জাতীয় দলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে বিসিবিকে অপেক্ষায় রাখলেন তামিম
তামিম ইকবাল কবে ফিরবেন জাতীয় দলে? কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কি খেলবেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার? এমন প্রশ্ন অনেক দিনের। তামিম বা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি); কোনো পক্ষ থেকেই এ নিয়ে বক্তব্য আসছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণার শেষ সময় চলে আসায় বিসিবি উদ্যোগী হয়ে বিষয়টির সুরাহা করতে চাইলো আজ, যদিও ফল আসেনি। জাতীয় দলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্বাচকদের কাছে সময় চেয়েছেন তামিম।
এর আগে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন, কোনো ক্রিকেটার অবসরের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ধরে নিতে হবে তিনি 'অ্যাভেইলেবল' আছেন। তামিমকে যে বিসিবি দলে চায়, বোর্ড প্রধানের বক্তব্য ছাড়া কিছু আলোচনায় সেটার ইঙ্গিত মিলেছে। কিন্তু বিসিবি চাইলেই তামিমের খেলা চূড়ান্ত নয়। দীর্ঘদিন জাতীয় দল থেকে নিজেকে দূরে রাখা অভিজ্ঞ এই ওপেনার কী চান, সেটা জানা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
এটা জানতেই আজ বুধবার সিলেটে আসেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। আগে থেকেই সিলেটে ছিলেন বাকি দুই নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক ও হান্নান সরকার। ফরচুন বরিশালের টিম হোটেলে তামিমের সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করেন তিন নির্বাচক। দুই দফায় বৈঠকের পরও তামিমের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে পারেননি নির্বাচকরা। প্রথম দফার বৈঠকে জাতীয় দলে না ফেরার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান তামিম।
এর কিছুক্ষণ পর আবারও তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন নির্বাচকরা। এ সময় নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। এই বৈঠকে দলে ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচকদের কাছে কয়েক দিনের সময় চান তামিম। বৈঠকের পর এটা সংবাদমাধ্যমকে জানান প্রধান নির্বাচক। দলে ফেরাতে বৈঠকের বেশিরভাগ সময়জুড়ে তামিমকে অনুরোধ করেন নির্বাচকরা। নিয়মিত অধিনায়ক শান্ত ও মাহমুদউল্লাহও একই ভূমিকা পালন করেছেন। মঙ্গলবার রাতেও তামিমের সঙ্গে কথা বলে তাকে দলে ফিরতে অনুরোধ করেন শান্ত।
হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মাঠে গড়াবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি। খেলা হবে পাকিস্তান ও দুবাইয়ে। আসরটির দল ঘোষণা করতে হবে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে। ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দলে পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকলেও দল ১২ জানুয়ারির মধ্যেই দিতে হবে। এ কারণেই ফরচুন বরিশালের হয়ে তামিম বিপিএল খেলায় ব্যস্ত থাকলেও তাড়া অনুভব করেছে বিসিবি এবং তামিমকে মানাতে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে সিলেটে।
বেলা ১১টার পরে তামিমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নির্বাচকরা। এরপর আরেক দফা বৈঠক চলে, বিকেলের দিকে সংবাদমাধ্যমের কথা বলেন প্রধান নির্বাচক। চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে গাজী আশরাফ বলেন, 'বেশ কিছু ব্যাপারে আমরা খোলামেলা কথা বলেছি। ক্রিকেট নিয়ে কথা হয়েছে অবশ্যই। বর্তমান পরিস্থিতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট, জাতীয় দল, বিপিএল, সবকিছু নিয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।'
'তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে আপনাদের একটা আগ্রহ থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারটা নিয়ে এর আগেই হয়তো তামিমের সঙ্গে আমাদের আরেকটু আলোচনা হতে পারতো। যাই হোক, সামনে আমাদের একটা বড় ইভেন্ট আছে। আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো আলোচনাতেই সঙ্গে সঙ্গে ওই মুহূর্তে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। কারণ এটা অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত।' বলেন তিনি।
প্রধান নির্বাচকের মনে হয়েছে, ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেই সময় নিয়েছেন তামিম। তিনি বলেন, 'বোর্ডের তরফ থেকে আমরা এসেছি। এখানে কোনো অসুবিধা নাই। পাশাপাশি খেয়াল করতে হবে, একটা খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় এ সমস্ত ইস্যুতে ফেরত আসার ব্যাপারে তার ঘনিষ্ঠজন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব অনেক সময়, কিংবা তার প্রিয় কোচ অথবা শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার একটা ব্যাপার থাকে। সেক্ষেত্রে একটু সময় নেওয়ার তো ব্যাপার এসেই যায়। আমাদের যেহেতু ১২ তারিখে দল ঘোষণা করতে হবে, তার আগেই আমাদেরকে দলটা দিতে হবে বোর্ডের কাছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সময় আছে, তাকে সময় নিতে দেই, তাড়াহুড়োর কিছু নেই।'
'তিনি একটা টুর্নামেন্ট খেলছেন, আমাদের প্রাথমিক আলোচনা আমরা সেরে নিয়েছি। আমাদের আলোচনার বিষয় আমাদের মধ্যেই থাক। যেহেতু আমি বললাম ব্যাপারটা আলোচনা করেছি, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। সে সিদ্ধান্তের জন্য তামিম ইকবালকে একটু সময় দিতে হবে।' যোগ করেন গাজী আশরাফ। এরপরও তামিমের ফেরার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে বারবার একই ধরনের প্রশ্ন করা হয় প্রধান নির্বাচককে। প্রতিবারই প্রায় একই ধরনের উত্তর দেওয়া প্রধান নির্বাচক তাই রহস্য রেখে দিতে চাইলেন, বললেন, 'একটু অপেক্ষা করুন, সাসপেন্স থাকুক।'
বাংলাদেশের জার্সিতে তামিম সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০২৩ সালের সেপেম্বরে, ওই সিরিজে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেন তিনি। সর্বশেষ টেস্ট খেলেন একই বছরের এপ্রিলে। সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে অভিজ্ঞ এই ওপেনার ম্যাচ খেলেন ২০২০ সালের মার্চে। এরপর দীর্ঘদিন না খেলে ২০২২ সালের জুলাইয়ে এই ফরম্যাট থেকে অবসর নেন তামিম। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি, সেই থেকে চুক্তির বাইরে দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান।
জাতীয় দলে না খেললেও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত তামিম। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএলে খেলেছেন। বছরের শেষভাগে সিলেটে আয়োজিত এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে খেলেন চট্টগ্রামের হয়ে। সাত মাসের বিরতি শেষে এই টুর্নামেন্ট দিয়ে মাঠে ফেরেন তামিম। আসরটিতে চার ম্যাচে খেলা বাংলাদেশ ওপেনার ৬৩.৩৩ গড়ে রান করেন ১৯০। চলতি বিপিএলে বরিশালের নেতৃত্বে থাকা তামিম চার ম্যাচে একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪০.৩৩ গড়ে ১২১ রান করেছেন।
ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেও দীর্ঘ সময় ধরে আন্তর্জাতিক আঙিনা থেকে দূরে তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য তিনি ফিট কিনা, উঠেছে সেই প্রশ্ন। এতোদিন বাইরে থাকা কোনো ক্রিকেটারকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো আসরে খেলানো নির্বাচকদের জন্য চাপের কিনা, এই প্রশ্নও করা হয়। প্রধান নির্বাচক বলেন, 'তামিম ইকবালের মতো একজন খেলোয়াড় যে এনসিএল খেলছে... আপনাদের মতো যারা প্রশ্নটা করেন, তাদের জন্যই বলছি, বিপিএল খেলছে...তার যোগ্যতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। আমরা তার ফেরাটার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে ছিলাম যে, তিনি ফিরতে চান কিনা। যেকোনো সময় সে মোস্ট ওয়েলকাম আমাদের দিক থেকে।'
২০২৩ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে একদিনের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তামিম। ফিরলেও তার পথচলা আগের মতো ছিল না। অবসর ভেঙে ফেরার পর দেড় বছরে মাত্র দুটি ওয়ানডে খেলেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। এরপর বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়াসহ নানা বাস্তবতায় থমকে যায় তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন, তামিম কি ফিরবেন, খেলবেন আবার বাংলাদেশের জার্সিতে? সম্ভাবনা জেগেও সেই উত্তর মিললো না, এটা জানতে আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে সবাইকে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব আল হাসানকে দলে রাখা, না রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষায় বিসিবি। এ বিষয়ে দুই-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানান গাজী আশরাফ।