কেন সবসময় উদ্ভট পোশাক পরেন জেফ বেজোস
বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন হয়েও পোশাক নিয়ে জেফ বেজোসের নাকি কোনো কাণ্ডজ্ঞানই নেই! ভালো জামাকাপড় কেনা কিংবা কোনো স্টাইলিস্টকে কাজে লাগানো বেজোসের জন্য কোনো ব্যাপারই না। তারপরও পোশাক নিয়ে বিতর্ক যেন আমাজন প্রতিষ্ঠাতা্র পিছু ছাড়ছে না। কিন্তু কেন?
আমেরিকার প্রয়াত ফ্যাশন জার্নালিস্ট অ্যান্দ্রে লিওন ট্যালের কথা মনে আছে? উদ্ভট সব পোশাক পড়ে মিডিয়ার সামনে হাজির হতেন অ্যান্দ্রে। জেফ বেজোসকে অবশ্য সেরকম মতো বলা চলে না। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তার মতো মাল্টিবিলিয়নিয়ার ব্যক্তির উদ্ভট পোশাক বেছে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সেটা না করলেও বেজোসের প্রতি মানুষের সার্বক্ষণিক নজর থাকবেই।
বরং এই অতিরিক্ত মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার জন্যই অন্যান্য ধনকুবেররা যেন একটু বেশিই ছিমছাম থাকে। ইলন মাস্কের সাদা শার্ট কালো স্যুট কিংবা জাকারবার্গের ধূসর কালো টিশার্ট এর উদাহরণ হতে পারে। আবার ওয়ারেন বাফেট ব্র্যান্ডেড দামী স্যুট পরে হাজির হয়েও এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন দেখে মনে হবে কোনো সাধারণ দোকান থেকে কেনা। পুঁজিবাদের অন্যতম সুবিধাভোগী বাফেটের পুরো একটি দেশ কিনে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। অথচ লক্ষ্মী বুড়ো দাদুর বেশ নিয়ে থাকাটা ওয়ারেন বাফেটের জন্য কোনো ব্যাপারই না!
তবে বেজোসের যেন এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই। মাস্ক কিংবা জাকারবার্গের মতো ইউনিফর্ম ধাঁচের একঘেয়ে পোশাক নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নন। তার স্পেসশিপ ভ্রমণে যাওয়ার পোশাকের কথাই ধরা যাক। ক্যাটক্যাটে নীল ফ্লাইট স্যুটের সঙ্গে কাউবয় হ্যাট চাপিয়ে মহাশূন্যে যান বেজোস। বলাবাহুল্য তার স্পেসশিপের আকৃতিটাও মানুষের কাছে উদ্ভট ও দৃষ্টিকটু ঠেকেছিল।
স্পেস স্যুটে হাতের কাফের ওপর দিয়েই হাতঘড়ি পড়তে দেখা গেছে বেজোসকে। শুরুতে সবাই নভোচারীদের কোনো বিষয় ভাবলেও শেষ পর্যন্ত দেখা গেল বেজোস ইতালিয়ান বিজনেস ম্যাগনেট জিয়ানি আনিয়েল্লিকেই নকল করেছেন।
অধিকাংশ মানুষের জন্যই ভালো পোশাক পরার অর্থ যা পরার পর দেখতে ভালো লাগবে। তবে দৃষ্টিনন্দন লাগলেও সেটা যেন খুব বেশি দৃষ্টিকটু না হয়, সেদিকে নজর রাখাও রুচিশীলতা প্রকাশ করে।
তবে বেজোস কিন্তু চিরকাল এমন ছিলেন না। দুই দশক আগের বেজোসকে দেখলে মনে হবে ছাপোষা মধ্যবিত্ত পুরুষ। পোশাক নিয়ে মাথা সম্ভবত কমই ঘামাতেন। বেজোসের আরও তরুণ বয়সের ছবিগুলোতেও তাকে দেখতে পুরোপুরি 'নার্ড' লাগবে, খাঁটিবাংলায় যাকে বলে আঁতেল।
তাহলে হঠাৎ করে কী এমন হলো? বেজোসের মাথায় আগে থেকেই টাক ছিল। ২০১৩ সালের দিকে প্রথম মাথা পুরোপুরি শেভ করতে শুরু করেন এই ধনকুবের। সে সময়ই তিনি কিনে নেন দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। এরপর শরীরের দিকেও নজর দেন বেজোস।
শারীরিকভাবে ফিটফাট হওয়ার পরই নিজের সুঠাম দেহ দেখানোর ইচ্ছে জাগে বেজোসের। মাসল দৃশ্যমান এমন ধারার ফিটিং পোশাক বেছে নেন। কিন্তু মাসল আর টাইট ফিটের পোশাক, এই দুটো জিনিস একে অপরের সঙ্গে ঠিক যেন যায় না। জেমস বন্ডে ড্যানিয়েল ক্রেইগও এই মাসল দেখানো টাইট পোশাকে হাজির হয়ে ফ্যাশন পণ্ডিতদের রোষে পড়েন। তবে পোশাকের কাটের কথা বাদ দিলে বেজোসের স্যুটে ব্যবহৃত কাপড়ের রুচি ভালো বলতে হবে।
সমস্যা হলো ব্যবসায়িক কাজে ভিন্নধর্মী পোশাকে হাজির হওয়ার চেষ্টা করেন জেফ বেজোস। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ফরমাল থাকাটাই যেন ভালো। ইনফরমাল হিসেবে সেই পুরোনো জিনসের সঙ্গে ব্লেজার কম্বিনেশনেও দেখা যাবে তাকে।
তবে বেজোসের সবচেয়ে বেশি গোলমাল বাঁধে ক্যাজুয়াল পোশাক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে। কয়েকবছর আগে সানভ্যালিতে বেজোসকে টাইট কালো পোলো শর্টের ওপর কালো ওয়েস্টকোট পরা অবস্থায় দেখা যায়। বাইসেপগুলো যেন একদম স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। পুরো অ্যাকশন হিরো গেট আপে হাজির হয়েছিলেন বেজোস।
নিউ ইয়ার ইভে বেজোসের পরা পোশাক নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক ট্রল হয়েছে। সাদা জিনসের সঙ্গে ঝলমলে টাইট শার্টে হাজির হন বেজোস। শার্টের প্যাটার্ন নাকি মরক্কোর হোটেলগুলোতে থাকা মেঝের টাইলসের মতো! তবে হার্ট শেপের সানগ্লাসও চোখে দিয়েছিলেন। রাতের পার্টিতে ফূর্তি করতেই যে এই 'ফ্যান্সি' জামা কাপড় পরেছেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
সে যাই হোক। জেফ বেজোস এখন সাম্প্রতিক বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যাওয়া এক বিলিয়ন ডলারের 'আঁতেল'। সে তার মতো পোশাক বেছে নিলে আমরা আর কী বলতে পারি? বেজোসের যেমনই পোশাক পরুক তাতে কার কী?এত সামান্য বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার দরকারই বা কী?
তবে, বিষয়টি হলো, বেজোস যে সে কোনো ধনী ব্যক্তি নন। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ঘিরে আমেরিকার প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপিত হয়। তার অধীনে ১৬ লাখ মানুষ কাজ করে। আর তাই হয়তো এতগুলো মানুষের জীবনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম একজন মানুষের ক্ষেত্রে হেঁয়ালিপূর্ণ পোশাক পরা সমাজের নৈতিক চিন্তাধারার সাথে যায় না।
আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখলে বেজোসের পোশাক নির্বাচনের সঙ্গে গভীর কোনো বিষয়ের সম্পৃক্ততাও নির্ঘাত মিলবে! কিন্তু তারপরও বেজোসের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ সম্পূর্ণই তার। এ নিয়ে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।