করোনাভাইরাস সর্বশেষ ছড়াবে যেসব দেশে
মাত্র তিন মাসে আগে করোনাভাইরাসের মহামারি শুধু চীনেই সীমাবদ্ধ ছিল। ওই সময়ে দেশটির বাইরে কোনো সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায়নি।
এরপর গত ১৩ জানুয়ারি প্রথম করোনাভাইরাস বিশ্ব সমস্যায় রূপ নিতে থাকে। প্রথমে থাইল্যান্ডে একজনের দেহে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে তা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি এক শক্তিশালী টাইফুনের আকার ধারণ করেছে। এই ঝঞ্ঝায় লণ্ডভণ্ড হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি আর স্বাভাবিক জনজীবন।
বিশ্ব মানচিত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ছবিগুলোর দিকে তাকালে স্পষ্ট দেখা যায়, কিভাবে বিন্দু বিন্দু এসব চিহ্ন বিশ্ব মহামারির প্লাবন হয়ে পৃথিবীকে তলিয়ে দিচ্ছে!
নেপাল থেকে নিকারাগুয়া- বিশ্বব্যাপী এখন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন। বাড়তি রোগীর চাপ মোকাবেলায় নাজেহাল অবস্থা হাসপাতালগুলোর।
এতকিছুর পরও পৃথিবীর কোনো স্থান কি করোনার থাবা থেকে মুক্ত থাকতে পেরেছে? আশ্চর্যজনক হলেও এর উত্তর হলো: হ্যাঁ, এখনো অনেক ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র, বিচ্ছিন্ন দেশ এই ভাইরাসের আওতামুক্ত।
জাতিসংঘের সদস্য দেশের সংখ্যা বর্তমানে ১৯৩টি। এদের মাঝে ১৮টি দেশে এখনো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি। জন হপকিন্স বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রদত্ত তথ্যসূত্রে বিষয়টি বিবিসি নিশ্চিত করেছে।
কোভিড-১৯'র আওতামুক্ত ১৮ দেশ:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি এমন ১৮টি দেশ হলো কোমোরোস, লেসোথো, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, উত্তর কোরিয়া, পালাও, সামোয়া, সাও তোমে ও পিন্সিপে, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ সুদান, তাজিকিস্তান, টোঙা, তুর্কমেনিস্তান, টুভালু, ভানাতু এবং ইয়েমেন।
এসব দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা না পড়ার পেছনে কিছু কিছু দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও শাসন ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন, উত্তর কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা শূন্য বলে দাবি করে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইয়েমেনেও শাসকগোষ্ঠী একই দাবি করছে।
অবশ্য এরপরও বিশ্বের অনেক অঞ্চল বা স্থানে এখনো সত্যিকার অর্থে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েনি। এসব দেশ মহাসাগরের বুকে নানা দুর্গম দ্বীপরাষ্ট্র। সেখানে খুব কম মানুষই ভ্রমণ করে। এই বিচ্ছিন্নতার কারণেই এসব স্থানে ভাইরাসের বিস্তার ঘটেনি।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, সবচেয়ে কম পর্যটক যান- বিশ্বের এমন শীর্ষ ১০টি স্থানের মধ্যে ৭টিতেই কোভিড-১৯ এখনো হানা দিতে পারেনি। পুরো দুনিয়া যখন সামাজিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলছে, তখন দুর্গম স্থানে অবস্থিত হওয়ার কারণে এসব দ্বীপ নিজেরাই বিচ্ছিন্ন মুক্তাঞ্চলে রূপ নিয়েছে।
তবে দুর্গমতার ওপর ভরসা রাখতে পারছে না অনেক দ্বীপ রাষ্ট্র। প্রশান্ত মহাসাগরের এমনই এক রাষ্ট্র নাওরুর প্রেসিডেন্ট জানান, ইতোমধ্যেই তিনি করোনাভাইরাসের কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
নিকটতম প্রতিবেশী কিরিবাতি দ্বীপপুঞ্জের বানাবা দ্বীপ থেকে নাউরু ২০০ মাইল দূরে অবস্থিত। আর নাউরুর সঙ্গে সরাসরি বিমান চলাচল করে- এমন সবচেয়ে কাছের বড় শহর অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন থেকে এর দূরত্ব আড়াই হাজার মাইল।
আয়তনের দিক থেকে নাউরু জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মাঝে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম।
জনসংখ্যার দিক থেকেও সবচেয়ে কম টুভালুর পরেই দ্বিতীয় অবস্থান নাউরুর। গত বছর মাত্র ১৬০ জন পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করেছেন। তারপরও সতর্ক অবস্থানে ছাড় দিতে দেশটি নারাজ।
মাত্র একটি সাধারণ মানের হাসপাতাল আছে নাউরুতে। নেই কোনো ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র); রয়েছে চিকিৎসক ও সেবাকর্মীর সংকট। ব্যাপক প্রাণহানি এড়াতে তাই এমন পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই পরিস্থিতিতে ফিজি, কিরিবাতি, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এবং ব্রিসবেনের সঙ্গে সকল প্রকার বিমান চলাচল স্থগিত করে দিয়েছে নাউরু। এর আগে ২ মার্চ দেশটি মহামারি আক্রান্ত চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইতালির নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আর অস্ট্রেলিয়া থেকে যারা এসেছেন, তাদের স্থানীয় হোটেল কক্ষে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রেখেছে দেশটি।
নাউরুর প্রেসিডেন্ট এই ব্যবস্থাকে 'ক্যাপচার অ্যান্ড কন্টেইনমেন্ট' পদ্ধতি নাম দিয়েছেন।