করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এবং শনাক্তের সংখ্যা কমেছে। তবে এই ভাইরাস বিশ্বব্যাপী পুরোপুরি নিমূর্ল না হওয়ায়, ডেল্টা ভেরিয়েন্টের মতো কোন ভেরিয়েন্ট আবার দেশে প্রবেশ করে কী না, সেটা পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, "সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে চলে আসছে বলে সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে গেছি সেটা বলা যাবে না। পৃথিবী থেকে ভাইরাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়"।
কারণ এর আগেও সংক্রমণ হার কমে এসেছিল। তখন কিছু অসতর্কতার কারণে সেটার সুফল আমরা নিতে পারিনি। সুতরাং, দ্রুত সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিস্থিতির উপর সতর্ক নজর রাখতে হবে।
মুশতাক হোসেন আরও বলেন, নতুন কোন ভেরিয়েন্টের উদ্ভব না হলে হয়তো বড় কোন সমস্যা হবেনা। তবে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এখন করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। কিন্ত সুরক্ষা গাইডলাইনগুলো পালনে অবহেলা করা যাবেনা।
বরং সীমান্ত খোলা যেহেতু এটা ধরে রাখতে হবে, যে কোন সময় ভেরিয়েন্টের আক্রমণ হতে পারে। এটা মাথায় রেখে যে সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে লোকসমাগম বন্ধ করতে হবে।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, টানা ১১ দিন দেশে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে বলে ধরা হয়।
সুতরাং 'এই অবস্থায় বাংলাদেশের কৌশল কী হতে পারে', এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রাক্তন বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, "উন্নত বিশ্বে ভ্যাকসিন দেয়ার হার বেশ ভালো। কিন্তু আমাদের জনগণকে সেভাবে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা যায়নি। বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় আমরাও শঙ্কামুক্ত তা বলা যাবেনা।
এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। আমরা কিন্তু এই ভেরিয়েন্টের দাপটে বেশ নাজুক হয়ে পড়েছিলাম। অথচ কৌশলী হলে এই ভেরিয়েন্টের প্রবেশ পথে বাঁধা দেয়া সম্ভব ছিল"।
সুতরাং, ডেল্টা ভেরিয়েন্টের মতো কোন ভেরিয়েন্টের উদ্ভব কোথাও হলে সেটা আটকে দেয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এটা কোনভাবে বলা যাবেনা দ্রুতই করোনা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। সবসময় বৈশ্বিক পরিস্থিতির উপর গভীর বিশ্লেষণ এবং ভ্যাকসিন কার্যক্রম দ্রুততর করার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এ ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ।
এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও গত মে মাসের শেষ দিক থেকে করোনার ডেল্টা ধরনের দাপটে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ে।
জুলাইয়ের দুই দিনে দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়। এরপর আগস্টে দেশে করোনার গণটিকাদান শুরু হয়। গত মাসের শেষ দিক থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে শুরু করে।
এই অবস্থায় বৈশ্বিক প্রেক্ষপটের সাথে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চাইতেও তুলনামূলক ভালোভাবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।