এনআরসিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও ৮০ বছরের নারীকে ‘বিদেশি’ বলে রায় দিলো ভারতের আদালত
৮০ বছর বয়সী ভাণ্ডারী দাস তার স্বামী এবং দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন ভারতে। তিনি গত পাঁচ দশক ধরে আসামের নিকটবর্তী একটি জেলায় বসবাস করছিলেন এবং ১৯৭০ সালে একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ভোটাধিকারও পেয়েছিলেন।
আসামে আসার পর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ১৯৬৭ সালেই তিনি 'রিলিফ এলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট' পান এবং ১৯৭০ সালে হয়েছিলেন ভারতীয় ভোটার; এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৫৪ বছর।
এমনকি, ২০১৯ সালে ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি, এনআরসি-তেও ভাণ্ডারী দাসের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে একটি মামলা দায়ের করেন তৎকালীন পুলিশ সুপার (সীমান্ত)। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই আদালত, ভাণ্ডারী দাস এবং তার সন্তানদের 'বিদেশি' বলে রায় দিয়েছে। যার অর্থ হলো, আগামী দশকের জন্য তিনি ভোটাধিকার হারাবেন।
আসাম চুক্তির ৫ নং ধারা অনুযায়ী, "বিদেশি স্ট্রিমলাইন" হিসেবে তাদেরকে গণ্য করা হয় যারা ১ জানুয়ারি, ১৯৬৬ থেকে ২৪ মার্চ, ১৯৭১ সালের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছিল। তাদেরকে এখন এফআরআরও-এর মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে এবং এই পন্থায় পুনরায় নাগরিগত্ব পেতে সময় লাগবে ১০ বছর। অর্থাৎ, এই এক দশক তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে।
তবে ভোটাধিকার হারানো নিয়ে চিন্তিত নন ভাণ্ডারী দাস। এনডিটিভি-কে তিনি বলেছেন, "আগামী দশ বছরে আমি এবং আমার পরিবার ভারতের স্থায়ী নাগরিক হয়ে যাব।"
তার এই স্বস্তির কারণ এটিই যে, তাকে 'অবৈধ বিদেশি' হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়নি। আপাতত ভোটাধিকার হারালেও পরবর্তীতে তিনি এবং তার সন্তানরা ভারতীয় নাগরিক হয়ে যাবেন।
১৯৬১ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সিলেটের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) রাজেন্দ্র দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় ভাণ্ডারী দাসের। এর ছয় বছর পর সীমান্ত পার হয়ে তারা পাড়ি জমিয়েছিলেন ভারতে।
এ প্রসঙ্গে ভান্ডারী দাস বলেন, "আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে আমাদের সেখানে (পূর্ব পাকিস্তান) নিপীড়ন সহ্য করতে হতো। আমাদের চারদিক থেকে আক্রমণ করা হয়েছিল। এছাড়া, আমাদের অনেক প্রতিবেশী ভারতে চলে গিয়েছিল। সেই সময়টা আমাদের জন্য হয়ে উঠেছিল খুবই কঠিন। তিন বছর আগে যখন আদালত থেকে নোটিশ এসেছিল, তখন আমি শুধু ভেবেছিলাম আমাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে; কিন্তু আমি এটি কখনই করতে চাইনি।"
সারাদিনের যাত্রা শেষে পরিবার নিয়ে মধ্যরাতে শিলিগুড়ির কাছে একটি শরণার্থী শিবিরে এসে পৌঁছেছিলেন ভাণ্ডারী দাস। পরবর্তী তিন বছর, স্বামীর সঙ্গে তিনি সেখানেই কাটিয়েছেন। এরপর শিলচর শহরের কাছে ভোলানাথপুর গ্রামে কাজ পেয়ে তারা সেখানে স্থানান্তরিত হয়। তার দুই সন্তানের জন্ম ওই গ্রামেই।
২০০৯ সালে ভাণ্ডারী দাসের স্বামী রাজেন্দের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তিনি তার ছেলে রাজকমল দাস এবং তার পরিবারের সঙ্গে থাকেন। রাজকমলের জন্ম ১৯৭১ সালে ভারতের ভোলানাথপুরে।
- সূত্র- দ্য সিয়াসাত ডেইলি