শৌখিন জমিদারদের শখের গোলাপ বাগানে
নগরজীবনে হাঁপিয়ে উঠছেন? একটু ব্রেক চান? আপনি কি ঢাকায় থাকেন? তাহলে চমৎকার একটা ডে-আউটিং এর আইডিয়া দিতে পারি।
গোলাপ গ্রামের নাম শুনেছেন ইদানিং অনেকেই। গেছেনও কেউ কেউ। আমিও এ ব্যাপারে কিছুটা জানতাম। কখনও পড়েছিলাম বিরুলিয়ার সমৃদ্ধ জমিদার বাড়ির কথা যা কিনা কালের করাল গ্রাসে শ্রী হারিয়ে এখন ম্রিয়মান। তবে শৌখিন জমিদারদের শখের গোলাপ বাগান এখনও রয়েছে তার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিতে।
তবে যখন জেনেছিলাম তখন এলাকাটিতে যাতায়াতের পথ সুগম ছিল না। গাড়ি -নৌকা-পদযুগল, এই তিন বাহনই এস্তেমাল করতে হতো। ইদানিং দেশের উন্নয়নের জোয়ারে রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি উন্নত হয়েছে অভূতপূর্বভাবে। আজকাল গোলাপ বাগান দেখতে যাওয়া অতি সহজ। ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে গাড়িতে করে বাগানের চৌহদ্দিতে পৌঁছে একরের পর একর গোলাপ বাগানের রূপসুধা পান করে দিনে দিনেই ফিরতে পারেন নিজ ডেরায়।
তুরাগ নদীর উপর তৈরি হওয়া বিরুলিয়া সেতু ও গোলাপ গ্রাম অবধি তৈরী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের রাস্তা এই যাত্রাকে জলবৎ তরলং করে দিয়েছে।
এইতো সেদিন আমি সস্ত্রীক এই সহজ অথচ মনোমুগ্ধকর সফরটি করে এসেছি এবং পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছি। আমরা চট্টগ্রামে থাকি। ঢাকায় এলে সাময়িক ডেরা বাঁধি উত্তরা ১৮ নং সেক্টরের রাজউক এপার্টমেন্টসে আমার জন্য নির্ধারিত একটি ফ্লাটে। এখান থেকে গোলাপ গ্রাম সাকুল্যে ১০ কিলোমিটার দূরে হবে এইরকম একটা অনুমান ছিল আমার।
তিন দিনের কিছু খুচরো কাজ নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। সেই খুচরোগুলোর মধ্যে স্যান্ডউইচ হয়ে ঢুকে গেল গোলাপ বাগিচা।
বিভিন্ন নামে এর পরিচিতি আজকাল। গোলাপ গ্রাম, আশুলিয়া গোলাপ বাগান, বিরুলিয়া গোলাপ বাগিচা, আরো নানান। আসলে এই দৃষ্টিনন্দন গোলাপ বাগান গড়ে উঠেছে আশুলিয়া থানার বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহ্পুর গ্রামে এবং স্বভাবতই ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য ছড়িয়ে গেছে আশেপাশের এলাকায়। এখানকার জমি গোলাপ ফলনের জন্য অতি উপযোগী। তাই তো শতাব্দী পূর্বেও জমিদার বাড়ির আঙ্গিনা ভরে উঠত নানা রংয়ের গোলাপে। বিএডিসির সাইনবোর্ড দেখলাম এলাকায়। বুঝলাম সরকারের কৃষি দপ্তরও এই এলাকার বিশেষত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং এর উন্নয়নে সহযোগী।
এখানকার মূল ফলন গোলাপের। তবে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা ও গ্লাডিওলাসও হয় বেশ ভালো পরিমাণে। কয়েক শত একর জমিতে চলছে ফুল চাষ। গাড়ি থেকে নেমে গোলাপের সমারোহে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। ব্যাক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় সবাই যার যার বাগান ঘেরা দিয়ে রেখেছেন। এ বলে আমায় দেখ। ও বলে আমায়। কোন দিকে যাই? হাঁটতে থাকলাম সব দিকে তাকাতে তাকাতে। মাঝে মাঝে থেমে তুলে নিলাম কিছু ছবি।
গোলাপ গ্রাম নামটি সরকারি খাতায়ও উঠে গেছে দেখলাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পথনির্দেশিকায়। এলাকাটি ইতোমধ্যেই পর্যটনের একটি গন্তব্য হয়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে ফুল, ফুলজাত পণ্য, খাবার-দাবার, স্মারক দ্রব্যের দোকান।
আছে সাময়িক গাড়ি ও মোটরবাইক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। কোনো কোনো বাগানে বন্দোবস্ত রয়েছে রেস্ত'র বিনিময়ে বাগানে ঢুকে গোলাপ বালার সন্নিকটে গিয়ে ফটোসেশনের। আমরা কেবল ঘণ্টা দুয়েক কাটালাম৷ সেই স্বপ্নপুরীতে। আপনি এক বেলা এমনকি পুরো দিনও কাটাতে পারেন সেখানে। আজ কার্যদিবসে যেমন লোকসমাগম দেখলাম, অনুমান করা গেলো ছুটির দিনে ওখানে হয় জনসমুদ্র।
নগরজীবনের কৃত্রিমতা থেকে দম ফেলতে মানুষ ছুটে আসেন এখানে। আপনিও ঘুরে আসুনসুবিধাজনক সময়ে। এখানে নিকটবর্তী এক বাজারে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা ফুলের হাট হয়। সেটাও দেখার মতো। ঢাকা শহরের গোলাপের চাহিদার সিংহভাগ মেটায় আমাদের বিরুলিয়া এলাকা। দেশের অন্য অনেক জায়গায় যায় এখানকার ফুল।
গোলাপ গ্রামের উত্তরোত্তর উন্নয়ন হোক, এই কামনা করি।
যারা যেতে চান তারা আশুলিয়া-মিরপুর তুরাগ বেড়িবাঁধ হয়ে বিরুলিয়া সেতু পার হবেন। ৪/৫ কিলোমিটার এগোলে পাবেন একটি চৌরাস্তা। সেখান থেকে বাঁদিকে তিন/ চার কিলোমিটার এগোলেই পৌঁছে যাবেন অভীষ্ট গোলাপ গ্রামে।