বিপিএলের টিকেট নিয়ে বিক্ষোভ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
রাত পোহালেই পর্দা উঠবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একাদশতম আসরের। সময়ের হিসেবে স্রেফ ২৪ ঘণ্টা বাকি। কিন্তু একেবারে শেষ সময়েও টিকেট বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিব)। যে কারণে অনিশ্চয়তায় ছিলেন দর্শকরা, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় বিক্ষোভে। পুলিশ ও টিকেট প্রত্যাশীদের মাঝে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও।
বিপিএলের এবারের আসর ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হবে, অনেক আগে থেকেই এটা বলা হচ্ছে। কিছু কার্যক্রমে সেটার প্রমাণও মিলছে। সেটারই ধারাবাহিকতায় বুথ ছাড়াও অনলাইনে টিকেট বিক্রির কথা জানানো হয়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা আগেও এটা নিশ্চিত ছিল না অনলাইনের কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কীভাবে টিকেট কেনা যাবে। বুথের ব্যাপারেও কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি বিসিবির পক্ষ থেকে, জানানো হয়নি টিকেটের মূল্যও।
এ কারণেই রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৈরি হয় বাজে অবস্থার। তথ্য না থাকলেও ভোর থেকে একাডেমি ভবনের বাইরের টিকেট কাউন্টারে জড়ো হতে থাকেন টিকেট প্রত্যাশীরা। কিন্তু টিকেট কাউন্টারে বিসিবির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর টিকেট না পেয়ে চড়াও হন দর্শকরা। তারা ভিড় করেন মিরপুর স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেটে।
মূল ফটকের সামনে টিকেটের জন্য বিক্ষোভ শুরু করেন দর্শকরা। অবস্থা সামাল দিতে গেট বন্ধ করে দেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ভেতরে তাদের সঙ্গে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরাও। কিন্তু বিক্ষুব্ধ দর্শক কোনো বাধাই মানেননি। একটা পর্যায়ে সবাই মিলে ধাক্কা দিয়ে গেট খুলে ফেলেন, ভেতরে ঢুকে যান তারা। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিলে দর্শকরা দৌড়ে বাইরে চলে যান। ভেতর থেকে লোহার একটি দণ্ড দিয়ে গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাইরে থাকা দর্শকরা পাল্টা ধাওয়া দিয়ে আবারও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ।
অবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খাওয়া বিসিবি পৌনে ১২টার দিকে টিকেট বিক্রি নিয়ে বিবৃতি দেয়। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানানো হয়, বিসিবি নিজ দায়িত্বে অনলাইনে টিকেট বিক্রি করবে। টিকেট পাওয়া যাবে (www.gobcbticket.com.bd) সাইটে। এ ছাড়া মধুমতি ব্যাংকের নির্ধারিত সাতটি ব্রাঞ্চ থেকে সংগ্রহ করা যাবে টিকেট। টিকেটের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা, সর্বনিম্ন ২০০ টাকা। অনলাইনে কাটা টিকেটের কপি প্রিন্ট করে নিয়ে এলে কোড স্ক্যান করে মাঠে প্রবেশ করা যাবে।
এবারের বিপিএল দর্শকদের সুবিধা-অসুবিধা বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখা হবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। গ্যালারিতে ন্যায্য মূল্যে খাবার বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করবে বিসিবি, বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হবে পানি। ড্রিংকিং পার্টনার হিসেবে পুষ্টিকে পেয়েছে বিসিবি। তবে টিকেট বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
একদিন আগেও টিকেট বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি জানান, এই দায় বিসিবিকেই নিতে হবে। নাজমুল আবেদীন বলেন, 'দায়ভার তো আমাদেরকে নিতেই হবে। যারা খেলা দেখতে আগ্রহী। যারা খেলা দেখতে চায়, তাদের কাছে তথ্যটা আরও আগে যাওয়া উচিত ছিল। না যাওয়ার দায়টা পুরোপুরি আমাদের।'
বিষয়টির সুরাহা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'সমাধান মনে হয় ইতোমধ্যে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয় যে হয়তো যোগাযোগের ঘাটতি এখানে হয়েছে। অনলাইনে ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, কেনার সুযোগ আছে। অফলাইনে ব্যাংক থেকে আজ বিকেল চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত আজ থেকে বিক্রি করা শুরু হয়ে যাবে। আমাদের পার্টনার যে আছে মধুমতি ব্যাংক, তাদের সাতটি ব্রাঞ্চে বিক্রি শুরু হবে।'
মধুমতি ব্যাংকের মিরপুর শাখা (মিরপুর ১১), মতিঝিল শাখা (ঢাকা চেম্বার বিল্ডিং), উত্তরা শাখা (জসিম উদ্দিন রোড), গুলশান শাখা (গুলশান ১ এবং ২ এর মাঝে), ধানমন্ডি শাখা (পুরাতন রোড ২৭), কামরাঙ্গীরচর শাখা এবং ভিআইপি রোড শাখা (পল্টন স্কাউট বিল্ডিং)। আজ থেকেই এসব ব্রাঞ্চে গিয়ে টিকেট সংগ্রহ করা যাবে। আজ বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত টিকেট বিক্রি করা হবে। অন্যান্য কার্যদিবসে সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত টিকেট বিক্রি করা হবে।
টিকিটের মূল্য
বিভিন্ন ক্যাটাগরির বিপিএল টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে নিম্নরূপ:
গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড (লোয়ার এবং আপার): ২০০০ টাকা
ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারি নর্থ (মিডিয়া ব্লক): ১০০০ টাকা
ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারি সাউথ (কর্পোরেট ব্লক): ৮০০ টাকা
ক্লাব হাউস নর্থ এবং সাউথ (শহীদ মোশতাক ও শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ড): ৫০০ টাকা
সাউদার্ন এবং নর্দান গ্যালারি: ৩০০ টাকা
ইস্টার্ন গ্যালারি: ২০০ টাকা
জিরো ওয়েস্ট জোন (ক্লাব হাউস সাউথ): ৬০০ টাকায় ৩০০টি আসন।