অ্যাসপিরিন যেভাবে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকপরবর্তী ঝুঁকি কমায়
একবার হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক হলে ওই রোগীর আবার একই পরিণতি হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। সেক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে অ্যাসপিরিন গ্রহণের ফলে ফের হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। কিন্তু তবুও বিশ্বব্যাপী এই ঝুঁকিতে থাকা অর্ধেকেরও বেশি রোগী ঔষধটি গ্রহণ করেন না।
সম্প্রতি জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এর এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে গবেষকেরা ২০১৩ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৫১টি দেশের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমীক্ষা প্রতিবেদনের পর্যালোচনা করেছেন।
এক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ফের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের শতকরা ১৭ ভাগ অ্যাসপিরিন গ্রহণ করেন। আর উচ্চ আয়ের দেশের একই রোগীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা শতকরা ৬৫ ভাগ।
প্রকাশিত গবেষণাটির মূল লেখক ছিলেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ফেলো সাং গুনে ইউ। তিনি জানান, গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে গড়ে মাত্র ৪০ ভাগ রোগী ফের হৃদপিণ্ড সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় অ্যাসপিরিন গ্রহণ করেন।
সাং গুনে ইউ বলেন, "স্বল্প মাত্রায় অ্যাসপিরিন ব্যবহারের উপকারিতা সকলকে জানাতে হবে। হৃদপিণ্ডের রোগ মোকাবিলায় আরও বহু কাজ করতে হবে। কেননা বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর এটি অন্যতম কারণ।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবমতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় এক কোটি ৭৯ লাখ ব্যক্তি হৃদপিণ্ড সংক্রান্তরোগে প্রতিবছর মৃত্যুবরণ করেন। এক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডের সুরক্ষা হিসেবে অ্যাসপিরিন গ্রহণের পরামর্শ ঠিক কোন ক্ষেত্রে প্রদান করা উচিত, সেটি জানতে হবে।
বহু আগে থেকেই চিকিৎসকেরা মধ্যবয়সী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত স্বল্প মাত্রায় অ্যাসপিরিন গ্রহণের পরামর্শ দেন। তবে ২০২১ সালে মার্কিন প্রিভেন্টিভ সার্ভিসেস টাস্ক ফোর্স পরামর্শটির যথার্থতা নিয়ে ফের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।
সেক্ষেত্রে সংস্থাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত নেয় যে, হৃদপিণ্ডের রোগের প্রাথমিক সুরক্ষা হিসেবে চিকিৎসকদের প্রতিনিয়ত অ্যাসপিরিন গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করা উচিত নয়। কেননা এক্ষেত্রে উপকারের চেয়ে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।
এ সম্পর্কে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির নিউরোলজির ক্লিনিক্যাল প্রফেসর নিল শোয়ার্টজ জানান, হৃদপিণ্ডের অসুখে ভুগতে থাকা যেসব রোগীর ডায়েবেটিস, হাইপারটেনশন কিংবা হার্ট অ্যাটাকের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা নেই, তাদের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন গ্রহণ না করাই উত্তম। সেক্ষেত্রে উপকারের চেয়ে অপকারের সম্ভবনাই বেশি।
তবে ইতোমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের সম্মুখীন হয়েছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে আবার অ্যাসপিরিন বেশ কার্যকরী। কেননা এটি ফের হার্ট অ্যাটাকের মতো হৃদপিণ্ডের দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমিয়ে ফেলে।
গবেষণায় দেখা যায়, গড়ে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন ব্যক্তি প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাকের সম্মুখীন হয়। আর গড়ে প্রতি চারজন ব্যক্তির মধ্যে একজন পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় স্ট্রোকের সম্মুখীন হন।
তবে হৃদপিণ্ডের রোগে ভুগতে থাকা কিছু রোগীর ক্ষেত্রে থেরাপি হিসেবে অ্যাসপিরিন ব্যবহার উপকারী নয় — বিশেষ করে যাদের রক্তক্ষরণের সম্ভবনা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, নিয়মিত অ্যাসপিরিন গ্রহণ শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, হৃদপিণ্ডের রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের ঝুঁকি কম, তারা এটি গ্রহণের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া জানতে পেরে গ্রহণ বন্ধ করে দেন। সেটি অবশ্যই যথাযথ সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিপত্তি বাধে যখন তাদের দেখাদেখি যারা ফের হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তারাও অ্যাসপিরিন গ্রহণের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিচলিত হতে থাকেন।
এ ঘটনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমেরিকান সোসাইটি ফর প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজির প্রেসিডেন্ট মার্থা গুলাটি বলেন, "যেসব রোগী ইতোমধ্যেই হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের ভুক্তভোগী, তারাও কম ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের দেখাদেখি অ্যাসপিরিন গ্রহণ বন্ধ করে দেন।"
মার্থা গুলাটি জানান, ঝুঁকিতে থাকা রোগীরা আবার অনেক সময় ঔষধ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে অন্য ঔষধ রেখে অ্যাসপিরিন গ্রহণ বন্ধ করে দেন। যদিও এই ঔষধটির দাম তুলনামূলক কম। তবুও আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের অনেকেই অর্থ সাশ্রয় করতে অ্যাসপিরিন গ্রহণ বন্ধ করে দেন।
মূলত মার্থা গুলাটি তার কাছে আসা রোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, "অনেক সময় ঝুঁকিতে থাকা রোগীরা অ্যাসপিরিন গ্রহণের গুরুত্ব বুঝতে পারেন না। কিন্তু এক্ষেত্রে চিকিৎসক যদি ঔষধটি গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করেন, তবে কোনোভাবেই সেটি এড়িয়ে চলা উচিত নয়।"