টিস ক্যাম্ফার। একটি করে উইকেট নেন মার্ক এডেয়ার ও বেন হোয়াইট।
এর আগে ব্যাটিং করা আয়ারল্যান্ডের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। দলের খাতায় কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই বিদায় অ্যান্ডি বালবার্নি। ইনিংসের তৃতীয় বলেই তাকে ফিরিয়ে দেন পাকিস্তান পেসার শাহিন আফ্রিদি। এই ওভারে আবারও তোপ দাগেন বাঁহাতি এই পেসার, এবার তার শিকার লরকান টাকার।
প্রথম ওভারে ২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পরা আইরিশদের বিপদ আরও বাড়ান আমির। দ্বিতীয় ওভারে আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক পল স্টার্লিংকে সাজঘরে দেখিয়ে দেন তিনি। ৪ রানেই নেই তিন উইকেট, চাপ কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেও পারেনি আইরিশরা। দলীয় ১৫ রানে হ্যারি টেক্টরকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন দুর্দান্ত বোলিং করেন শাহি আফ্রিদি।
১৩ রান পরে জর্জ ডকরেলকেও ফেরান আমির। একটু পরই ক্যাম্ফারকে হারিস রউফ ফেরালে ৩২ রানেই ৬ উইকেট হারায় কোণঠাসা হয়ে পড়া আয়ারল্যান্ড। তখন মনে হচ্ছিল ৫০ রানের আগেই গুটিয়ে যাবে তারা। কিন্তু এখান থেকে হাল ধরে লড়াই করা গ্যারেথ ডিলানি ও জস লিটল দলকে ১০০ পার করে দেন। উইকেট বৃষ্টির মাঝেও ১৯ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ডিলানি।
১৮ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ২২ রান করেন লিটল। আইরিশদের ইনিংসের শেষটা চোখের পলকে গুঁড়িয়ে দেন ইমাদ ওয়াসিম। বাঁহাতি এই স্পিনার ৪ ওভারে মাত্র ৮ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। শাহিন আফ্রিদি ৪ ওভারে ২২ রানে ৩টি উইকেট পান। ৪ ওভারে এক মেডেনসহ ১১ রানে ২টি উইকেট শিকার করেন আমির। ৪ ওভারে ১৭ রানে একটি উইকেট পান রউফ।