কাপড়ের মাস্ক ছেড়ে সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহারের সময় এসেছে, কেন?
অনেকেই হয়তো কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করে মহামারির এক বছরেরও বেশি সময় পার করেছেন। আসছে শীতে হয়তো এই অভ্যাস বদলে ফেলতে চাইবেন অনেকেই।
এর কারণ হলো, সার্জিকাল মাস্ক ও কেএন৯৫ মাস্কের মতো একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্কগুলো ভাইরাস প্রতিরোধে আরও ভালোভাবে কাজ করে এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। মহামারির শুরু দিকের চেয়ে এসব মাস্ক এখন আরও বেশি সহজলভ্য।
গত আগস্টে প্রকাশিত ইয়েল ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ভাইরাস পার্টিকেল ফিল্টারের ক্ষেত্রে সার্জিকাল মাস্ক ৯৫ শতাংশ কার্যকর। গবেষণাটি এখন পিয়ার রিভিউ করা হচ্ছে। কাপড়ের মাস্কের ক্ষেত্রে এ হার ৩৫ শতাংশ মাত্র।
সাবান পানি দিয়ে দশবার সার্জিকাল মাস্ক ধোয়ার পরও এসব মাস্ক কার্যকারিতা একই থাকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কোনো অবস্থাতেই একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক পুনরায় ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছে।
ফ্রান্স, জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মতো ইউরোপীয় দেশগুলোর জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বর্তমানে ঘরে তৈরি কাপড়ের মাস্কের বদলে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।
তবে এক্ষেত্রে কতো লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক, কেমন পরিবেশে মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে- এ বিষয়গুলোও কাজ করে। কখন কোন ধরনের মাস্ক ব্যবহার করা যাবে এক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখলে বিষয়টি বোঝা সহজ হবে।
সার্জিকাল মাস্ক কেন কাপড়ের মাস্কের চেয়ে ভালো কাজ করে?
মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সহকারি অধ্যাপক ইয়াং ওয়াং এর মতে, মানুষের কথা বলা, শ্বাস নেওয়া, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নির্গত ভাইরাস পার্টিকেল ঠেকাতে কাপড়ের মাস্কও বেশ ভালো কাজ করে।
তবে একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক আরও বেশি সুরক্ষা দিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় কেএন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করলে।
তা সম্ভব না হলে পলিপ্রোপিলিনের তৈরি সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। পলিপ্রোপিলিন ইলেকট্রিক চার্জ প্রতিরোধ করতে পারে, কাপড়ে মাস্ক ভেদ করে প্রবেশ করতে পারে এমন কণাও প্রতিরোধে সক্ষম এটি।
ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার পেরেলমান স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ড. জুডিথ ও'ডনেলের মতে, এসব মাস্কের দামও কম। গুণাগুণও একই রকমের হয়ে থাকে। অন্য দিকে বাজারে বিভিন্ন মানের কাপড়ের মাস্ক পাওয়া যায়।
সিডিসি কেন কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়?
কেএন৯৫ ও সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলেও এন৯৫ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়নি। এর কারণ হলো, এসব মাস্ক স্বাস্থ্যকর্মী ও উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা সম্মুখ সারির কর্মীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
একারণেই মহামারির শুরুতে সিডিসি সব ধরনের মেডিকেল গ্রেড মাস্কের পরিবর্তে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। এখনো এই পরামর্শ কার্যকর আছে। সিডিসি'র মতে, মুখে ভালোভাবে এটে যায় এমন মাস্কও বেশ ভালোভাবে কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।
অনেক মানুষই এখন তাদের দুই বা ততোধিক স্তরের কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কাপড়ের মাস্ক তুলনামূলক আরামদায়ক, দাম কম, পুনর্ব্যবহারযোগ্য, ফ্যাশনেবলও।
কাপড়ের মাস্কের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর স্থায়িত্বকাল। সার্জিকাল মাস্ক ও কেএন৯৫ এর ঠিক বিপরীত।
গত জুলাইতে প্রকাশিত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউটস অব টেকনোলজির এক গবেষণার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ৭,২০০ টন মেডিকেল বর্জ্য সৃষ্টি হবে যার বেশিরভাগই একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক থেকে।
কখন কোন মাস্ক ব্যবহার করা যাবে?
প্লেনে চড়া, ক্লাসরুম বা থিয়েটারের মতো জনাকীর্ণ স্থানে যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না, এমন স্থানে অন্তত সার্জিকাল মাস্ক সঙ্গে রাখা উচিত।
তবে যে সব পরিস্থিতিতে বেশ কিছু সময়ের জন্য খুব বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসার প্রয়োজন পড়ে না সেক্ষেত্রে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের কোনো সমস্যা নেই বলে উল্লেখ করেন জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মিলকেন ইনস্টিটিউট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন লিন গোল্ডম্যান।
তবে যে মাস্কই ব্যবহার করুন, মাস্ক মুখে ভালোভাবে এটে যাচ্ছে নাকি সেদিকে খেয়াল রাখা খুব জরুরি- যোগ করেন তিনি। ঢিলেঢালা সার্জিকাল মাস্কের চেয়ে ভালোভাবে মুখে এটে যায় এমন কাপড়ের মাস্ক আরও বেশি সুরক্ষা দেয়- যোগ করেন তিনি।
গোল্ডম্যান আরও জানান, সিডিসিও ভবিষ্যতে তাদের গাইডলাইন আপডেট করতে পারে- ঠিক কী ধরনের পরিস্থিতিতে সার্জিকাল মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি।
- সূত্র: সিএনবিসি