হতাশা এবং স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ায় কোভিড-১৯: সমীক্ষা
যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছয় মাস আগে যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন, সম্প্রতি তাদের ভেতর হতাশা, স্মৃতিভ্রংশ, মানসিক অশান্তি এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।
গবেষকদের মতে, কোভিড আক্রান্ত এক-তৃতীয়াংশ মানুষের ভেতর মনস্তাত্ত্বিক বা স্নায়বিক রোগে ভোগার আশঙ্কা রয়েছে।
হাসপাতালে বা নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি আরও বেশি।
গবেষকদের মত, এবারের সমীক্ষা থেকে মস্তিষ্কের ওপর ভাইরাসটির প্রত্যক্ষ প্রভাব সামনে এল।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০ লাখ রোগীর ইলেকট্রনিক মেডিক্যাল রেকর্ডস ঘেঁটে দেখেছেন যে তাদের মধ্যে ১৪ টি মনস্তাত্ত্বিক বা স্নায়বিক রোগের সম্ভাবনা রয়েছে যার মধ্যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, স্ট্রোক, পারকিনসন'স ডিজিজ, গিয়েন বারে সিনড্রোম, ডিমেনশিয়া, সাইকোসিস, খিটখিটে মেজাজ, উদ্বিগ্নতা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তারা বলেন, কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে সেরে ওঠার পরেও উদ্বিগ্নতা এবং মেজাজ হারানো অন্যতম সাধারণ প্রবণতা।
গবেষণাটি মূলত পর্যবেক্ষণমূলক ছিল, তাই গবেষকরা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি এসব রোগের পেছনে কোভিড-১৯ ঠিক কতখানি জড়িত। তাছাড়া এ মুহূর্তে যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রয়েছেন, তাদের মধ্যে পরবর্তী ছয় মাসে স্ট্রোক বা হতাশা দেখা যাবে কিনা সেটিও স্পষ্ট করে বলার মত উপাত্ত গবেষকদের হাতে নেই।
পূর্বে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত একটি দলকে আরও দুটি দলের সাথে তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ করেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। অপর দুটি দলেরও কোভিড-১৯ না হলেও ফ্লু এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যা ছিল। এ পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার চাইতে কোভিড-১৯ মস্তিষ্কের সাথে অধিকতর সংশ্লিষ্ট।
অন্যান্য শ্বাসজনিত সংক্রমণের চেয়ে কোভিডে আক্রান্তের পর মানসিক বা স্নায়বিক ব্যাধিতে ভোগার সম্ভাবনা ১৬ শতাংশ বলে গবেষকেরা জানান।
রোগের তীব্রতা যত বেশি হবে, মানসিক বা মস্তিষ্কের রোগে ভোগার প্রবণতাও তত বাড়বে।
শতকরা ২৪% রোগীর মেজাজ খিটখিটে, উদ্বিগ্নতা বা মানসিক ব্যাধি দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের ক্ষেত্রে তা ২৫% এবং চিকিৎসা নিতে আইসিইউ পর্যন্ত যেতে হয়েছে এমন রোগীদের জন্য এই হার ২৮%।
আলঝেইমার্স রিসার্চ ইউকে'র গবেষণা প্রধান ড. সারা ইমারিসিও বলেন, "এ গবেষণা তুলে ধরেছে যে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তরা মারাত্মকভাবে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকিতে রয়েছে"।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক মাসুদ হুসেইন বলেন, "মস্তিস্কে ভাইরাসের প্রবেশের এবং সরাসরি ক্ষতির যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তবে এটির অন্যান্য অপ্রত্যক্ষ প্রভাবও থাকতে পারে, উদাহরণস্বরূপ রক্ত জমাট বাঁধার ফলে স্ট্রোক হতে পারে"।
কিংস কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি, সাইকোলজি অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স, অধ্যাপক ড্যাম টিল উইকসের মুখেও একই কথার প্রতিধ্বনি। তিনি বলেন, "কোভিড -১৯ যে শুধু শ্বাসতন্ত্রের সাথে নয়, এটি মানসিক এবং স্নায়বিক সমস্যার সাথেও সম্পর্কিত সেটি এ গবেষণায় প্রমাণিত হয়"।
"রোগ নির্ণয়ের ছয় মাস পরে এসেও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। যারা 'লং কোভিডে' ভোগেন তাদের জন্য এটাই প্রতীয়মান যে, কোভিড পরবর্তী লক্ষণগুলো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত রয়ে যেতে পারে"।
"এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যেই এসব লক্ষণের তীব্রতা প্রকাশ পেলেও গবেষণা বলছে ঝুঁকিমুক্ত নন কেউই", যোগ করেন উইকস।
- বিবিসি অবলম্বনে