ভিটামিন সি ও জিঙ্কে কোভিডের উপসর্গ নিরাময় হয় না: গবেষণা
ভিটামিন সি ও জিঙ্ক কী কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে?
উত্তর হচ্ছে; না। এমনকি উচ্চ মাত্রায় ডোজ নিলেও তাতে বিশেষ কোনো সুফল পাওয়া যায় না, বলে সাপ্লিমেন্ট দুটি প্রয়োগের মাধ্যমে করা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে উঠে এসেছে।
আগে থেকেই সর্দি বা সাধারণ ফ্লু হলে ভিটামিন ও জিঙ্কের বহুল ব্যবহার চলে আসছে। কিন্তু, জনপ্রিয় বিশ্বাস বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষায় উৎরাতে পারেনি, অন্তত কোভিডের মতো ফুসফুসের ব্যাধির ক্ষেত্রে এসবের উপযোগিতা নেই বলে প্রমাণ মেলে।
নতুন গবেষণার নিবন্ধটি গত শুক্রবার চিকিৎসা বিজ্ঞানের জার্নাল- জামা নেটওয়ার্ক ওপেন'- এ প্রকাশিত হয়।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি উঠে আসে, তা হলো বাড়িতে অবস্থানকারী কোভিড-১৯ রোগী এসব সাপ্লিমেন্ট সেবনে কোনো উপকারই পাবেন না। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে কোভিড প্রতিরোধে অনুমোদিত অন্যান্য ওষুধের সহায়ক হিসেবে গ্রহণ করলে, তখন কিছুটা উপকার পাওয়া যেতে পারে।
এই গবেষণার ফলাফল এত নিরাশাজনক ছিল যে- তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা আর অনুসন্ধানের প্রয়োজন দেখেননি।
নিবন্ধের সঙ্গে লেখা এক সম্পাদকীয়তে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড. মিগুয়েল কায়িনযোস অ্যাকিরিকা জানান, "সাপ্লিমেন্ট দুটি নিয়ে জনমনে যেমন ইতিবাচক ধারণা রয়েছে, দুঃখজনক হলেও সত্য এগুলো তেমন প্রভাবের ধারেকাছেও নেই।"
বাড়িতে অবস্থানকারী ২১৪ জন কোভিড রোগীকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে, এদের একটি দলকে শুধু ভিটামিন সি'র উচ্চ মাত্রার ডোজ সেবন করতে দেন গবেষকরা। আরেকটি দলকে দেওয়া হয় একই পরিমাণে জিঙ্ক। তৃতীয় দলটিকে দুটি সাপ্লিমেন্ট উচ্চ মাত্রায় দেওয়া হয়। চতুর্থ আরেকটি দলকে সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন; পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পানি পান এবং জ্বর কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। তাদের কোনো সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়নি।
"উচ্চ ডোজের জিঙ্ক গ্লুকোনেট (জিঙ্ক), অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (ভিটামিন সি) বা দুটি সাপ্লিমেন্ট দুটি একসঙ্গে দিয়েও কারো সার্স কোভ-২ জীবাণু সৃষ্ট উপসর্গের উপশম হয়নি," বলছিলেন ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক থেকে গবেষণায় জড়িত টিমের সদস্য এবং বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মিলিন্দ দেশাই।
তবে সাপ্লিমেন্টগুলো উচ্চ মাত্রায় গ্রহণের ফলে রোগীদের মধ্যে বিরূপ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
কায়িনযোস অ্যাকিরিকা বলেন, "সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো ছিল; সর্দি, ডায়রিয়া এবং পেট ব্যথা। প্রথাগত চিকিৎসা নেওয়াদের মধ্যে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারীদের তুলনায় এমন প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম।"
জনপ্রিয় কিছু সাপ্লিমেন্ট:
ভাইরাসজনিত সর্দি ও ফ্লু মোকাবিলায় মার্কিনীরা ভিটামিন সি ও জিঙ্ক ব্যবহারে উৎসাহী।
বিশ্বাসটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণায় প্রতিষ্ঠিত- এমনটা নয়। ইতোপূর্বে দেখা গেছে,ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। তবে এতে কারো আক্রান্ত হওয়া ঠেকানো গেছে, তেমন প্রমাণ কখনোই পাওয়া যায়নি। যদিও, ইতোপূর্বের কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, ভিটামিন সি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের মধ্যে সর্দির মাত্রা ১৪ শতাংশ কমাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউড কিন্তু সর্দি লাগার পর তা সাড়াতে ভিটামিন-সি সাহায্য করে বলে মনে করে না।
সংস্থাটির অধীনেই সাম্প্রতিক গবেষণাটি করা হয়। সেখানে তারা জানিয়েছে, জিঙ্ক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীরের প্রতিরোধ কোষকে সাহায্য করতে পারে। "জিঙ্কের ঘাটতিতে প্রদাহ দেখা দেয় এবং তাতে করে অ্যান্টিবডি তৈরির পরিমাণ কমে যায় বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।"
তাই বলে অধিক পরিমাণে জিঙ্ক নিলেই কোভিড-১৯ এর মতো মারাত্মক রোগ সেরে যাবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং দৈনিক ৪০ মিলিগ্রাম জিঙ্ক নিলে মুখ শুকিয়ে যাওয়া, নাকে ও গলায় খুসখুসে ভাব, রুচি হারিয়ে ফেলা এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় পড়তে পারেন যেকোনো ব্যক্তি।
ভিটামিন সি'র ক্ষেত্রে এইমাত্রা অনেক বেশি, দিনে প্রায় ২০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খেলে বুকে জ্বালাপোড়া, পেট কামড়ানো, বমিভাব, ডায়রিয়া এবং মাথাব্যথা হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য ৭৫ মিলিগ্রাম এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি সেবনই যথেষ্ট।
- সূত্র: সিএনএন