দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার কিছুই জানেন না বিজয়, নেবেন আইনি ব্যবস্থা
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/01/bijoy.jpg)
চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মাঠের খেলার চেয়ে অন্য সব বিষয় নিয়েই বেশি আলোচনা। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক জটিলতা ছাড়াও যে বিষয়টি নিয়ে খুব চর্চা হচ্ছে, সেটা ফিক্সিং ইস্যু। অনেক বাইরে ওয়াইড ডেলিভারি করা, চোখে লাগে এমন নো বল করাসহ আরও কিছু কর্মকাণ্ডে ফিক্সিংয়ের সন্দেহের জন্ম দিয়েছে অনেকের মনেই। বিষয়টি কাজ শুরু করেছে বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগও।
দেশি ১০-১২ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে সন্দেহ বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের। তাদের সন্দেহের তালিকায় আছেন কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটারও। সন্দেহের নজরে আছেন, দেশি বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের নাম এর আগে সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে একজন দুর্বার রাজশাহীর ওপেনার এনামুল হক বিজয়। আজ কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে, তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিজয় জানিয়েছেন, এমন কিছু জানেন না তিনি।
এ বিষয় নিয়ে অবশ্য বিজয়কে চিন্তিত মনে হয়নি। তবে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠায় যারপরনাই হতাশ অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। এমন অভিযোগে কষ্ট পাচ্ছেন জানিয়ে বিজয় জানান, আইনি ব্যবস্থা নেবেন তিনি। টিবিএসকে তিনি বলেন, 'আমাকে জড়িয়ে এমন খবর হওয়ায় আমি সত্যিই বিস্মিত, হতবাক আমি। দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কিনা বা কেন দেওয়া হলো, এ ব্যাপারে কিছুই জানি না আমি। বিসিবি বা কারও পক্ষে থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমি অন্ধকারে আছি। অনেক বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি। পুরো এই সময়ে সম্মানের সাথে ক্রিকেট খেলে আসছি। এ ধরনের খবর আমার জন্য খুবই বিব্রতকর, আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। আমি অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা নেবো।'
ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজয় জানান, এসব পুরোপুরি মিথ্যা। তার ভাষায়, 'মিথ্যা সব সময় মিথ্যাই, এমন কিছু হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন অভিযোগে আমি বিব্রত, কষ্ট পাচ্ছি। এতো বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি, বিপিএলে সম্মানের সাথে খেলছি, বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি। এখনও তো অনেক সময় পড়ে আছে। বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। সেটা না হলে এতো পরিশ্রমের কী মানে কী! সব জায়গায় সৎ থেকে, নৈতিকতা ধরে রেখে খেলে যদি এমন অভিযোগ শুনতে হয়, তাতে কষ্ট হয়।'
জানা যায়, বিজয়ের দেশত্যাগে নিষধাজ্ঞা দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে অনুরোধ করেছে বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগ। কিন্তু এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বিসিবির একজন পরিচালক। নাম না প্রকাশ করার শর্তে টিবিএসকে তিনি বলেন, 'বিজয়ের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা বা তাকে যেন দেশের বাইরে যেতে না দেওয়া হয়, বিসিবির কোনো জায়গা থেকে কাউকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি তো প্রমাণিত কিছু নয়। এর আগে এমন নিষেধাজ্ঞা কীভাবে আসবে! বিষয়টা আমরা দেখছি, প্রয়োজনে এ ব্যাপারটি পরিষ্কার করতে আমরা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেব।' পরে বিসিবির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একই তথ্য দেওয়া হয়।
চলমান বিপিএলে আটটি ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীকে নেতৃত্ব দেন বিজয়। ব্যাটিংয়ে আরও মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ দিতে তাকে সরিয়ে তাসকিন আহমেদকে অধিনায়ক করে রাজশাহী। যদিও নেতৃত্বভার সামলানোর পাশাপাশি ব্যাট হাতে দারুণ করছিলেন বিজয়। নেতৃত্ব দেওয়াকালীনই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে খেলেন ৫৭ বলে ১০০ রানের হার না মানা দারুণ এক ইনিংস। রাজশাহীর হয়ে ১২ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৯.২০ গড়ে ৩৯২ রান করেছেন বিজয়, যা এখন পর্যন্ত আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান।
এমন একটি আসরে নিজের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ যেন মানতে পারছেন না বিজয়। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'দুদিন বন্ধ ছিলো, লিগ্যাল অ্যাকশন নেওয়ার সুযোগ ছিল না। দুদিন আগে রাতে এমন নিউজ আসতে শুরু করে। তো রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমি আইনজীবির সঙ্গে কথা বলছি। একটা পদক্ষেপ আমি অবশ্যই নিবো। কারণ যেভাবে নেতিবাচক নিউজ হয়েছে, এটাকে ইতিবাচক করা কঠিন কাজ। কারণ, সবাই নেতিবাচকটাই শুনতে পছন্দ করে। তাই আমার অবস্থান পরষ্কিার করা জরুরী।'
সংবাদমাধ্যমের হওয়া খবর নিয়ে বিজয়ের ভাষ্য, 'আমি যে খবরই দেখছি, খুবই অবাক হচ্ছি। এতে আমি খুবই কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের গণমাধ্যম যে একটা মানুষকে হেয় করে যাচ্ছে, কি মজা পাচ্ছে এটা করে! ভিউয়ের জন্য? কিন্তু সবারই তো পরিবার আছে, বন্ধু-বান্ধব আছে, তাদের কতো মানুষ দেখে এসব। ভক্ত-সমর্থকদের কথা না না-ই বললাম। কাছের মানুষ স্ত্রী-বাচ্চা আছে। এই সংবাদগুলো করে কী মজা পাচ্ছে মিডিয়া! এসব ষড়যন্ত্র নাকি অন্য কিছু, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।'