পারমিতার প্রতিদিন: শিশু পালনে বাংলা ভাষায় মম ভ্লগিং
মিথিলা (ছদ্মনাম) ও রাহাত (ছদ্মনাম) তাদের প্রথম সন্তান নিহিলি (ছদ্মনাম)-কে নিয়ে বেশ চিন্তিত। দশমাস পেরিয়ে নিহিলির বয়স এগারো মাসে পড়লো, অথচ দাঁত ওঠার কোনো নামগন্ধ নেই। এ নিয়ে মিথিলা-রাহাত দম্পতিরও চিন্তার কোনো অন্ত নেই। যদিও একাধিকবার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তারা, তাও আশানুরূপ কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। মিথিলা-রাহাত দম্পতি নব্য মা-বাবা হিসেবে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, তা আমাদের দেশে নতুন নয়। শিশু কেন খাচ্ছে না, শিশু কেন ঘুমাতে চায় না কিংবা শিশু কেন হামাগুড়ি দিতে চায় না- এমন প্রশ্ন নতুন মা-বাবাদের মাথায় প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খেতে থাকে। প্রশ্নের উত্তর পেতে প্রত্যেক মুহূর্তে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করাও হয়তো তাদের পক্ষে করা সম্ভব হয় না।
এমন সমস্যা সমাধানে, অর্থাৎ শিশুর যত্নে মা-বাবার কী করণীয় হতে পারে তা সাবলীলভাবে ভিডিওর মাধ্যমে উপস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন পারমিতা হিম। সহজ ভাষায়, শিশু পালন করতে গিয়ে বাবা-মায়েরা যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হন, সেসব প্রশ্নের উত্তর নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ভিডিওর মাধ্যমে উপস্থাপন করেন পারমিতা। এই কাজটি তিনি করে থাকেন 'পারমিতার প্রতিদিন' নামক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে। হিমের মতোই শীতলভাবে পারমিতা হিম সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিশু যত্নের খুঁটিনাটি।
সন্তানের সাথে দৈনন্দিন জীবনের নানা কর্মকাণ্ড মাধ্যমে উপস্থাপনের বিষয়টি 'মম ভ্লগিং' হিসেবে পরিচিত। আমাদের দেশে মম ভ্লগিং অতটা জনপ্রিয় না হলেও পশ্চিমে এর ব্যাপক প্রসার রয়েছে। ২০২২ সাল থেকে বাংলা ভাষায় মম ভ্লগিং এর কাজ করে যাচ্ছেন পারমিতা হিম। আর এ কাজে পারমিতাকে সঙ্গত দিচ্ছে তার দশ মাস বয়সী সন্তান এমিল। খুদে এমিলের হাসি-কান্নার সাথে সাথে সন্তান পালনে অভিভাবকদের কী করা উচিত কিংবা অনুচিত তা-ই প্রতিনিয়ত তুলে ধরছেন পারমিতা।
যেভাবে শুরু হলো পারমিতার যাত্রা
মম ভ্লগিং বিষয়টি সম্পর্কে পারমিতা হিম প্রথম জানতে পারেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। ইনস্টাগ্রামে প্রথম মম ভ্লগ নিয়ে ভিডিও দেখেন। এক্ষেত্রে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের একজন অধ্যাপককে দেখে, যিনি ইনস্টাগ্রামে শিশুদের নিয়ে মম ভ্লগ করতেন। আকর্ষণীয় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ভিডিও বানানো সেই মম ভ্লগার সম্পর্কে পারমিতা নিউইয়র্কের একটি ম্যাগাজিনের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। সেখানে সেই ভ্লগারকে নিয়ে প্রকাশিত ফিচার পড়ার মাধ্যমে তার মনোজগতে পাকাপোক্তভাবে ঠাঁই পায় বিষয়টি।
মম ভ্লগ সম্পর্কে যখন পারমিতার জানাশোনার সূত্রপাত ঘটে, তখনো এমিলের জন্ম হয়নি। নিছক ভালোলাগা থেকেই নিয়মিত দেখতেন মম ভ্লগ। পারমিতা বলেন, 'মম ভ্লগ দেখতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমাদের বাংলাতে আমরা মম ভ্লগ বলতে কেন বুঝি যে শুধু বাচ্চাকে একটা ড্রেস পড়ালাম আর বাচ্চার একটা ছবি দিলাম, আমাদের সেলিব্রেটিরা যেগুলো করে আরকি। কিংবা বাচ্চা একটা দুষ্টুমি করেছে, আমরা সেটার একটা ভিডিও করলাম- এর বাইরে কিছুনা।'
মম ভ্লগের বিশাল দুনিয়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষের এমন ক্ষুদ্র ভাবনা দেখে এবং নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা থেকেই এই জগতে পা রাখেন পারমিতা হিম। প্রথম থেকেই পারমিতার ইচ্ছে ছিলো তিনি ভিন্ন কিছু করবেন। যা মানুষকে বিনোদনও দেবে আবার শিক্ষাও দেবে, যার আসলে মূল্য থাকবে।
পারমিতা বলেন, 'যখন আমার বাচ্চা হলো ২০২২ সালের জুন মাসে, তার আগ পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে আমি খুব ভালো করে জানি। এমন কোনো কিছু নেই দুনিয়াতে, যেটা সম্পর্কে আমি জানিনা। কিন্তু তখনই প্রথমবার আমি উপলব্ধি করলাম যে শিশুর দেখাশোনা এমন একটি বিষয়, যা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। সত্যি কথা বলতে আমি খুব ধাক্কা খেয়েছিলাম এটা ভেবে যে আমার যদি এই অবস্থা হয়- যেখানে আমরা চাইলেই গুগল করতে পারি, ইন্টারনেট হাতের কাছে, চাইলে ডাক্তারদের ম্যাটারিয়ালগুলো পড়তে পারি কারণ ওপেন সাইট রয়েছে; সেখানে যাদের ইন্টারনেট নেই তারা কী করে!'
তখন পারমিতার ভাবনায় আসে, এক্ষেত্রে ভাষা তো সবচেয়ে বড় বাধা। কারণ গবেষণাগুলো ইংরেজিতে হওয়াতে যারা ইংরেজি কম জানেন তারা এমন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। এমন ভাবনা থেকেই পারমিতা ঠিক করলেন, বাংলা ভাষায় সহজভাবে মম ভ্লগিং করবেন যাতে শিশুর যত্ন কীভাবে হতে পারে সে সম্পর্কে সকলে ওয়াকিবহাল হতে পারেন।
অভিজ্ঞতাই যখন মূখ্য বিষয়
মম ভ্লগিং এ পারমিতা বেছে নেন নিজের অভিজ্ঞতাকে। অর্থাৎ এমিলকে পালন করতে গিয়ে পারমিতা যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হতেন সেগুলো সম্পর্কে অধ্যয়ন করে ভিডিও তৈরি করতেন। প্রথম দিকে ফেসবুকে এবং ইউটিউবে ৩০ সেকেন্ডের রিল বানানো শুরু করেন। এতে ভীষণ সাড়া পান পারমিতা হিম। সেসব রিলেরই কমেন্ট বক্সে সাধারণ মানুষ শিশু যত্ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন। পরবর্তী সময়ে পারমিতা চেষ্টা করতেন, এমিলের দৈনন্দিন জীবনে চলমান বিভিন্ন ঘটনার সাথে মিলিয়ে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে।
পারমিতা বলেন, 'আমি যেগুলোর মুখোমুখি হয়েছি, সেগুলো নিয়ে আমি কথা বলতে চাই। কারণ অনেক কিছু আছে যেগুলো আপনি যদি নিজে ফেস না করেন, যেমন অনেক বাচ্চার প্রি-ম্যাচিওর জন্ম হয়; প্রি-ম্যাচিওর জন্ম যদি হয় তাহলে সেই বাচ্চার অন্তত চার বছর পর্যন্ত জীবন অন্যরকম হয়। আবার ধরেন কারো যদি যমজ বাচ্চা হয়, সেই বাবা মায়ের জার্নি হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেগুলো নিয়ে কিন্তু আমি কথা বলি না। আমার মনে হয়, এই জার্নিটা এরকম যে আপনি যদি এটার ভেতর দিয়ে না যান, তাহলে এটা বোঝা খুবই কষ্টকর।'
পারমিতা হেসে আরো বলেন, 'বাচ্চার মল কী রঙের হয়, এটা নিয়ে যে বাবা মা কত ধরনের টেনশনে পড়তে পারে, তা বাবা-মা না হলে কখনোই বোঝা সম্ভব না। যেসব বাবা-মা বাচ্চার সাথে জড়িয়ে থাকেন, কেবল তারাই এই বিষয়টি বুঝতে পারেন। এটা শুনতে খুব হাস্যকর শোনায়, কিন্তু এখান থেকে যে উদ্বিগ্নতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, এটা যারা বাবা মা একমাত্র তারাই বুঝবে। এজন্য আমি সেসব বিষয় নিয়েই কথা বলি, যেগুলোর মধ্যে দিয়ে আমি নিজে গিয়েছি।'
কোন খাবার শিশুর গলায় আটকাবে না, শিশু মাথায় কীভাবে আঘাত পাবে না, গরমে শিশুর যত্ন কীভাবে নিতে হয়, শিশুর জন্য নিরাপদ ঘর বা শিশুর খাবারের রুটিন- এসব বিষয় নিয়ে ভিডিও বানানোর ধারণা পারমিতা হিম তার সন্তান এমিলের মাধ্যমেই পান। এমিলের ছোট ছোট দুষ্টুমি তাকে উদ্বুদ্ধ করে নতুন কিছু তৈরি করার।
স্ক্রিপ্ট তৈরিতে দেন পূর্ণ মনোযোগ
পারমিতা হিমের বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও তৈরির মূল হাতিয়ার গবেষণাপত্র ও ডাক্তারের সাহচর্য। ভিডিও তৈরি, স্ক্রিপ্ট তৈরি এবং এডিটিং এর কাজও পারমিতা নিজের হাতেই করেন। একটা সময়ে পুরোদমে সাংবাদিকতার কারণে কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে হয় কিংবা ভিডিওর কাজ করতে হয়, তা পেশাগতভাবেই শিখেছিলেন। সেটিই এখন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারছেন বলে মনে করেন পারমিতা হিম।
প্রথমদিকে পারমিতা চেষ্টা করতেন প্রত্যেক ভিডিও সুক্ষ্মভাবে তৈরি করার। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলেন যে মম ভ্লগিং ব্যবহারিক কোনো বিষয় নয়। এটি আসলে দৈনন্দিন জীবনের চলমান ঘটনা। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কন্টেন্ট এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় লেখনী বা স্ক্রিপ্ট। পারমিতার মতে, বাসা অগোছালো থাকলে বা কাঙ্ক্ষিত সঙ্গীত ভিডিওতে ব্যবহার না করার ফলে গ্রাহকপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে না। বরং কন্টেন্ট যদি ভালো থাকে এবং লেখনী যদি ভালো থাকে, তাহলে মানুষ বেশি আকর্ষিত হয়। বাংলা ভাষায় কতটা সহজভাবে বললে মানুষ বুঝবে- সেদিকেই সবসময় নজর দেন পারমিতা।
পারমিতা বলেন, 'আমি যখনই কিছু করি, হয় মোবাইলে ভিডিও করে রাখি বা মোবাইলটা দূরে কোথাও ছেড়ে রাখি, যাতে ভিডিওটা নিজে নিজে রেকর্ড হয়। আমার মোবাইলেই আমি সব ভিডিও করি। রাতে এমিল যখন ঘুমিয়ে যায়, তখন চিন্তা করি যে আজকে তাহলে এই বিষয়টি নিয়ে কিছু বানানো যেতে পারে। সেদিনের একটা ভিডিও আমার কাছে থাকে, দরকার হলে আগের ভিডিওর সাথে এটাকে কিছুটা যুক্ত করে দেই। আমি আসলে সময়টা ব্যয় করি গবেষণা ও লেখার পেছনে।'
পরিবার থেকে পূর্ণ সমর্থন ও সাহায্য পান পারমিতা হিম। যখন ভিডিও তৈরি বা লেখার কাজ থাকে, তখন পরিবারের অন্যান্য সদস্য এমিলকে সামলে রাখেন।
প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে কন্টেন্ট তৈরি করার বিষয়টিকে ভীষণভাবে উপভোগ করেন পারমিতা হিম। যার জন্য কোনোরূপ ক্লান্তি অনুভব না করে একটানে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। পারমিতা বলেন, 'এখানে আমি যদি আধঘন্টা সময় দিই, এটাতে অনেক মানুষের উপকার হয়। আর এটাতেই আমি বেশ আনন্দ বোধ করি।'
পারমিতা'স বেবি ব্লিস
'পারমিতার প্রতিদিন' ছাড়াও 'পারমিতা'স বেবি ব্লিস' নামক একটি অনলাইন পেজ পারমিতার রয়েছে। সেখানে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়। তাছাড়া পারমিতার বর্তমান অবস্থান নিউইয়র্কে হওয়ায় সেখানে শিশুদের জন্য যা যা পাওয়া যায় সেগুলো তিনি বাংলাদেশে পাঠান।
পারমিতা বলেন, 'অনেকগুলো জিনিস এখানে পাওয়া যায়। নিউইয়র্কে যেহেতু মানুষ কম, তাই মানুষের কাজগুলো যন্ত্র করে। যেমন ব্রেস্ট পাম্পের কথা ধরুন। বুকের দুধ স্টোর করে রেখে খাওয়ানো যায় বাচ্চাদের, বুকের দুধ নষ্ট না করে সেটা দিয়ে বাচ্চাকে গোসল করানো যেতে পারে, বাচ্চা যদি ব্যথা পায় সেখানে বুকের দুধ লাগানো যেতে পারে বা বাচ্চার স্কিন যদি রাফ হয়, সেখানে দেয়া যেতে পারে- বুকের দুধের এত ধরণের গুণ আছে। এটা কিন্তু বাংলাদেশের মায়েরা, বাবারা জানে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এটা নিয়ে এত ধরনের কুসংস্কার রয়েছে যে আপনি যদি বুকের দুধ সংরক্ষণ করেন তাহলে মনে করা হয়- এটা নষ্ট হয়ে যাবে বা এটা বিষ হয়ে যাবে। কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, এগুলো নিয়ে কোনো ধারণা নেই।'
পারমিতার পরিবারের সদস্যরাই পারমিতা'স বেবি ব্লিসের দেখভাল করেন। পারমিতা নিজের সন্তানের জন্য যা যা কেনেন, সেগুলোই তিনি বাকি শিশুদের জন্য কিনে দেশে পাঠান। বাকি কাজ বাংলাদেশ থেকে পারমিতার পরিবারের সদস্যরা সামলান।
দূর করতে চান কুসংস্কার
'প্রথম প্রথম যখন এক-দুইটা ভিডিও দিতাম, তখন আমি মানুষের কমেন্টগুলো দেখতাম, বিশেষ করে মেয়েদের কমেন্টগুলো দেখতাম। কমেন্টগুলো দেখে বোঝা যায় যে ওরা কতটা অসহায়, কতটা কম জানে। তখন যে যেটা বলে সেটাই শুনতে হয়; আবার কেউ যদি মনেও করে যে এটা ঠিক না, সে ওই তথ্য কোথায় গিয়ে যাচাই বাছাই করবে সেই জায়গাটা তার কাছে নেই। তখন আমার মনে হয়েছিলো, আমি যেগুলো জানি সেগুলো যদি শেয়ার করি তাহলে ওদের হয়তো কিছুটা উপকার হবে,', মম ভ্লগ তৈরির অনুপ্রেরণার গল্প বলতে গিয়ে জানান পারমিতা।
'আমাদের দেশে একটি বিষয় খুবই কমন, মা যদি বলে যে বাচ্চাটা ভালো বা সুন্দর ছেলে- এটাও নিষেধ। বলা হয় মুখ লাগবে বা নজর লাগবে। অনেকেই মনে করে, বাচ্চার ছবি যদি ফেসবুকে দেয়া হয় বা অনেক মানুষ যদি বাচ্চাকে সুন্দর বলে বা ভালো বলে বা হেলদি বলে তাহলে ওর অসুখ হবে। আমি যখন এরকম কমেন্টগুলো দেখতাম, আমার তখন মনে হতো যে এই জায়গাটায় কাজ দরকার বা এই বাধাগুলো ভাঙ্গা দরকার। এটাই আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।'
মায়েদের জন্য কোনো বার্তা আছে কিনা জানতে চাইলে পারমিতা বলেন, 'যখন নিজেদের সময়টা পার হয়ে যায়, আরেকজনের সময় আসে- তখন যেন তাকে বিবেচনায় রাখা হয়। তখন যাতে নিজেদের সময়টা মনে রাখে। নিজেরা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন, নানান কারণে হতে পারে হয়তো পরিবার থেকে সমর্থন পাননি বা আর্থিক সমস্যাও হতে পারে। যে জিনিসগুলো তারা পায়নি সেটা যেন আরেকজনকে ওরা দেয়। ওরা যাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।'
শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ কিংবা প্রবাসী বাঙালিদের কাছ থেকেও বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন তিনি। ফেসবুকের 'পারমিতার প্রতিদিন' এর পেজে ১ লাখ ১ হাজারের বেশি অনুসারী রয়েছে।
পারমিতার ভাষ্যমতে, অনেকসময়েই দেখা যায় তার কাছে অনেক মানুষ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন বুঝতে আসেন। তাই ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে পারমিতার মন্তব্য, তারা যেন রূঢ় না হয়ে অভিভাবকদের প্রেসক্রিপশনটি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেন। তাহলে অভিভাবকেরা অনেক উদ্বেগ থেকে বেঁচে যেত বলে ধারণা তার।
তৈরি করতে চান বয়স অনুযায়ী গাইডলাইন
পারমিতার মতে, শিশু যত্ন নিয়ে বিভিন্ন ধারণা বা গাইডলাইন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া প্রয়োজন। তাদের ওয়েবসাইট থেকে বা ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
তিনি বলেন, 'আগে আমরা বিটিভিতে দেখতাম জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো। এখন আমার কাছে মনে হয় বেশি বেশি করে সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা দেওয়া উচিত। তাহলে মানুষের অনেক উপকার হবে।'
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে পারমিতা শিশুদের নিয়ে কুসংস্কার দূর করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'আমি প্রত্যেক বয়স অনুযায়ী কিছু পাবলিকেশন, লেখালেখি এবং ভিডিওসহ কিছু গাইডলাইন করবো। এমন একটা পেজ সাজাবো, যেখানে নতুন বাবা-মায়েরা ঢুকলে তাদের মনে যত প্রশ্ন থাকবে, সেগুলোর উত্তর পাবেন।'
পারমিতার পরবর্তী লক্ষ্য 'আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব পিডিয়াট্রিশন' (এএপি) এর মতো একটা পেজ সাজানোর। কারণ সেখানে আমেরিকার শিশু বিশেষজ্ঞরা কোন বিষয়ে কী উপদেশ দিচ্ছেন, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাজানো থাকে। পারমিতা বলেন, 'আমি এটা অনুসরণ করি। আমি এমন একটা পেজ তৈরি করতে চাই এই কারণে যাতে কখনো না কখনো আমাদের রাষ্ট্র যেন এই কাজটি করে।'
তিনি আরো বলেন, 'আমি যেটা মনে করি, বাংলাদেশের অনেক ডাক্তার এখনো অনেক আধুনিক টেকনিক, মেথড সম্বন্ধে অবগত নন। অনেকেই বলেন যে ছয় মাসে সলিড খাবার খাওয়ানোর জন্য বা অনেকেই এখন বয়স দেখে ঔষধের পরিমাণ দেয়। যেটা নিউইয়র্কে একেবারেই নয়, এখানে শিশুর ওজন মেপে ঔষধ দেয়া হয়। সেই জিনিসটা এখনো বাংলাদেশে পৌঁছায়নি। আমি চাচ্ছি আধুনিক মেথড ও গবেষণাগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে।'
তার মতে, প্রতিনিয়ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। বর্তমানে বাবা মায়েদের সচেতনতাও আগের থেকে অনেক বেড়েছে। তাই তাদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে 'পারমিতার প্রতিদিন'কে প্রতিষ্ঠিত করতে চান পারমিতা হিম।