ইংলিশ পরীক্ষায় ‘ফেইল’ বাংলাদেশের মেয়েরা
জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু হয়েছিল, ঘুচেছিল ১০ বছর ধরে বিশ্ব আসরে জিততে না পারার হতাশা। দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা বাংলাদেশের মেয়েরা প্রস্তুত ছিল শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করতেও। শুরুটা ভালোই হয়, নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে লক্ষ্য নাগালেই রাখে তারা। কিন্তু লক্ষ্য তাড়ায় লড়াকু বাংলাদেশের দেখা মিললো না, ইংলিশ পরীক্ষায় পাস করা হলো না নিগার সুলতানা জ্যোতিদের।
শনিবার শারজায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ও এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় অধরাই থেকে গেল তাদের। এ নিয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে খেলা চার টি-টোয়েন্টির সবগুলোতেই হারলো বাংলাদেশ। দলটির বিপক্ষে এই চারটি ম্যাচই বিশ্বকাপে খেলেছে তারা।
'বি' গ্রুপের ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড। দুই ওপেনার মায়া বাউচিয়ার ও ড্যানি উইয়াট-হজের ব্যাটে ৭ উইকেটে ১১৮ রান তোলে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করে এটাই ইংলিশদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে তাদের কেবল তিনজন ব্যাটার দুই অঙ্কের রান করেন।
লক্ষ্য নাগালে থাকার স্বস্তি ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু ১১৯ রান করে জিততেই অবশ্য আগের রেকর্ড ছাড়াতে হতো তাদের। আগের তিন সাক্ষাতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল ১১৭। কিন্তু এ দফায় ইংলিশ রাজত্বে হানা দিতে পারেনি তারা। সোবহানা মোস্তারী চল্লিশোর্ধ ইনিংস খেলার পরও বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৭ উইকেটে ৯৭ রানে।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা খুব একটা ভালো ছিল না বাংলাদেশের। ৩.২ ওভারে দলীয় ১৬ রানে ফিরে যান মুর্শিদার খাতুনের জায়গায় সুযোগ পাওয়া দিলারা আক্তার। পরের ওভারে ফিরে যান সাথি রানীও। ১৭ রানে দুই উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন সোবহানা ও অধিনায়ক জ্যোতি। তৃতীয় উইকেটে ৩৫ রানের জুটি গড়েন এ দুজন।
এই জুটিতে জয়ের আশাই দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রান আউটে কাটা পড়ে জ্যোতির বিদায়ের সেই স্বপ্নে লাগে ধাক্কা। ২০ বলে ২টি চারে ১৫ রান করেন জ্যোতি। তিন রান পরই সাজঘরে ফেরেন স্বর্ণা আক্তার। এরপর তাজ নেহারের সঙ্গে ২৫ রানের জুটি গড়া সোবহানা একাই লড়েছেন ১৯তম ওভার পর্যন্ত।
কিন্তু তার একার লড়াই যথেষ্ট হয়নি। ১৯তম ওভারে বিদায় নেওয়ার আগে ৪৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ইনিংসসেরা ৪৪ রান করেন সোবহানা। তিনি এবং অধিনায়ক জ্যোতি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। ইংল্যান্ডের লিনসে স্মিথ ও চার্লি ডিন ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান স্কাইভার-ব্রান্ট ও সারা গ্লেন।
এর আগে ব্যাটিং করা ইংল্যান্ডের মেয়েদের শুরুটা ভালোই হয়। উদ্বোধনী জুটিতে ৬.৪ ওভারে ৪৮ রানের জুটি গড়েন দুই ওপেনার মায়া বাউচিয়ার ও ড্যানি উইয়াট-হজ। ১৮ বলে ৩টি চারে ২৩ রান করা বাউচিয়ারকে ফিরিয়ে ইংলান্ডের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন বাংলাদেশের লিগ স্পিনার রাবেয়া খান।
কিছুক্ষণ পরই ন্যাট স্কাইভার-ব্রান্টকে ফেরান আরেগ লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন। এরপর অধিনায়ক হিথার নাইটের সঙ্গে ২০ রানের জুটি গড়েন ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা উইয়াট-হজ। ৬ রান করা নাইটকে বোল্ড করেন রিতু মণি।
৩ রান পর উইয়াট-হজকে থামান নাহিদা আক্তার। ৪০ বলে ৫টি চারে ৪১ রান করেন ইংলিশ এই ওপেনার। এরপর দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারানো ইংল্যান্ড সেভাবে রান তুলতে পারেনি। অ্যামি জোন্স ১৬ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন। ইংল্যান্ডের ইনিংসে তিনজন ব্যাটার দুই অঙ্কের রান করেন।
কৃপণ বোলিং করা ফাহিমা ৪ ওভারে ১৮ রানে ২টি উইকেট নেন। নাহিদার শিকারও ২ উইকেট, তবে তিনি তুলনামূলক খরুচে ছিলেন। ৪ ওভারে ৩২ রান দেন তিনি। রিতু মনি ৪ ওভারে ২৪ রানে ২টি উইকেট পান। একটি উইকেট নেন ৪ ওভারে ১৫ রান দেওয়া রাবেয়া।