‘হ্যালো, আপনি কি ইংরেজি বলতে পারেন?’: সন্দেহজনক কলের ফাঁদে পড়লে যা হতে পারে
"হ্যালো, আমি স্ন্যাপচ্যাট মার্কেটিং কোম্পানি থেকে মারিয়া বলছি। আপনি কি ইংরেজি বলতে পারেন?"
ইতোমধ্যেই আপনি হয়ত অপরিচিত নম্বর থেকে এমন কল পেয়েছেন। এক্ষেত্রে একেক সময় একেক কলদাতা ও কোম্পানির নাম বলা হয়। কথা বলার উচ্চারণভঙ্গিও থাকে কিছুটা বিদেশিদের মতো, যা সহজেই অস্বাভাবিক বলে মনে হয় না। এক্ষেত্রে কণ্ঠস্বর অনেকটা আফ্রিকান, পূর্ব এশিয়ান, ভারতীয় বা স্থানীয়দের মতো শোনাতে পারে।
মনোযোগ সহকারে শুনলে আপনি কলদাতার ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রায় একই ধরনের কথা শুনতে পাবেন। এগুলি হয়ত অপর পাশ থেকে আপনি ছাড়াও যে অন্যান্যদের কল দেওয়া হচ্ছে; সেটার শব্দ। যেমনটা আমাকে কল দিয়েছিল মারিয়া নামের একজন।
এক্ষেত্রে কলদাতা অনলাইনে সহজ এবং অবশ্যই লোভনীয় কাজের প্রস্তাব করেন। তবে তার দুর্বল ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা সম্ভবত প্রতারণা বুঝতে সহায়ক হতে পারে।
গতবছর আমার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে বাড়িতে বসেই কাজ করার প্রস্তাব এসেছিল। সেখানে সহজে হাজার হাজার টাকা উপার্জনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
এমন মেসেজ বারবার পাওয়ার পর আমি গত ১৫ আগস্ট তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে ব্যাপারটি বোঝার চেষ্টা করি। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, যখনই ধোঁকা খাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন আমি তাদের নির্দেশনা অনুসরণ থেকে সরে আসি।
যাই হোক, গত কয়েক মাসে এমন ফোনকলের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। যেখানে বলা হয়, "হ্যালো, আমি এক্স কোম্পানি থেকে ওয়াই কল করছি। আপনি কি ইংরেজি বলতে পারেন?"
কল হোক কিংবা টেক্সট মেসেজ, এটা পরিষ্কার যে, উভয় ক্ষেত্রেই প্রায় একই গ্রুপের মানুষের থেকে প্রস্তাবগুলো আসে। যদিও কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, তবে কাজের প্যাটার্ন সেই একই রয়েছে। গত আগস্ট মাসে তারা আমাকে ১৫০ টাকার বিনিময়ে কাজ শুরু করতে বলেছিলেন। কিন্তু এবার দ্বিগুণ হারে, অর্থাৎ ৩০০ টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
আমি অন্তত এমন ২০ জনের সাথে কথা বলেছি যারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন যে, তারাও প্রায় একই ধরনের ফোনকল পেয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই কলটি এড়িয়ে গিয়েছেন; আবার কেউ কেউ আমার মতো বিষয়টি একটু যাচাই করেছেন।
বিষয়টি যাচাই করে দেখা
ঘটনাটি শুরু হয় অনেকটা এমন মেসেজ দিয়ে, যেখানে লেখা হয়, "অভিনন্দন। আপনার কাজ হলো এই দুটি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করা। (লিংক ও স্ক্রিনশট দেওয়া থাকে)।"
সেখানে উদাহরণস্বরূপ আপনাকে রকমারি কিংবা এটিসি অ্যান্ড্রয়েড টোটো কোম্পানি নামের দুটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে বলা হয়। মেসেজে আরও বলা হয়, "আমরা বাকি কাজগুলো টেলিগ্রামে করবো। আপনার কি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট রয়েছে?"
ঠিক এই পন্থায় টেলিগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। কেননা সেখানে প্রেরকের নম্বর দেখানোর প্রয়োজন হয় না। একইসাথে সেখানে চ্যাট কিংবা অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি ডিলিট করা যায়। যেমন, আগস্টে তারা যে টেলিগ্রাম আইডি থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে সেটি ইতোমধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপের ঐ ব্যক্তি একটি 'ইনভাইটেশন নম্বর' কিংবা 'কোড' দিয়ে থাকে। একইসাথে টেলিগ্রাম আইডিও দিয়ে থাকেন যেটিকে 'রিসিপশনিস্ট' বলা হয়।
পরবর্তী ধাপে টেলিগ্রামে গিয়ে রিসিপশনিস্ট আইডিতে যুক্ত হয়ে সেখানে কোডটি শেয়ার করতে হয়। এক্ষেত্রে ঐ রিসিপশনিস্ট চ্যানেলগুলো শেয়ার করার জন্য আপনাকে পেমেন্ট পরিশোধ করবে।
তাই আমিও এই পন্থা অনুসরণ করে রিসিপশনিস্টের সাথে যোগাযোগ করি।
আগেরবার যোগাযোগ করতে হয়েছিল ফারিন নামের একজনের সাথে। আর এবার সাবেরা মেহরিন নামের একজনের সাথে। নাম যাই হোক না কেন, তারা বাংলাদেশি হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। কেননা তারা বাংলায় কিংবা বাংলিশে (বাংলা ও ইংলিশের মিশ্রণ) যোগাযোগ করে থাকেন।
রিসিপশনিস্টের কাছে মেসেজ পাঠানোর পর তার স্ক্রিনশট তুলে সেটি হোয়াটসঅ্যাপের ঐ নম্বরে পাঠাতে হয়। সম্ভবত, এর মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপের নম্বরের কাজ শেষ হয়। তারপর যা কাজ হয় তার পুরোটাই টেলিগ্রামে।
টেলিগ্রামে থাকা ব্যক্তিটি তখন আপনার কাছে ব্যক্তিগত প্রাথমিক তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইবে। যেমন, আপনার নাম, বয়স, লিঙ্গ, পেশা এবং কোন অ্যাকাউন্টে আপনি টাকা নিতে চান সেগুলো। এই তথ্যগুলো দেওয়ার পর প্রাথমিকভাবে আপনি হয়ত ঠিকই টাকা পাবেন।
কিন্তু এরপর শুরু হয় আসল ফাঁদ। তখন আপনাকে আরও ধনী হওয়ার আশা দেখিয়ে বড় বড় প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এগুলো হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে এত গুছিয়ে করা হয় যে, একজনের কাছে মনে হবে দুটি অ্যাপসে আসলে একই মানুষ হয়ত যোগাযোগ করছে।
সেখানে যুক্ত হওয়ার পর আপনাকে 'স্ন্যাপচ্যাট ডিজিটাল মিডিয়া' (আমার ক্ষেত্রে) কিংবা 'ওয়েলনেস সেশন' নামের একটি গ্রুপে যুক্ত করা হবে। এটিকে সাধারণত তারা টাস্ক গ্রুপ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
সেখানে আপনি ঐ গ্রুপে অন্যদেরকেও একই ধরনের টাস্ক শেষ করতে দেখবেন। ঐ গ্রুপে সাধারণত ২০ থেকে ৫০ জনের সদস্য থাকতে পারে।
আকাশ আহমেদ নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫০ জনের একটি গ্রুপে যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছিলেন। প্রতি তিনটি টাস্ক শেষ করার পর পেমেন্ট ইস্যু করা হতো। কাজগুলো অনেকটা এমন যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে হতো।
গ্রুপে অন্যান্য সদস্যরাও নিজেদের কাজের ও পেমেন্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করতে থাকেন। একইসাথে তারা আরও টাস্ক চাইতে থাকেন। তাই গ্রুপটি বেশ প্রাণবন্ত বলে মনে হয়।
তবে একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, স্ক্রিনশটগুলো বেশ সন্দেহজনক। প্রথমত, তাদের নাম ও ছবি বেশ অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়। বিশেষ করে তাদের যোগাযোগের ভঙ্গিতে অসংগতি দেখা যায়। কেননা কেউই এই পদ্ধতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করছে না।
সেখানে হয়তো আপনার মতো কিছু সত্যিকারের ব্যক্তি রয়েছে যারা টাকার আশায় যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু গ্রুপের বেশিরভাগই ঐ চক্রের অংশ হয়ে থাকেন। যারা অন্যদের মাঝে একটা কল্পনার জগৎ তৈরি করে যে, সবাই লাভ করছে আর আপনি ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছেন।
টাস্ক যেমন হয়ে থাকে
গ্রুপে টাস্কগুলো বেশ আচমকা দেওয়া হয়। দিনে ২৭ টির মতোও হতে পারে। যেখানে ইউটিউব সবাস্ক্রিপশন, রিভিউ, প্রি-পেইড টাস্ক (অর্থ বেশি থাকে) ছাড়াও পোস্ট পেইড টাস্ক দেওয়া হয়ে থাকে। অর্থাৎ, পোস্ট পেইড টাস্কে কাজটি শেষ করলে পেমেন্ট পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ, আমাকে ২৪০০ টাকার একটি প্ল্যানের জন্য প্রথমে ১৬০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছিল। যা থেকে ৮০০ টাকা লাভ দেওয়া হয়েছিল।
আর এখানেই হচ্ছে মূল চমক। কেননা বেশি সময় ধরে প্রি-পেইড টাস্ক থেকে বিরত থাকলে কাজটি সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। একইসাথে আপনাকে টাস্ক গ্রুপ থেকেও সরিয়ে দেয়া হবে।
প্রতি ২০ মিনিট পরপর টাস্ক দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে সময় খুব কম দেওয়ায় ততটা ভাববার সময় পাওয়া যায় না। প্রিপেইড কাজের জন্য ১ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত পাঠাতে হয়।
এক্ষেত্রে প্রথমদিকে কথামতো অর্থ ফেরতও দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১ হাজার টাকার বদৌলতে ১৩০০ টাকা, ২ হাজার টাকায় ২৬০০ টাকা, ৫ হাজার টাকায় ৭ হাজার টাকা ও ৩৫০০ হাজার টাকায় ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
প্রথমদিকে, বেশ কয়েকবার টাকা আয় করা সম্ভব হয়। আকাশ খান নিজেও তিনটি আলাদা পোস্টপেইড টাস্কে যুক্ত হয়ে ৯০০ টাকা আয় করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেই কাজে আর যুক্ত হননি বা যোগাযোগ করেননি।
তিনি বলেন, "তারা আমার সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছে। একইসাথে আমাকে প্রথম কয়েকটি টাস্কের জন্য টাকাও দিয়েছে।"
কিন্তু বর্তমানে গ্রুপটি বুঝতে পারে যে, আগে তারা কাদেরকে অর্থ দিয়েছিল। এক্ষেত্রে সম্প্রতি তারা আমাকে পেমেন্ট করতে অস্বীকৃতি জানায়। কেননা তারা বুঝে ফেলেছেন যে, আমি আগেও রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম এবং পরবর্তীতে প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে গিয়েছিলাম।
আমি তাদেরকে বললাম, "আমার তখন বিনিয়োগ করার মতো অর্থ ছিল না তাই আর করতে পারিনি। এখন আমি বিনিয়োগ করতে চাই।" তখন তারা আমাকে 'অ্যাডভান্স বেনিফিট অর্ডার' নামের নতুন একটি স্কিমের প্রস্তাব দেয়।
এই স্কিমের অধীনে মোট ১১ টি ধাপে আমি বিনিয়োগ করতে পারবো। যেখানে ১৬০০ টাকা থেকে ৬৪৪,৮০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হয়। প্রথমদিকে তারা আমাকে ১৬০০ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে ২৪০০ টাকা রিটার্ন দেওয়ার কথা বলেন। আর সর্বোচ্চ ধাপে প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ টাকার বিপরীতে ৮৩৮,২৪০ টাকা ক্যাশব্যাক দেওয়ার কথা বলেন। অর্থাৎ, এই স্কিমের অধীনে ৮০০ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা আদায়ের লোভনীয় অফার দেওয়া হয়।
আমি এমন মেসেজ পাই যে, "কাজের নিয়ম অনুযায়ী, অ্যাডভান্স প্রফিট অর্ডার জবের মানে হচ্ছে আপনাকে ১৬০০ টাকার অর্ডার অ্যামাউন্ট কিনতে হবে নিজের আয় বাড়াতে হলে। আপনি যখন ১৬০০ টাকার অর্ডার করবেন তখন কোম্পানি আপনাকে কমিশনসহ ২৪০০ টাকা দেবে।"
আমি এক্ষেত্রে রিস্ক নিয়ে ১৬০০ টাকা বিনিয়োগ করি দেখার জন্য যে, আসলে কী ঘটে। তখন তারা আমাকে এলেক্স উইলিয়াম নামের একজনকে মেন্টর হিসেবে যুক্ত করেন; যিনি আমাকে পুরো প্রসেসটিতে গাইড করে। এক্ষেত্রে যখন তিনি আমাকে একটি ডামি ক্রিপ্টো সাইটে অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলেন তখন আমি প্রায় নিশ্চিত হই যে, আমার টাকা জলে যাবে।
উইলিয়াম নামের ঐ ব্যক্তি আমাকে রেজিস্টার করার, ওয়ালেট খোলার, ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট যুক্ত করার পদ্ধতিগুলো স্ক্রিনশট আকারে দেখিয়ে দেন। অবশেষে তিনি আমাকে এমন এক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে নিয়ে যান যে, যেখানে দেখানো হয় আমার ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্টে ২৪০০ টাকা রয়েছে।
তারপর তিনি আমাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা তুলে ফেলতে বলেন। আমিও অ্যাকাউন্ট নাম ও নম্বর দিয়ে পরবর্তীতে বিকাশের মাধ্যমে টাকা তুলে ফেলতে পারি।
এরপর এটা নিশ্চিত হই যে, আমি যদি আবার বিনিয়োগ করি, তখন তারা দেখাবে যে আমার টাকা ঐ ডামি ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্টে যুক্ত হয়েছে। তখন একটা বড়ও রিস্ক থেকে যায় যে, আমি আমার টাকা আর ফেরত পাবো না। কেননা তাদের ওয়েবসাইট থেকে অটোমেটিক নয় বরং ম্যানুয়ালের মাধ্যমে আমি টাকা পেয়েছিলাম।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় আমাকে বহু অ্যাকাউন্টে স্ক্রিনশট পাঠাতে হয়েছে শুধু এটা নিশ্চিত করতে যে, আমি তাদের সাথে কাজ করছি। আমি তখন ভাবি যে, আমার আর ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না। অন্য কেউও এতদূর আসার উচিত হবে না।
আশ্চর্যজনকভাবে, তারা তখন আমাকে ৩০০ টাকার জয়েনিং বোনাস দেয় পরবর্তী লেভেলে যাওয়ার আগে। বেশ ভালো! আমি তখন সত্যিকার অর্থেই ভাবি যে, এর একটু শেষ দেখা দরকার।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে অনেকের মনে হতে পারে যে, এই স্কিমটি সম্ভবত ইউটিউব চ্যানেলে ক্লিক করার মধ্যে দিয়ে অর্থ আয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। কিন্তু স্কিমটি তখনই প্রশ্নবিদ্ধ হয় যে, যখন রকমারির ব্র্যান্ড স্ট্রাটেজির হেড মাহমুদ হাসান সাদি নিজেদের চ্যানেলে ক্লিকের বিনিময়ে অর্থ পরিশোধের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে অস্বীকৃতি জানায়। সেক্ষেত্রে এটা স্পষ্ট নয় যে, কেন এই কাজগুলোই কেলেঙ্কারিতে প্রথম পর্যায়ে দেওয়া হচ্ছে।
'কল স্পুফিং'
যে নম্বরগুলো দিয়ে যোগাযোগ করা হয় সেগুলোর বেশিরভাগই ফিরতি কল করতে গেলে আনরিচেবল দেখায়। কিন্তু এমনও নম্বর রয়েছে যারা আসলে জানে না যে, তাদের নম্বরগুলো এই স্কিমে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এটি মূলত কল স্পুফিংয়ের নিদর্শন। যেই প্রক্রিয়ায় কলার আইডিতে আসল নম্বর পরিবর্তন করে অন্য কোনো নম্বর বসিয়ে দেওয়া হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ৩৭ বছর বয়সি কৃষক উজ্জ্বল হোসেন থাকেন রাজশাহীর মোহানপুরে। আমার সাথে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের জন্য তার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু উজ্জ্বল এই সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এমনকি তার স্মার্টফোনই নেই।
কাজটি যেভাবে করা হচ্ছে
সাইবারসিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বিএম মাইনুল হোসেন বলেন, "তারা কলার আইডি স্পুফিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। এটি একটি প্রথাগত জাল কলিং কৌশল। এতে একজন কলার ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার কলার আইডি ডিসপ্লেতে মিথ্যা তথ্য প্রেরণ করেন, যাতে তার নিজের পরিচয় লুকানো যায়। এমনকি তারা অন্য নম্বর থেকে টেক্সট পর্যন্ত পাঠাতে পারেন।"
মাইনুল হোসেন মনে করেন, প্রযুক্তিগত দিক থেকে তাদেরকে খুঁজে বের করা একটু জটিল। কিন্তু পুলিশ অন্য পদ্ধতির ব্যবহার করতে পারেন যেখানে গ্রুপটির আচরণগত ধরণ বিশ্লেষণ করার মতো বিষয়গুলো আসতে পারে। একইসাথে এই ধরনের কেলেঙ্কারির জন্য তাদের একটি পৃথক সেল থাকা উচিত।
যা করা যেতে পারে
পুলিশ এখনও দায়ী গ্রুপটিকে খুঁজে বের করতে পারেনি। বর্তমানে তারা লোকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন এবং এই ধরনের কল বা টেক্সটগুলি এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের সহকারী কমিশনার মো. বায়েজিদুর রহমান বলেন, "যদিও আমরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি, তবে আমরা কেলেঙ্কারিটি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত। এমনকি আমি নিজেও এ ধরনের কল পেয়েছি।"
তিনি বলেন, "এটি একটি নতুন কৌশল; যা অপরাধীদের খুঁজে বের করা চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। অতীতে একই ধরনের কেলেঙ্কারিতে বিদেশিরা জড়িত থাকায় (ফোনে একই ধরনের কেলেঙ্কারির অতীত ঘটনা) আমরা এই ক্ষেত্রেও বিদেশিদের জড়িত থাকার সন্দেহ করছি।"
পুলিশ সন্দেহ করছে যে, কল স্পুফিং ছাড়াও কলকারীদের কাছে সিম কার্ডের বান্ডেল থাকতে পারে। যা বাতিল করার আগে তারা কয়েকটি কলের জন্য ব্যবহার করে।
সহকারী কমিশনার আশ্বস্ত করে বলেন যে, "এই সিম কার্ডগুলি প্রায়শই কোনও শনাক্তকরণ ছাড়াই কেনা হয়, তাই তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। যাইহোক, গ্রুপটির সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং তাদের ধরা কেবল সময়ের ব্যাপার।"
স্কিমটিতে জড়িত থাকা লোকেরা নির্দিষ্ট ফাঁকফোঁকরকে কাজে লাগায়। তিনি বলেন, "উদাহরণস্বরূপ তারা প্রায়শই অর্থ প্রদানের জন্য নগদ ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে একটি নগদ অ্যাকাউন্ট খুলতে শুধু একটি সিম কার্ডের প্রয়োজন হয়; আইডি কার্ড লাগে না।"
আপাতত এ ধরনের ফাঁদে পা দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছেন অধ্যাপক মইনুল হোসেন। তিনি বলেন, "এমনকি শিক্ষিত লোকেরাও এই ধরনের কেলেঙ্কারির ভুক্তভোগী হয়। পুলিশের উচিত প্রতারকদের ধরতে তৎপর হওয়া। তবে তার চেয়েও বড় কথা, জনগণকে আগে সতর্ক হতে হবে।"